হেসে জিমি বলে–তা কেউ করবে না।
তবে? ভেবে দেখ, যাকেই তিনি বলবেন, সেই বলবে ওঁর মাথা খারাপ। কিন্তু আমি বলছি জিমি, এ ব্যাপারটাকে এভাবে দেখলে ভুল হবে। সত্যকে হাত চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা অন্যায়।
জিমি বললো–তাহলে ব্যাপারটা তোমার মতে কী দাঁড়াচ্ছে?
ডাঃ আম্বলবির মৃত্যুর গল্পটা একেবারে আজব নয়। আরও ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, মিস পিঙ্কারটন এই অবাস্তব ঘটনা বলতে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডে যাচ্ছিলেন প্রতিকারের আশায়। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। আগেই তিনি গাড়ির চাকায় প্রাণ দিলেন এবং গাড়িটা চাপা দিয়ে পালিয়ে গেল।
প্রতিবাদ করে জিমি বললো–কিন্তু তুমি তো জান না যে উনি ইয়ার্ডে পৌঁছতে পেরেছিলেন কিনা?
তা হয়তো হতে পারে, কিন্তু আমার ধারণা মহিলা ইয়ার্ডে যেতে পারেননি।
এ তোমার নিছক অনুমান। মাথা ঝাঁকিয়ে লিউক বললো-না, আমার মোট বক্তব্য–ব্যাপারটার একটা অনুসন্ধান হওয়া উচিত।
তাহলে তুমি কী বলতে চাইছো?
আমার মতে ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করাই হবে সবচেয়ে ভালো।
লিউকের দিকে তাকিয়ে জিমি বলে–আচ্ছা লিউক, তুমি কি সত্যিই এ ব্যাপারে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছ?
পুরোপুরি।
কিন্তু যদি এমন হয় যে সমস্ত ব্যাপারটাই এক অলীক কল্পনাবিলাস?
তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?
গম্ভীর হয়ে জিমি বললো–কোনো পথে এগোবে কিছু ঠিক করেছো? সে জায়গায় যেতে হলে তোমায় একটা কারণ দেখাতে হবে?
তা হয়তো হবে।
কোনো হয়তো এখানে খাটবে না। নতুন কেউ গ্রামে এলে ওরা অনেকদূর থেকেই টের পেয়ে যায়।
লিউক জবাব দেয়–ছদ্মবেশই নিতে হবে। বলতো, কোনো বেশ নেওয়া যায়? চিত্রকর?
তখনও লিউক কিন্তু তার সমস্যা নিয়ে চিন্তা করে যাচ্ছিলো।
আচ্ছা, যদি একজন লেখক সাজি, বা জেলে সেজে যাই? এ-ও যদি না হয় অন্ততঃ অন্ধ বা খোঁড়া সেজে যেতে পারি? আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল। কিন্তু জিমি, কোনো না কোনো উপায় নিশ্চয় আছে যার সাহায্যে একজন অচেনা-অজানা লোক কিছুদিনের জন্য গ্রামে গিয়ে থাকতে পারে।
এক মিনিট দাঁড়াও–কাগজটার ওপর খানিকক্ষণ চোখ বুলিয়ে বলে উঠল-হা, আমি ঠিকই ভেবেছিলাম। শোনো লিউক, সব সমস্যার সুরাহা। আমি তোমার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
কী ব্যাপার?
জিমি বললো-প্রথম থেকেই ভাবছিলাম নামটা চেনা–উইচউড-আণ্ডার অ্যাশ-হ্যাঁ, এই জায়গাটাই তো! ওখানে আমার এক আত্মীয় থাকে।
সত্যিই জিমি, তুমি একটি আসল রতন।
বেশ ভালো হল, না?
যাই হোক, তোমার সেই আত্মীয়ের পরিচয়টা দাও।
ওর নাম ব্রিজেট কনওয়ে। বছর দুয়েক হল ও ওখানে লর্ড হুইটফিল্ডের সেক্রেটারীর কাজ করছে।
সেই লোকটা–যার কতকগুলো বাজে সাপ্তাহিক কাগজ আছে?
