লিউক ব্যাটলকে জিজ্ঞেস করলো–এখন মহিলার অবস্থা কী?
একেবারে ভেঙ্গে খান্ খান্ হয়ে গেছে। এদের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়। নিজেদের যারা খুব চালাক মনে করে, তারা যে মুহূর্তে বুঝতে পারে যে ওদের চালাকি ধরা পড়ে গেছে, তখন আর দেখতে হয় না-একবারে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
লিউক বলে–পুলিশ হিসেবে আমি ব্যর্থ। হরিয়া ওয়েনফ্লিটকে আমি ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করিনি। আমার জায়গায় আপনি হলে এমনটা ঘটতো না।
ব্যাটল বলেন–সে কথা বলা যায় না; হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে; তবে আপনার বোধ হয় মনে আছে আমি বলেছিলাম যে, অপরাধ-বিজ্ঞানে অসম্ভব বলে কোনো শব্দের স্থান নেই। মনে পড়ে, আমি তখন অবিবাহিত মহিলার কথাও উল্লেখ করেছিলাম?
হ্যাঁ, মনে আছে। তাছাড়াও আপনি চার্চের পাদ্রী, স্কুলের ছোট্ট মেয়েদের কথাও বলেছিলেন।
হেসে ব্যাটল বলেন–ও কথা বলে আপনাকে একথাই বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, যে-কোনো শ্রেণীর লোকই অপরাধী হতে পারে।
একমাত্র গর্ডন ছাড়া। চলো লিউক, দেখি গর্ডন কোথায়।–ব্রিজেট বললো।
ওরা গিয়ে দেখে পড়বার ঘরে বসে লর্ড হুইটফিল্ড কতকগুলো নোট মেলাচ্ছেন।
ব্রিজেট আনত-স্বরে বলে–এখন তুমি তো সবই জেনে গেছে। এবার কি আমাদের ক্ষমা করতে পারবে?
ব্রিজেটের দিকে লর্ড হুইটফিল্ড তাকান–চোখের দৃষ্টিতে মমতা মাখানো।
সে কি কথা ব্রিজেট! নিশ্চয়ই পারবো। সত্যকে স্বীকার করার মতো সৎ সাহস আমার আছে। কাজের মধ্যে ডুবে থেকে আমি তোমাকে অবহেলা করেছি। আমার অবস্থা কিপলিং-এর সেই বিখ্যাত উক্তির সঙ্গে মিলে যায়। সেই লোকই দ্রুত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, যে একা পথ চলার সাহস রাখে।–আমার জীবনের পথও একলা চলো রের পথ। তারপর বললেন-আমার ওপর যে গুরুদায়িত্ব, তা আমাকে একাই বহন করতে হবে। আমার চলার পথে থাকবে না কোনো মধুভাষিণী সঙ্গী, আমার গুরুভার লাঘব করতে আসবে না কোনো প্রসারিত হাত। আমি নিরবিচ্ছিন্নভাবে শুধু চলবো, কেবল চলবো–একা, সঙ্গিবিহীন। এই অবিরত চলা শেষ হবে সেদিন–যেদিন চলতে চলতে পথভ্রান্তে পড়বো মুখ থুবড়ে।
গর্ডন! তোমার স্বভাবের কোনো তুলনা নেই–সত্যিকারের মাধুর্যমণ্ডিত তোমার স্বভাব।-বলে ব্রিজেট।
এটা মধুর-স্বভাবের প্রশ্ন নয়। এসব বাজে কথা বলে সময় নষ্ট কোরো না–আমি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ।
আমি জানি তুমি খুবই ব্যস্ত।
আমার কাগজের এই সংখ্যায় একটা প্রামাণ্য প্রবন্ধ ছাপতে দিচ্ছি–বিষয়বস্তু হলো– মহিলাদের অপরাধবৃত্তি-যুগে যুগে।
সপ্রশংস চোখে ব্রিজেট লর্ড হুইটফিল্ডের দিকে তাকিয়ে বলে–অপূর্ব! এর চেয়ে ভালো আর কোনো বিষয় হতে পারে না।
বুকটা টান করে লর্ড হুইটফিল্ড বলেন–ঠিক আছে, এবার তোমরা অনুগ্রহ করে নিজের কাজে যাও, আমার সময় নষ্ট কোরো না–আমার কাঁধে কাজের বোঝা।
নিঃশব্দে লিউক আর ব্রিজেট বেরিয়ে যায়।
ব্রিজেট বলে–ওর স্বভাবটা সত্যিই মিষ্টি।
ব্রিজেট, আমার ধারণা, তুমি ওই লোকটিকে সত্যিই ভালোবাসতে।
জানো লিউক, সত্যিই ওকে ভালোবাসি।
লিউকের দৃষ্টি জানলা পেরিয়ে বাইরে চলে যায়। ও বলে–আর উইচউডে যেতে ভালো লাগছে না। মিসেস আম্বলবির ভাষায় এ জায়গাটা শয়তানের আড়ৎ। সমস্ত গ্রামটাকে অ্যাশরিজ যেন একেবারে গিলে খাচ্ছে।
অশরিজের কথায় মনে হলো–তোমার সেই এলসওয়ার্দির কী হলো?
