সেখান থেকে জানতে পারলো যে, আরও আধমাইল গেলে অ্যাশম্যানব পাওয়া যাবে। গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ লিউকের চোখে পড়লো, এক দুর্গের ভেতর থেকে একটি তরুণী বেরিয়ে এলো। মেয়েটির মাথায় গুচ্ছ-গুচ্ছ কালো চুলের ঢেউ। মেয়েটিকে দেখে ডাইনী ছবিটা মনে পড়লো।
তন্বীতরুণী মেয়েটি সোজা ওর দিকে এগিয়ে ওকে বললো–আপনিই লিউক ফিৎস উইলিয়াম? আমি ব্রিজেট কনওয়ে।
ওর সঙ্গে লিউক করমর্দন করলো। লিউক মেয়েটিকে যে ডাইনী ভেবেছিলো মেয়েটি মোটেই তা নয়।
আপনার ওপর এভাবে চড়াও হবার জন্য খুবই লজ্জিত কিন্তু জিমি বললো যে, আপনি কিছু মনে করবেন না।
না, না, বরং আপনি এসেছেন বলে খুশীই হয়েছি। ব্রিজেট জবাব দিলো। আরও বললো–জিমির আর আমার কখনও মতের অমিল হয় না। তাছাড়া দেখবার মতো সুন্দর জায়গাও এখানে আছে।
অপূর্ব।
বাড়ির দিকে ওরা দুজনে এগোয়। ওর মনে পড়ে, জিমি বলেছিলো যে, বাড়িটা প্রথমে ব্রিজেটের পূর্বপুরুষদের ছিলো।
লিউক, আন্দাজ করলো ২৮/২৯ বয়স ব্রিজেটের হবে।
বাড়ির ভেতরে ওরা ঢুকলো। দুজন লোক ঘরে বসে কথা বলছিলো। ব্রিজেট আলাপ করিয়ে দিয়ে বললো–গর্ডন, ইনি আমার দূর-সম্পর্কের এক ভাই।
লর্ড হুইটফিল্ড দেখতে ছোটোখাটো, মাথায় চকচকে টাক। পোশাকে-আশাকে কিছুটা গ্রাম্য অগোছালো ভাব। যাই হোক, তিনি লিউককে আন্তরিকতার সঙ্গেই স্বাগত জানালেন। তারপর লর্ড হুইটফিল্ড তাঁর চেয়ারে বসে ছিপ ছিপ করে চায়ে চুমুক দিতে দিতে লিউককে যেন পরিমাপ করেছিলেন।
আপনি তাহলে বই লেখেন?
এই প্রশ্নে লিউক একটু ঘাবড়ে গেল।
বেশ আত্মতুষ্ট স্বরে বললেন লর্ড-আমি প্রায়ই ভাবি যে আমি নিজেই একখানা বই লিখবো।
আচ্ছা?–জবাব দেয় লিউক।
ঠাট্টা নয়, আমি এত বিচিত্র ধরনের লোকজন দেখেছি যে তাদের নিয়ে খুবই মনোজ্ঞ একটা বই লিখতে পারি।
সে তো ঠিকই, লিউকের জবাব।
ব্রিজেট বললো–তোমার সঙ্গে কার কথা? তুমি তো মহৎ লোক। নাও আর একটু চা খাও।
লর্ড লিউককে জিজ্ঞেস করলেন–তা, এই অঞ্চলের কারুর সঙ্গে আলাপ পরিচয় আছে?
লিউক বললো, না নেই–তবে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে শুধু একটু দেখা করবার আছে। ভদ্রলোক আমার এক বন্ধুর বন্ধু। নাম—আম্বলবি–ডাঃ আম্বলবি।
লর্ড হুইটফিল্ড বললো–ডাঃ আম্বলবির সঙ্গে দেখা করবেন? খুবই পরিতাপের বিষয়।
কেন? পরিতাপ করার মত কী বললাম?
এই তো, সপ্তাহখানেক হলো ভদ্রলোক মারা গেছেন।
লিউক বলে,–আহা, তা হলে তো সত্যিই দুঃখের ব্যাপার।
লিউক কিছুটা আন্দাজের সঙ্গে বলল–ডাঃ আম্বলবি একজন স্পষ্ট বক্তা ছিলেন তাই না? এবং তার ফলে নিশ্চয়ই ওঁর অনেক শত্রু ছিলো?
