লর্ড হুইটফিল্ড বললেন–এইসব ঘটনা অদ্ভুত হলেও সত্যি। শিক্ষা-ব্যবস্থার সম্প্রসারণ না হলে এর হাত থেকে নিস্তার নেই। আপনাকে বলাই হয়নি, আমি এই গাঁয়ে চমৎকার একটা পাঠাগার তৈরি করেছি।
লিউক বললো–খুবই ভালো কাজ করেছেন। আপনি বুদ্ধিমান লোক; নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন যে, অতীতের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলি নিয়ে মগ্ন হয়ে থাকলে মানুষের মোহমুক্তির কোনো আশাই নেই।
এই প্রসঙ্গে লিউক বক্তৃতা দিয়েছিলো, তার কিয়দংশের হুবহু বর্ণনা দেওয়া হলো—
মৃত্যু হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন গল্পগুলোর প্রধান উৎপত্তিস্থল। কবর দেওয়ার রীতি-নীতি, আচার-বিচার নিয়ে যে কত রকমের কিংবদন্তী আছে! তাছাড়া দেখা গেছে যে, যে কোনো কারণেই তোক গ্রামের লোকেরা মৃত্যু নিয়েই সবচেয়ে বেশি গল্প গুজব করে।
ব্রিজেট বললো–এরা সব সময়ে মানুষের শেষকৃত্বের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পায়।
লিউক বলে–আমি তো ভেবেছি যে ওখান থেকেই আমি আরম্ভ করবো। অল্প কিছুদিনের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের সম্পর্কে যদি আপনাদের চার্চ থেকে একটা মোটামুটি হিসেব পাই, তাহলে যারা মারা গেছে তাদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে আরম্ভ করবো। আচ্ছা, কাকে দিয়ে আরম্ভ করা যায় বলুন তো? আপনাদের এখানকার পাদ্রীকে দিয়ে?
ব্রিজেট বলে মিঃ ওয়েক অবশ্য এসব ব্যাপারে খুবই উপযুক্ত লোক। উনি আপনাকে অনেক কিছুই বলতে পারেন।
লিউক কিছুক্ষণ চুপ করে বলল–এতো খুব ভালো কথা। আচ্ছা, গত এক বছরের মধ্যে কে বা কারা মারা গেল বলতে পারেন?
ব্রিজেট বললো–প্রথমে গেল কার্টার। ঐ নদীর পারে যে বাড়িতে ছোটো একটা মদের দোকান আছে, সেই বাড়ির মালিক। তারপর মিসেস রোজ, ধোপানী; তারপর গেল টমি পিয়ার্স। এরপর একটি মেয়ে–অ্যামি।
অ্যামি?–পাল্টা প্রশ্ন লিউকের।
অ্যামি গিবস্ এখানে পরিচারিকার কাজ করতো। ওর মৃত্যুতে একটা তদন্ত হয়েছিলো।
কেন?
মেয়েটা অন্ধকারে ওষুধের বদলে কি একটা বিষ খেয়েছিলো।-লর্ড হুইটফিল্ড বললো।
ব্রিজেট বললো–মাথার টুপি রং করবার একটা বোতল রং ছিলো ওর ঘরে। ভুলে রঙের বোতলকে ওষুধের বোতল মনে করে রং খেয়েছিলো।
লিউক বললো–বিশ্রী কাণ্ড তো!
মনে পড়লো লিউকের অ্যামি গিবস?–হ্যাঁ মিস পিঙ্কারটন এ নামও উল্লেখ করেছিলেন। এছাড়া টমি নামে একটি ছোটো ছেলের বিষয়েও বলেছিলেন। এখন পরিষ্কার ওর মনে পড়লো উনি কার্টারের নামও করেছিলেন। বেশ সচেতন গলায় ও বললো–
এইভাবে একই প্রসঙ্গে কথা বলতে নিজেকে বড় ভূতুড়ে মনে হচ্ছে। যেন আমি নিজেই একজন কবরের প্রার্থী। কিন্তু এই নিয়ে লোকজনের কাছ থেকে কথা বের করা বেশ শক্ত।
ব্রিজেট বললো–আমারও তাই মনে হয়।
লিউক বললো–অন্যের ক্ষতিসাধনের চিন্তা যারা করে, তাদের নিয়েও কিন্তু নানা উপকথা প্রচলিত আছে। এখানে ও ধরনের কোনো প্রচলিত গল্প-টল্প আছে নাকি?
