বিষপ্রয়োগ করে খুন করার প্রসঙ্গে ওয়েলসের সেই অ্যাবারক্রোম্বি মামলার কথা তুলে বললেন যে, উনি সেই খুনীর চোখের জিঘাংসাময় বিশেষ দৃষ্টির কথা তখন বিশ্বাস করেন নি, কিন্তু এখন করেন, কারণ অনুরূপ দৃষ্টি উনি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন।
তোমার কি মনে আছে যে, কথাগুলি উনি ঠিক কী বলেছিলেন?
লিউক বললো–উনি একেবারে নিখুঁত মহিলাসুলভ স্বরে বলেছিলেন–আমি যখন প্রথম এ খবর পড়ি, তখন আদৌ বিশ্বাস করিনি, কিন্তু ঘটনাটা সত্যি।আমি তখন প্রশ্ন করেছিলাম–কী সত্যি?–উত্তরে উনি বলেছিলেন, একজনের চোখের বিশেষ দৃষ্টি।–ব্রিজেট বিশ্বাস করো, যেভাবে উনি কথাগুলো বলেছিলেন তাতে আমার হৃৎকম্প আরম্ভ হয়েছিলো।
লিউক, সবকিছু আমাকে বিশদ করে বলো। থেমো না।
তারপর যারা খুন হয়েছে তাদের এক করে বর্ণনা দিলেন; অ্যামি গিব, কার্টার, টমি পিয়ার্স–টমি নাকি ছিলো এক দুরন্ত ডানপিটে শয়তান আর কার্টার ছিলো মাতাল। এরপর বলেছিলেন–কিন্তু এবার, এইতো মাত্র গতকাল–ডাঃ আম্বলবির দিকে–ভদ্রলোক অতি সজ্জন আর সত্যিকারের ভদ্রলোক।–আরো বলেন যে, উনি যদি আম্বলবির সঙ্গে দেখা করে তাকে সাবধানও করে দিতেন, তাহলেও কোনো লাভ হতো না কারণ, আম্বলবি ওঁর কথা আদৌ বিশ্বাস করতেন না, উপরন্তু হাসাহাসি করতেন।
ব্রিজেট বলে-বুঝেছি, বুঝতে পারছি।
লিউক চমকে ওঠে–কী হয়েছে ব্রিজেট? তুমি কী এতে ভাবছো?
মিসেস আম্বলবি একদিন আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, সে কথাটা মনে পড়ে গেল। যাকগে, তুমি কী বলছিলে বলো।
আমি বলেছিলাম যে, এতগুলো খুন করে পার পাওয়া খুব কঠিন। উত্তরে উনি বলেছিলেন—মোটেই নয়—ওখানেই ভুল করেছেন। যদি সবার সন্দেহের বাইরে থাকা যায়, তবে খুন করা খুবই সহজ। যে খুনীর কথা বললাম, সে এমনই একজন যে, তাকে কেউ সন্দেহই করবে না।
থেমে যায় লিউক। ব্রিজেটের সারা শরীর কেঁপে ওঠে।–খুন করা সহজ? সত্যিকথা অতি সহজ! এখন বুঝতে পারছি কথাগুলো কেন তোমার মনে গেঁথে আছে। আমি শুনলে আমারও থাকত সারা জীবন ধরে। গর্ডন হুইটফিল্ডের মতো একজনের পক্ষে-হ্যাঁ, খুব সহজ কাজই বটে।
কিন্তু ওর কাঁধে এই খুনের দায় চাপানো অত্যন্ত কঠিন।
তোমার তাই মনে হয়? আমি এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করতে পারি।
কিন্তু ব্রিজেট, আমি বারণ করছি।
তুমি তা করতে পারো না। সব শোনার পর কেউ চুপচাপ ঘরের কোণে বসে থাকতে পারে না, আমিও এর মধ্যে থাকছি। শোনো লিউক, আমি স্বীকার করেছি যে, বিপদের মধ্যে পা বাড়াচ্ছি, কিন্তু উপায় নেই; আমার যতটুকু করণীয় সেটুকু আমাকে করতেই হবে।
ব্রিজেট!
