লিউক বলে–আপনার কথাই যেন সত্যি হয়; তবে আমি যদি কোনোভাবে সাহায্য করতে পারি–আমাকে বলবেন।
নিশ্চয়ই বলবো।
এক্ষুনি কি করণীয় কিছু ভেবেছেন?
ব্যাটল বলেন–এই মুহূর্তে কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। এই জায়গাটা আর তার পারিপার্শ্বিক সম্বন্ধে আমি কিছু কিছু খবর চাই। সন্ধ্যাবেলায় আপনার সঙ্গে আর একবার খানিকক্ষণ পরামর্শ করতে পারবে তো?
অনায়াসে।
তখন আপনাকে ভালো করে বলতে পারবো যে অবস্থাটা কী!
লিউক ঘড়ির দিকে তাকায়। দুপুরবেলার খাওয়ার আগে একবার ব্রিজেটের কাছে যাবে কিনা ভাবে। পরে ওর মনে হয় যে, যাওয়াটা উচিত হবে না; ও গেলে মিস ওয়েনফ্লিট ওকেও খেয়ে যেতে বলবেন, আর তাতে ভদ্রমহিলার খুবই অসুবিধে হবে। ও ওর নিজের কাকীমা, জেঠিমাদের দেখে এইটুকু বুঝেছে যে এই মধ্যবয়স্কা মহিলারা ঘর-সংসার তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে বড়ই খুঁতখুঁতে হয়ে থাকেন। আচ্ছা, মিস ওয়েনফ্লিটও কি কারো পিসি বা মাসি?-হতেও তো পারেন।
হোটেলের বাইরে লিউক বেরিয়ে আসে। কে যেন একজন কালো পোশাক পরা ওকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে।
মিস ফিৎস্ উইলিয়াম।
আরে, মিসেস আম্বলবি?–এগিয়ে এসে লিউক মিসেস আবির হাত দুখানা ধরে।
আমি ভেবেছিলাম, আপনি চলেই গেছেন।
না, থাকবার জায়গাটা শুধু বদল করেছি মাত্র–আমি এখন থেকে এই হোটেলেই আছি।
আর ব্রিজেট? শুনেছিলাম যে ও অ্যাশম্যানর থেকে চলে এসেছে।
হ্যাঁ, ও-ও বেরিয়ে এসেছে।
মিসেস আম্বলবি বলেন–আমি সত্যিই খুব নিশ্চিন্ত হলাম। উইচউড থেকে চলে গিয়ে ও সত্যিই ভালো করেছে।
না যায়নি, এখানেই আছে। ও মিস ওয়েনফ্লিটের কাছে রয়েছে।
লিউক দেখলে যে কথাটা শুনেই মিসেস আম্বলবির মুখে একটা আতঙ্কের ছাড়া পড়লো।
হনরিয়া ওয়েনফ্লিটের সঙ্গে আছে? কিন্তু কেন?
মিস ওয়েনফ্লিট ওকে দুচারদিন ওখানেই থাকতে বলেছেন।
মিসেস আম্বলবি বললেন–মিঃ লিউক আমার হয়তো একথা বলার অধিকার নেই–হয়তো কিছুই বলা উচিত নয়; আমি নিজেই দুঃখ-শোকে একেবারে জর্জরিত। আমি যা বলবো, শুনে হয়তো আপনার মনে হবে যে, আমি বাজে কথা বলছি; আপনার একথাও মনে হতে পারে, যে অসুস্থতার ফলে আমি যা-তা বলছি।
লিউক বলে–আপনি কী বলতে চাইছেন?
দুষ্কার্য সম্পর্কে আমার একটা বিশ্বাসের কথা।
লিউক অপেক্ষা করে থাকে উনি কী বলেন শোনার জন্য।
কী প্রচণ্ড এক শয়তানি! উইচউডের আকাশে-বাতাসে সব সময়ে এক শয়তানের খেলা চলেছে; আর ওই মহিলাই হচ্ছে এই সব শয়তানির মূল কারণ এ সম্পর্কে আমার আর কোনো সন্দেহই নেই।
লিউক যেন এক ধাঁধায় পড়ে যায়–আপনি কোনো মহিলার কথা বলছেন?