লজ্জা পেয়ে লিউক হেসে ওঠে–ওর হাতের সেই রক্তের কথা বলছো?
হা।
শুনলাম ওরা নাকি একটা সাদামুর্গী বলি দিয়েছিলো।
কী প্রচণ্ড বিরক্তিকর!
তবে কদিনের মধ্যেই ও একটা ঝামেলায় পড়বে–ব্যাটল ওর পেছনে লেগেছে।
বেচারা মেজর হর্টন! স্ত্রীকে মারবার কোনো পরিকল্পনাই ওঁর ছিলো না। একই কথা মিঃ অ্যাবটের ক্ষেত্রেও। সেই চিঠিটি হয়তো এক মহিলা কোনো মামলার নিষ্পত্তির জন্য লিখেছিলো; আর ডাঃ টমাস একেবারেই একজন সাদাসিধে মামুলি ডাক্তার।
ও একটা প্রথম শ্রেণীর গর্দভ।
রোজ আম্বলবিকে বিয়ে করবে বলে তুমি নেহাৎ গায়ের জ্বালায় ওকে গালাগাল দিচ্ছো!
রোজ একবার ওর পক্ষে বাঁদরের গলায় মুক্তোর হার।
হাত হতোস্মি! তুমি কি পাগল হলে?
মোটেই না।
ব্রিজেট কিছুক্ষণ চুপ করে থেকেজিজ্ঞেস করে–আচ্ছা লিউক, তুমি কি এখন আমাকে পছন্দ করো?
ওর দিকে লিউক এগোবার চেষ্টা করতেই ব্রিজেট ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে-না লিউক, আমাকে ভালোবাসো কিনা জিজ্ঞেস করিনি–পছন্দ করো কিনা তা-ই–জানতে চেয়েছি,
পছন্দ? এখন তোমায় বেশ পছন্দ করি; আর ভালোও বাসি।
আমিও তোমাকে পছন্দ করি লিউক…
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে ওরা দুজনেই হেসে ওঠে। এই হাসি সব পাওয়ার হাসি।যেমন শিশুরা সদ্য-পাতানো বন্ধুত্বের আনন্দে পরস্পরের গলা জড়িয়ে হেসে ওঠে।
ব্রিজেট বলে-ভালোবাসার থেকেও বড় জিনিষ হলো পছন্দ-এ স্থায়ী। আমাদের দুজনের এই সম্পর্ক যেন স্থায়ী হয় লিউক। তা না হলে আমরা যদি দুজনেই দুজনকে কেবলমাত্র ভালোবাসি, আর সেই ভালোবাসার তাগিদে বিয়ে করি এবং কিছুদিন বাদেই ছাড়াছাড়ি করে আবার আর একজনকে বিয়ে করি–এমনটা আমি চাই না লিউক।
ও ব্রিজেট! আমি জানি তুমি কী চাও। কঠিন বাস্তবতা। আমিও তাই চাই ব্রিজেট। আমাদের এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে কঠোর বাস্তবের ওপর ভিত্তি করে–এ সম্বন্ধ অটুট, কখনোই ভাঙ্গবার নয়।
সত্যি বলছ লিউক?