না লিউক, এ নিয়ে আর কথা নয় এর মধ্যে আমি থাকবোই। মিস ওয়েনফ্লিটের নিমন্ত্রণ নিলাম, আপাততঃ ওখানেই থাকবো।
কিন্তু ব্রিজেট, দোহাই তোমার!
বিপদ আমার একার নয়, আমাদের দুজনেরই–সে কথা আমি জানি। লিউক, আমরা দুজনেই একই পথের পথিক।
***
দস্তানা চাপিয়ে হাতে কেন যাও বন পথে
ওরা গাড়ির মধ্যে সারাক্ষণ যে আতঙ্কময় পরিবেশে কাটিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মিস ওয়েনফ্লিটের বাড়িটাকে মনে হচ্ছিল যেন এক প্রশান্তির আবাস।
লিউক বললো–আপনি যে অনুগ্রহ করে এখানে ওকে রাখছেন, এই ব্যবস্থাই–আমার সবচেয়ে ভালো মনে হচ্ছে মিস ওয়েনফ্লিট। আমি কিন্তু বেল-মোটলিতেই থাকবো, আর ওখান থেকে ব্রিজেটের দিকে নজর রাখবারও সুবিধে হবে–ও শহরে গেলে এ সুযোগ পেতাম না। তাছাড়া শহরে গিয়ে একজনের কী অবস্থা হয়েছিলো জানেনই তো।
মিস ওয়েনফ্লিট জিজ্ঞেস করলেন–আপনি পিঙ্কারটনের কথা বলছেন?
হা। যদিও একথা বলতে পারেন যে, শহরে জন-অরণ্যের মধ্যে নিরাপত্তা অনেক বেশি।
তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে মানুষ পরস্পরকে হত্যা করতে চায় না–এই শুভবুদ্ধিই
নিশ্চয়ই। সভ্যতার সুফলের ওপর নির্ভর তো করতেই হবে।
গম্ভীর ভাবে মাথা দোলান মিস ওয়েনফ্লিট।
জিজ্ঞেস করে ব্রিজেট–মিস ওয়েনফ্লিট আপনি কতদিন হলো টের পেয়েছেন যে, গর্ডন হত্যাকারী?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া একটু কঠিন। যাই হোক, বলা যেতে পারে, আমার অন্তরের অন্তঃস্থল বেশ কিছুকাল আগে থেকে জানতো; কিন্তু আমি সেকথা মানতে চাইনি কারণ, আমি বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি; তাই নিজেকে একথা বোঝাতাম যে, একজন লোকের সম্পর্কে এ ধরনের চিন্তা করা অন্যায় এবং পাপ।
সরাসরি লিউক প্রশ্ন করে–আচ্ছা, আপনার নিজের জন্য ভয় ছিলো না?
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–অর্থাৎ, আপনি জানতে চাইছেন যে, গর্ডন যদি টের পেতে যে, আমি সব জানি, তাহলে সে আমাকে সরিয়ে ফেলতো কিনা?
হা।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–তেমন একটা সম্ভাবনা সম্পর্কে আমি সর্বদা সচেতন ছিলাম এবং সেজন্য সতর্কও থাকতাম। মনে হয় না যে, আমার দিক থেকে গর্ডন কখনো বিপদের আশঙ্কা করেছে।
একথা মনে হবার কারণ?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–কারণ, গর্ডন বোধহয় একথা বিশ্বাস করে যে আমি কখনো এমন কিছু করতে পারি না যাতে ওর কোনোরকম বিপদ হতে পারে।
লিউক প্রশ্ন করে–অত্যন্ত দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে আপনি তো ওকে সাবধান পর্যন্ত করেছিলেন–করেননি?
হ্যাঁ, আকার-ইঙ্গিতে আমি ওকে একথা বলতে চেয়েছিলাম যে, ও যাদের ওপর কোনো কারণে অসন্তুষ্ট, বেছে বেছে তারাই একের পর এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে–এ ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত।