এই সেদিন লিউক ফিৎস্ উইলিয়ামের সামনেই রিভার্স কী কাণ্ডটাই না করলো গর্ডনের সঙ্গে! আর কৌতুকের ব্যাপার হলো; আমিই সঙ্গে করে লিউককে নিয়ে ও জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলাম! তখন পর্যন্ত ভেবে পাচ্ছিলাম না যে, গর্ডনের ওপর কী করে লিউকের সন্দেহ জাগিয়ে তুলি। এবার সুযোগ পেয়ে গেলাম; রিভার্স মরলেই লিউক বাধ্য হবে গর্ডনকে সন্দেহ করতে।
আর এবার? এবারই হলো আসল মার–এই মারেই গোটা নাটকের নিখুঁত পরিসমাপ্তি। –ব্রিজেটের কাছে এবার উঠে সরে এসে বলেন–আমাকে তাচ্ছিল্য করলো গর্ডন। আমার জায়গায় ও তোমাকে বিয়ে করতে চাইলো। সারাটা জীবন ধরে কেবলই হতাশা-কিছুই পেলাম না কিছু না।
অয়ি, ধূসর-বরণ কৃশাঙ্গী ভালোবাসা যার নেই বরাতে।
মিস ওয়েনফ্লিট ব্রিজেটের গায়ের ওপর ঝুঁকে পড়েন; মুখে মৃদু হাসি, চোখে উন্মাদনা…ছুরির ফলাটা ঝকঝক করছে।
ব্রিজেট সর্বশক্তি দিয়ে বাঘিনীর মতো এক লাফে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মিস ওয়েনফ্লিটকে ফেলে দিয়ে ওঁর কব্জি সজোরে চেপে ধরে।
ওয়েনফ্লিট আচম্বিত আক্রমণে হতচকিত হয়ে মাটিতে পড়ে যান; কিন্তু নিজেকে পরমুহূর্তেই সামলে নিয়ে প্রতি আক্রমণ করেন। গায়ের জোরে এই দুজনের মধ্যে কোনো তুলনাই করা চলে না।
সময় যতই যায়, ওয়েনফ্লিটের জোরও যেন ততই বাড়তে থাকে। চিৎকার করে ওঠে ব্রিজেট।
লিউক..বাচাও…বাঁচাও।
কিন্তু ওকে বাঁচাতে কেউ আসে না। মরিয়া হয়ে ওয়েনফ্লিটের কব্জিতে প্রচণ্ড জোরে চাপ দিতেই হাত থেকে ছুরিটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলো। আর সঙ্গে সঙ্গেই সেই পাগলিনীর দুটো হাত ওর গলায় বেড়ির মতো চেপে বসে ওর প্রাণশক্তিকে চাপ দিয়ে বের করে দিতে চাইলো। শেষবারের মতো এক আর্ত-চিৎকার বেরিয়ে এলো ব্রিজেটের গলা থেকে…।
***
মিসেস আম্বলবির জবানবন্দী
সুপারিনটেন্টে ব্যাটল-এর চেহারা দেখে ভালই লাগলো লিউকের। লিউক বেশ সতর্কতার সঙ্গে ভদ্রলোককে যাচাই করে। ও জানে যে, এদের ওপর আস্থা রাখলে সুফল পাওয়া যায়।
তদন্তে আসার ব্যাপারটাকে কি একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে গেল না?
মৃদু হেসে ব্যাট বললেন–কিন্তু মিঃ ফিস্ উইলিয়া, ঘটনাটা তো মারাত্মক আকারও নিতে পারে? বিশেষ করে লর্ড হুইটফিল্ডের মতো লোক যেখানে জড়িত, কোনো রকম ভুলভ্রান্তি হয়ে গেলে তার ফলাফল বিপজ্জনক হতে পারে।
ঠিক বলেছেন। আপনি কি একা এসেছেন?
না না,আমার সঙ্গে একজন গোয়েন্দা অফিসার আছেন। উনি আপাততঃ সেভেন-স্টার-এ অপেক্ষা করছেন; ওর প্রধান কাজ হলো লর্ড হুইটফিল্ডের ওপর নজর রাখা।
ও, আচ্ছা।
মিঃ ব্যাটল জিজ্ঞেস করেন–মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম, বলুন তো আপনি কি পুরোপুরি নিঃসন্দেহে?–অর্থাৎ, আপনি যাকে নিয়ে আশঙ্কা করছেন, সেখানে কোনো ভুলভ্রান্তির অবকাশ নেই তো?