লর্ড ও ব্রিজেট বললেন না।
ব্রিজেটের কথার সূত্র ধরে লিউক বললো–সেটা না থাকবারই কথা। আমি প্রথমে চার্চ থেকে আরম্ভ করবো। তারপর যাবো, সেই সেভেন স্টার না কি একটা নাম বললেন সেই মদের দোকানটার আড্ডায়। আচ্ছা, যে বিচ্ছু স্বভাবের ছেলেটি মারা গেল ওর কোনো আত্মীয়-স্বজন আছে?
মিসেস পিয়ার্সের একটা সিগারেটের দোকান আছে হাইস্ক্রীটে।
লিউক বললো–আচ্ছা, আমি তাহলে যাই।
যদি আপত্তি না থাকে, আমি সঙ্গে যাবো।–ব্রিজেট বললো।
নিশ্চয়ই।কিন্তু লিউকের মনে হলো যে, এই কৃত্রিমতা হয়তো বা ব্রিজেটের কাছে ধরা পড়েছে–তাহলে কিন্তু বড়ই লজ্জার ব্যাপার হবে।
যাকগে, একটু বেশি সতর্ক হয়ে কথা বললেই হবে।–নিজেকে সাবধান করে লিউক।
আমি তৈরি। চলো।–নিঃশব্দে ওর পেছনে ব্রিজেট কখন যেন দাঁড়িয়েছে–এতক্ষণ ওর উপস্থিতিটা ও টেরই পায়নি।
ব্রিজেট বললো–তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে দেবার জন্যই আমার আসা।
লিউক জবাব দেয়-আমার খুব উপকার করলে।
পেছন ফিরে ও সেই দুর্গ-আকারের বাড়িটা একবার দেখে নিয়ে বিরক্তির স্বরে বললো–কী একটা বীভৎস কাণ্ড। কেউ কি ওঁকে থামাতে পর্যন্ত পারেনি?
ব্রিজেট বললো–প্রতিটি ইংরেজ পুরুষই তার বাড়িটাকে দুর্গ ভাবে। ও বাড়িটাকে দারুণ ভালোবাসে।
উত্তর দেয় লিউক–ঠিকই বলেছো। আমার নাটুকে কথায় আমি লজ্জিত। আমায় ক্ষমা করো।
মিনিট পাঁচেক যাবার পর ওরা চার্চে এসে পৌঁছলো। চার্চের সংলগ্ন পাদ্রীর বাড়ি। অ্যা
লফ্রেড ওয়েক ছোটোখাটো একজন বয়স্ক লোক, মাথায় সুবিশাল টাক।
আলাপ করিয়ে দেয় ব্রিজেট–মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম, আমাদের সঙ্গে অ্যাশম্যানরে আছেন। উনি একটা বই লিখছেন, আর সেই ব্যাপারেই আপনার সঙ্গে একটু আলোচনা করতে এসেছেন।
মিঃ ওয়েক উত্থাপিত প্রসঙ্গে বিশেষ উৎসাহী নন। রোমের পুরাতত্ত্বে ওঁর আগ্রহ। ভদ্রলোক বিনীত স্বরে স্বীকার করলেন যে, ডাইনীতত্ত্বে বা গ্রাম্য ছড়া ইত্যাদি বিষয়ে ওঁর জ্ঞান খুবই সামান্য। তবে উইচউডের কিছু প্রামাণ্য ইতিহাস বললেন।
লিউক খুব হতাশ ভাব দেখিয়ে ও প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে মৃত্যুর প্রাক্-মুহূর্তে যে সব গালগল্প প্রচলিত তাই উত্থাপন করলো।
এই প্রসঙ্গেও মিঃ ওয়েক তার অজ্ঞতা প্রকাশ করে বললেন–মৃত্যুকালীন ভৌতিক অস্তিত্ব যদি বা কিছু থাকেও–সেই সম্পর্কিত গল্প-গাঁথা স্বাভাবিক কারণেই কেউ আমাকে বলবে না–এটা নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন?