তাতে ও কী বললো?–জানতে চায় ব্রিজেট।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–ওর প্রতিক্রিয়া দেখে খুব আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। আমি যা বলতে চেয়েছিলাম, ও তার কাছেই গেলো না-বরঞ্চ মনে হলো ও যেন বেশ খুশী। বললো–ও তোমার চোখেও তাহলে পড়েছে?–আরো সঠিক করে বলা যায় যে, ও আত্মচর্চায় পরিপূর্ণ বিভোর।
লিউক বলে–একেবারে আস্ত পাগল।
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–সম্পূর্ণ সত্যি বলছেন। এছাড়া ওর সম্পর্কে আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। ওর নিজের কাজের জন্য ও দায়ী নয়।
কথা বলতে বলতে লিউকের কাঁধে একখানা হাত রেখে মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–মিঃ ফিস্ উইলিয়াম্ ওরা কি ওকে ফাঁসী দেবে?
না না, হয়তো ব্রডমুরে পাঠাবে।
মিস ওয়েনফ্লিট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন–তবু ততো বেঁচে থাকবেন। আমি তাতেই খুশী।
লিউক বললো–কিন্তু তেমন জায়গায় পৌঁছতে আমাদের অনেক দেরি, যদিও আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে ব্যাপারটা এনেছি এবং তা থেকে এটুকু বলতে পারি যে, ওরা ওদের সাধ্যমত চেষ্টা করবে। কিন্তু একথা ভুললে চলবে না যে আমাদের হাতে সাক্ষী-প্রমাণ অতি সামান্যই আছে।
ব্রিজেট বললো–প্রমাণ আমরা যোগাড় করে ফেলবো।
ব্রিজেটের দিকে মিস ওয়েনফ্লিট চকিতে তাকান এবং ওঁর তাকানোর ভঙ্গী দেখে লিউকের মনে হলো যে, এমনই একটা ভঙ্গী এর আগেও ও যেন কোথায় দেখেছে। প্রাণপণে মনে করার চেষ্টা করেও কিছুতেই মনে এলো না।
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন-তোমার খুব আত্মবিশ্বাস ব্রিজেট! সেইজন্যেই হয়তো যোগাড় করে ফেলতে পারবে।
লিউক বলে–ব্রিজেট, আমি গাড়িটা নিয়ে যাচ্ছি, ম্যানর থেকে তোমার জিনিষপত্রগুলো নিয়ে আসি।
ব্রিজেট বলে–আমিও যাবো।
আমাকে কি একটি শিশু পেয়েছো যে মার মতো আচরণ করছো আমার সঙ্গে? তোমার নিরাপত্তাধীনে আমি কিছুতেই থাকবো না।–কথাগুলো লিউক রেগে বললো।
মিস ওয়েনফ্লিট বলে—ব্রিজেট, আমার মনে হয়, দিনের বেলা গাড়িতে ভয়ের কোন কারণ নেই।
ব্রিজেট বলে–আমি কি বোকা দেখুন! এইসব কাণ্ডকারখানা আমার মাথাটাকেও ঘুলিয়ে দিয়েছে।
সেদিন রাতে মিস ওয়েনফ্লিটও পাহারা দিয়ে আমাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। এখন অস্বীকার করে লাভ নেই–বলুন, দেননি আপনি?