না, না, সে কথা ঠিক বলা যায় না। ব্রিজেট, কী বল? –লর্ড হুইটফিল্ড বললেন।
ব্রিজেট বলে–আমার তো ধারণা উনি বেশ জনপ্রিয় লোকই ছিলেন। আমার তো মনে হয় যে, ভদ্রলোক একজন অমায়িক লোক।
ব্রিজেটের কথা লর্ড স্বীকার করে বলেন–তা ঠিক, ভদ্রলোক নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় ছিলেন–তবে ওঁর মত আরও দুএকজন লোককে আমি জানি, তারাও ওঁরই মতো মোটাবুদ্ধি সম্পন্ন। প্রশ্ন করে লিউক–সেই দুএকজন কি এই গ্রামেই বাস করেন?
লর্ড বললেন–হ্যাঁ, এই গ্রামেই।
একটু ইতঃস্তত করে লিউক বললো–আচ্ছা, এখানে কী ধরনের লোক সবচেয়ে বেশি বাস করে?
ব্রিজেট বললো–বেশির ভাগই সেকেলে লোক–গীর্জার মত পাদ্রী আর তাঁদের যত স্ত্রী-পুত্র, ভাই-বোন, ডাক্তারদের বেলাতেও তাই।
উত্তর শুনে লিউক ঘাবড়ে যায়–কিছু পুরুষ মানুষও নিশ্চয়ই আছে?
তা আছে। তবে মাত্র কয়েকজন। মিঃ অ্যাবট–উকিল; ডাঃ আম্বলবি; মিঃ ওয়েকবেস্টর আর মিঃ এলওয়ার্দি-দারুণ ভালো লোক। এছাড়া আছেন মেজর হর্টন আর তার একপাল কুকুর।
লিউক বললো–আমার বন্ধুরা বলেছিলো যে, এখানে তাদের চেনা একজন মহিলা বাস করেন?
ব্রিজেট হেসে ওঠে–হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে পড়েছে, পিঙ্কারটন।
লর্ড বললো–সত্যিই আপনার কপালটা নিতান্তই খারাপ। সেই ভদ্রমহিলাও মারা গেছেন।
হাল্কা স্বরে লিউক বলে–আপনাদের এখানে দেখছি মৃত্যুর হার বড্ড বেশি।
লর্ড প্রতিবাদ করে ওঠেন–একথা মোটেই সত্য নয়। দুর্ঘটনা সব জায়গাতেই হতে পারে।
লিউক বলে,-ডাঃ আম্বলবিও কি দুর্ঘটনায় মারা যান?
লর্ড বলেন–না, ওঁর হাতে খুব বিষাক্ত ঘা হয়েছিল, কোনো পেরেকে বা ঐ জাতীয় কিছুতে হয়তো হাতে খোঁচা লেগেছিলো এবং ডাক্তারদের যা হয়ে থাকে–প্রথমে খেয়ালই করেননি, ফলে সেই সামান্য ছড়ে যাওয়া থেকে বিশ্রী রকমের ঘা হয়ে গেল আর তাতেই কদিনের মধ্যে ভদ্রলোক মারা গেলেন।
নিয়তির বিধান অলঘ্য।-লর্ড সহজ গলায় বলেন।
.
নিজের ঘরে গিয়ে রাতের পোষাক পরতে পরতে লিউক নিজের মনে বলতে লাগল–সত্যিই কি নিয়তির বিধান? বিষাক্ত ঘা? হয়তো তাই, কিন্তু মৃত্যুটা বড়ই আকস্মিক!–কানে ভাসছিলো ব্রিজেটের কথাগুলো–গত এক বছরে এখানে বেশ কিছু লোক মারা গেছে।
***
লিউকের প্রথম পদক্ষেপ লিউক নিজের পরিকল্পনা গুছিয়ে নিয়ে পরদিন সকালে একেবারে তৈরি হয়ে খাবার টেবিলে এলো।
টেবিলে লর্ড ও ব্রিজেটকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লিউক ডিম আর বেকনের একটা ডিস্ টেনে নিয়ে খাওয়ায় মন দিলো। খেতে খেতে ও বললো
বুঝলেন, আর সময় নষ্ট না করে এবার আমার যে জন্য এখানে আসা সে কাজে হাত দেওয়াই উচিত। মুশকিল হচ্ছে লোকজনকে দিয়ে কথা বলানো। সবাই তো আর আপনাদের মতো নয়? আপনারা যেটুকু জানেন সবই গুছিয়ে বলবেন। কিন্তু এই সমস্ত গ্রাম্য কুসংস্কার আপনারা কতটুকুই বা জানেন–অথচ আমার আবার সেগুলোই প্রয়োজন।