ঠিকই ধরেছে।
আর তোমার সেই বোন ওর সেক্রেটারী?
আগে ছিল। এখন ওর স্থান আরও উঁচুতেও হুইটফিল্ডের বাগদত্তা।
লিউক বললো-ও।
জিমি বললো-তুমি ওখানে গিয়ে সম্পর্কে ব্রিজেটের এক ভাই হয়ে থাকবে। আমি ওকে বলে সব ব্যবস্থা করে দেবো। কিন্তু তুমি যে কারণে ওখানে যাবে, সেটা হচ্ছে ডাইনীবিদ্যা, বুঝেছো?
ডাইনীবিদ্যা? সে আবার কী?
অর্থাৎ, স্থানীয় ছড়া, কুসংস্কার–এই সব আর কি। উইচউড এই সব ব্যাপারে বেশ বিখ্যাত। ও এমন একটা জায়গা, যেখানে গত শতাব্দী পর্যন্ত ডাইনীদের ধরে পুড়িয়ে মারা হত। তুমি ওখানে যাচ্ছ এই সব ধারাবাহিকতা নিয়ে একটা বই লিখতে। সুতরাং, তোমায় কেউ সন্দেহ পর্যন্ত করবে না।
কিন্তু লর্ড হুইটফিল্ড?
ও কোনো অসুবিধা করবে না। তাছাড়া, ব্রিজেট ওকে মানিয়ে নেবে। আমি ওর হয়ে তোমায় কথা দিতে পারি।
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে লিউক বললো–জিমি, তুমি একজন সত্যিকারের করিৎকর্মা লোক। তুমি যদি তোমার সেই বোনের সঙ্গে আমার ব্যবস্থা করে দিতে পারো
সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে–তুমি আমার ওপর ছেড়ে দাও।
আমি তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম।
জিমি বললো–প্রতিদানে শুধু একটা জিনিসই আমি চাই–তোমার সিদ্ধি যদি হয় হন্তার সার্থক সন্ধানে, আমার সাফল্য আসুক মৃত্যুকে খুঁজে বের করার মধ্যে প্রতিদানে এই হলো আমার যাচা।
লিউক বললো–সেই বৃদ্ধা মহিলাকে আমি বলেছিলাম যে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে এতগুলো খুন করা খুবই কঠিন। উনি বলেছিলেন যে, আমার ধারণা ভুল-খুন করা খুবই সহজ।
আচ্ছা, খুন করা কী অতি সহজ?
***
ঝাঁটা-বিহীন ডাইনী
একটা পুরানো স্ট্যাণ্ডার্ড সোয়ালো গাড়ি চালিয়ে লিউক উইচউড–আণ্ডার অ্যাশে এসে পৌঁছলো। গ্রামে ঢুকতেই পাহাড়ি রাস্তাটার একটা ঢালু জায়গায় কিছুক্ষণের জন্য গাড়িটা থামালো।
লিউক দেখলো সামনে উইচউড গ্রাম সমাহিত আর স্থির হয়ে আছে। গ্রামটিকে আধুনিক যন্ত্র যুগের কলুষতা স্পর্শ করতে পারেনি। লিউকের মনে হচ্ছিলো, ও যেন পৃথিবীর এক সুদূর নির্মল প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে।
চিন্তায় পড়লো লিউক। ভাবলোনাঃ, এমন ঘটনা এখানে ঘটতে পারে না-না কি ঘটতেও পারে?
গাড়িতে চাবি দিয়ে সেই আঁকা-বাঁকা পথ ধরে বড় রাস্তায় এসে পড়ল। রাস্তার দুধারে দোকান-পসার, পুরানো বনেদী ঘর-বাড়ি। রাস্তা থেকে একটু এগিয়ে বে-মোটুলি নামে একটা হোটেল পড়ে। তাছাড়া আছে সবুজ মাঠ এবং পুকুর। আর আছে যাদুঘর এবং পাঠাগার। আরও কিছুটা এগিয়ে যেতে সামনে সাদা রঙের বেশ বড় একটা আধুনিক বাড়ি পেলো। ওটা স্থানীয় যুবকদের একটা ক্লাব।