লিউকের কথা স্বীকার করে মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–আপনি যে ওকে তখন একেবারেই সন্দেহ করেননি মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম। গর্ডন যদি টের পেতো যে আপনার এখানে আসার মূল কারণ খুনের তদন্ত করা, তাহলে আপনার ওপর বিপদ নেমে আসতে পারতো। সেই জন্যই সেই নিরিবিলি সরু রাস্তায় আপনাকে একা যেতে দিতে ভরসা পাইনি-পাছে কিছু বিপদ ঘটে এই ভয়ে। মনে রাখবেন যে, ও অত্যন্ত ধূর্ত। যতটা আপনি ভাবতে পারেন তার চেয়েও অনেক বেশি চালাক–একজন সত্যিকারের বুদ্ধিমান।
আপনার সত বাণী মনে রাখবো।
লিউক বলে–ঠিক করে বলুন তো মিস ওয়েনফ্লিট, আমার কি সত্যিই কোনো বিপদ হতে পারে।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–আমার মনে হয়, আসল বিপদ হলো ব্রিজেটের। ব্রিজেটের প্রত্যাখ্যান ওকে চরম অপমান করেছে। আমি নিঃসন্দেহ যে ব্রিজেটের ওপরই প্রথমে আক্রমণ হবে।
খানিকটা বিচলিত হয়ে লিউক বলে–আমার কথা শোন ব্রিজেট, তুমি এক্ষুনি–এই মুহূর্তে বিদেশে কোথাও চলে যাও।
ব্রিজেট বলে–আমি কোথাও যাচ্ছি না। লিউক আর আমি দুজনেই এই ঘটনার মধ্যে জড়িত।
লিউক বললো–সিংহের গুহা থেকে নিরাপদে ফিরে বেল-মোটলি থেকে তোমায় আমি ফোন করবো।
তাই কোরো।
শোন লক্ষ্মীটি, তুমি একদম দুশ্চিন্তা কোরো না। খুব পাকা খুনীরাও তাদের পরিকল্পনাতে কাজে লাগাতে কিছুটা সময় নেয়। আমার স্থির বিশ্বাস, আগামী দু-একদিন আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ। সুপারিনটেন্টে ব্যাটল আজই লণ্ডন থেকে এসে যাচ্ছেন, তখন থেকেই হুইটফিল্ডের ওপর নজর রাখা হবে।
অর্থাৎ, সব কিছু সুসংবদ্ধ অবস্থায় আছে। অতএব, আমাদের আর কোনো রকম অতি নাটুকেপনা করার দরকার নেই।
লিউক ব্রিজেটের কাঁধে একখানা হাত রেখে বললেন–ব্রিজেট, লক্ষ্মীসোনা। তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো যদি তুম হুট-হাট করে কিছু না করো।
বসবার ঘরে প্রবেশ করতেই ব্রিজেট দেখতে পেলো, মিস ওয়েনফ্লিট ঘরের টুকিটাকি জিনিষপত্র নিয়ে খুটখাট করছেন আর আপন মনে কথা বলছেন।
দেখো তো কাণ্ড! এখনো পর্যন্ত তোমার ঘরটা গুছিয়ে দেওয়া হলো না। বেশ তাজা এক কাপ চা করে দেবো। যা একটা ঝড়ঝাপ্টা তোমার ওপর দিয়ে গেল!
কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দেবো আমার জানা নেই মিস ওয়েনফ্লিট! কিন্তু এখন সতিই আমার চায়ের কোনো দরকার নেই।
খেয়ে দেখো, একবার খাঁটি লপচুঙ–সউচ চা।
ঠিক তখনই এমিলি এসে দরজায় দাঁড়ালো,-মেমসাহেব, আপনি আমাকে কি কুঁচি দেওয়া বালিশের ঢাকনাটা পরাতে বললেন?
ছুটে বাইরে বেরিয়ে গেলেন মিস ওয়েনফ্লিট। এই সুযোগে ব্রিজেট উঠে জানালা দিয়ে হাত গলিয়ে পুরো চা টা ফেলে দিলো।
অতিথিকে ঠিকমতো পরিচর্যা করা হলো না মনে করে মিস ওয়েনফ্লিট যেন খানিকটা হতাশ হলেন।
ব্রিজেট তাড়াতাড়ি করে বললো–কে জানে লিউক কতক্ষণে আসবে।
ওঁকে নিয়ে ভেবো না। মিঃ ফিস্ উইলয়াম নিজেকে রক্ষা করবার ক্ষমতা রাখেন।
সে আমি জানি। লিউক যথেষ্ট শক্ত লোক।
এই সময়ে টেলিফোনটা বেজে উঠতেই ছুটে গিয়ে ব্রিজেট ধরতেই অন্য প্রান্ত থেকে লিউকের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে-হ্যালো, ব্রিজেট তুমি? আমি বেস-মোটলি থেকে কথা বলছি, তোমার বেরোবার পরিকল্পনাটা দুপুর পর্যন্ত মুলতুবী রাখতে পারবে? কারণ, ব্যাটল এইমাত্র এসে পৌঁছলো-বুঝতে পারছো তো, কার কথা বলছি?