মিসেস আম্বলবি বলেন–হনরিয়া ওয়েনফ্লিট একটা আস্ত শয়তান! ল্যাভিনিয়া পিঙ্কারটনকেও কেউ বিশ্বাস করেনি; কিন্তু আমরা দু জনেই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলাম। ও আমার চেয়ে বেশি জানতো…একটা কথা মনে রাখবেন মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম, কোনো মহিলা যদি জীবনে অসুখী হয়, সে যে-কোনো ধরনের দুষ্কার্য করতে পারে।
লিউক বলে–তা হয়তো পারে।
লিউক ভদ্রমহিলার যাওয়ার পথে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ওর মাথায় কেবলই ঘুরছে যে মিসেস আম্বলবি হনরিয়াকে শয়তান বললেন কেন। আরও একটা কথা কী যেন বললেন ভদ্রমহিলা?–পিঙ্কারটনকেও কেউ বিশ্বাস করেনি। তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে পিঙ্কারটন ওঁর সন্দেহের বিষয়ে মিসেস আম্বলবিকে সব খুলে বলেছিলেন।
লিউকের চোখের সামনে ফুটে উঠলো ট্রেনের কামরায় একটি উদ্বিগ্ন মুখ, যেন আকুল কণ্ঠে বলছে–সেই একজনের কী নির্মম চোখের দৃষ্টি।ভদ্রমহিলার মুখ-চোখ যেন সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছিলো এই কথা বলার সময়ে। যে কী অভিব্যক্তি চোখ-মুখের। লিউক মুহূর্তের জন্য দেখেছিলো, ভদ্রমহিলার সেই শান্ত মুখখানার মধ্যে নিমেষেই কী বিরাট পরিবর্তন! চোখের দৃষ্টি তার হয়ে উঠলো মরা মাছের মতো স্থির আর নিশ্চল।
কিন্তু ঠিক এই রকম একটা মুখভঙ্গী, আর সেই একই চোখের দৃষ্টি আমি দেখেছি–দুএকদিনের মধ্যেও দেখেছি–কোথায়…? কখন? আজ সকালেই কি? ঠিকই তো! মিস ওয়েনফ্লিট! উনি যখন নিজের বাড়ির বসবার ঘরে ব্রিজেটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সেই সময়ে!
ল্যাভিনিয়া পিঙ্কারটনও বিশেষ কোনো লোকের–না, না, কোনো ব্যক্তি বিশেষের চোখের দৃষ্টির কথা বলেছিলেন। হয়তো ওঁর ক্ষেত্রেও একই জিনিষ ঘটেছিলো; উনি যেমনটা দেখেছিলেন, তেমনটা নিজের অভিব্যক্তির মধ্যেও ফুটে উঠেছিলো।
লিউক হাঁটা ধরলো মিস ওয়েনফ্লিটের বাড়ির দিকে। লিউকের মন বলতে লাগলো–মিস পিঙ্কারটন কক্ষনো কোনো পুরুষমানুষের কথা বলেননি–তুমি নিজেই ধরে নিয়েছিল লিউক, সে পুরুষ–কিন্তু উনি তা বলেননি–হ্যায় ভগবান, আমি কি পাগল হয়ে গেলাম? আমি যা ভাবছি তা কখনোই হতে পারে না…এ কিছুতেই সম্ভব নয়। আমার ভাবনার মধ্যে কোনো মাথামুণ্ডুই নেই কিন্তু সে যাই হোক, আমাকে এক্ষুনি ব্রিজেটের কাছে যেতে হবে, নিজের চোখে দেখতে হবে ও নিরাপদে আছে কিনা। সেই দুটো হালকা বাদামী রঙের চোখ আর চোখের সেই বিচিত্র ভয়াল দৃষ্টি! নাঃ, আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছি। আসলে হুইটফিল্ড অপরাধীও ছাড়া আর কেউ নয়। ও নিজেও একরকম স্বীকারই করেছিলো।
কিন্তু তা সত্ত্বেও লিউক মিস ওয়েনফ্লিটের বাড়ির দিকেই চললো।
ছোটোখাটো সেই ঝি-মেয়েটি লিউককে হতচকিত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে ভয়ে ভয়ে বললো–মিস ওয়েনফ্লিট আমাকে বলতে বলেছেন যে, উনি বাইরে চলে গেছেন। আমি এক্ষুনি দেখে আসছি উনি সত্যি সত্যি চলে গেছেন কিনা।