ঘটনা যা সংগ্রহ করতে পেরেছি, তাতে মনে হয় না, যে আমার সন্দেহ অমূলক। আপনাকে কি ঘটনাগুলো বলবো?
না, তার দরকার হবে না, আমি স্যার উইলিয়ামের কাছে সবই শুনেছি।
তাহলে বলুন আপনার কী মনে হয়? লর্ড হুইটফিল্ডের মতো লোক যেন এমন সব কাণ্ড করতে পারেন, সেটা নিশ্চয়ই আপনার কাছে অভাবিত মনে হচ্ছে?
মিঃ ব্যাটল বললেন–খুব কম জিনিষই আমার আছে অভাবিত বলে মনে হয়। আমার মতে অপরাধ-বিজ্ঞানের অসম্ভব বলে কোনো কথা নেই। আপনি যদি একজন বৃদ্ধা মহিলা অথবা স্কুলের একটা ছোট্ট মেয়েকে অপরাধী বলে সন্দেহ করেন, তাহলেও আপত্তি করব না–আমি বরঞ্চ যাচাই করে দেখবো।
আপনি যখন স্যার উইলিয়ামের কাছে আগের সব ঘটনাই শুনেছেন, তখন তার আর পুনরাবৃত্তি না করে বরঞ্চ আজ সকালে যা যা ঘটেছে, তার একটা মোটামুটি বর্ণনা দিচ্ছি।
আজ সকাল বেলায় লর্ড হুইটফিল্ডের বাড়িতে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিলো, লিউক তার আনুপূর্বিক বর্ণনা দেয়।
গভীর মনোযোগ দিয়ে ব্যাটল সব শুনে বললেন–আপনি বলছেন যে, ও ছুরির ধার পরীক্ষা করছিলো? ছুরিটা নিয়ে কি কারো দিকে কোনো রকম ইঙ্গিত করেছিলো বা কাউকে ভয় দেখাতে চাচ্ছিলো?
খোলাখুলি ভাবে তেমন কিছু করেনি; তবে কেমন যেন একটা কুৎসিত ভাবে ধারটা পরীক্ষা করছিলো–চোখে-মুখে কেমন যেন একটা বিজাতীয় আনন্দের ভাব ছিলো। মিস ওয়েনফ্লিটও হয়তো সেটা লক্ষ্য করেছেন।
ও, আপনি সেই ভদ্রমহিলার কথা বলছেন যিনি একেবারে ছোটবেলা থেকে লর্ড হুইটফিল্ডের পরিচিতা-যাঁর সঙ্গে ওর বিয়ে হবার কথা ছিলো?
ঠিকই ধরেছেন।
ব্যাটল বললেন–আপনি মিস কনওয়ের নিরাপত্তা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারেন মিঃ ফিটস উইলিয়াম। আমি এক্ষুনি কাউকে ডেকে ওঁর ওপর নজর রাখতে বলে দিচ্ছি। ওঁর সঙ্গে যদি লর্ড হুইটফিল্ড-এর গতিবিধির ওপরও জ্যাকসন সতর্ক দৃষ্টি রাখে, তাহলে আর কোনো বিপদ ঘটবে বলে মনে হয় না।
এতক্ষণে সত্যিই আমি নিশ্চিত হলাম।
ব্যাটল বললেন–মিস কনওয়েকে নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তার কারণ আমি বুঝতে পারছি মিঃ ফিস্ উইলিয়াম্। একটা কথা বলছি আপনাকে,–এই কেসটা খুব একটা সহজ বলে আমার মনে হয় না। লর্ড হুইটফিল্ডকে মনে হচ্ছে অত্যন্ত ধূর্ত লোক। আমার মনে হচ্ছে, ও যতক্ষণ পারবে ততক্ষণ আগাগোড়া মিথ্যে কথা বলবে–একেবারে শেষ পর্যন্ত।
শেষ পর্যন্ত বলছেন কেন?
এক শ্রেণীর অপরাধী আছে, যারা নিজেকে প্রচণ্ড বুদ্ধিমান ভাবে; তারা কিছুতেই ধরা পড়বে না–এমন একটা চেতনা ওদের গর্বিত করে তোলে। লর্ড হুইটফিল্ডও মনে হচ্ছে সেই শ্রেণীর অপরাধী। তবে, শেষ পর্যন্ত ওকেও আমরা ধরে ফেলবো।