আপনার সুবিবেচনা মনে রাখবার মতো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
দেখ, আমার ওখানে আর যাই হোক, তোমার পক্ষে অত্যন্ত নিরাপদ আর
কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ব্রিজেট বলে–নিরাপদ?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–না, এই বলছিলাম যে, আরামে থাকতে পারবে; তবে এখানে যেমন বিলাস-ব্যসনের মধ্যে বাস করছো, ততটা না হলেও আমার ওখানেও গরম জলের কালে গরম জল পাবে; আর আমার ঝি এমিলি মোটামুটি ভালোই রান্না করে।
ব্রিজেট বলে–ও কথা বলছেন কেন মিস ওয়েনফ্লিট? আপনার ওখানে বেশ আরামেই থাকতে পারবো।
তবে, তোমার পক্ষে সবচেয়ে ভালো হবে শহরে চলে যাওয়া।
ব্রিজেট বললো–তাতে একটু অসুবিধে আছে। আমার কাকীমা আজ সকালেই একটা ফুলের মেলা দেখতে চলে গেছেন। আমি এখনও তাকে এখানকার ঘটনা কথা কিছুই বলতে পারিনি; তবে আমি ওকে একটা চিঠি দিয়ে জানাতে পারি যে, আমি ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবো।
তুমি কি লন্ডনে তোমার কাকীমার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকবে?
হ্যাঁ, তাছাড়া ওখানে আমার কেউ নেই; তবে খাওয়ার জন্য আমাকে বাইরে যেতে হবে।
কী সর্বনাশ! তুমি একা ওই ফ্ল্যাটে থাকবে? তা কিন্তু উচিত হবে না। ওখানে একা থাকা ঠিক নয়।
ব্রিজেট বলে–ভয় নেই, আমাকে কেউ খেয়ে ফেলবে না। তাছাড়া, আমার কাকীমা কালকেই ফিরে আসবেন।
দুশ্চিন্তা, ভয়ে মিস ওয়েনফ্লিট মাথা নাড়েন।
লিউক বললো, ব্রিজেট, তার চেয়ে তুমি একটা হোটেলে গিয়ে থাকো।
ব্রিজেট বললো–কেন? তোমাদের সব হলো কী? আমাকে কি তোমরা অসহায় শিশু পেয়েছো?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন-না না, ভুল বুঝো না। তোমাকে কেবল কিছুটা সাবধান হয়ে থাকতে বলছি, তার বেশি নয়।
কিন্তু কেন? কী হয়েছে? ব্যাপারই বা কী?
লিউক বললো–ব্রিজেট শোন, আমি তোমার সঙ্গে দুএকটা কথা বলতে চাই, কিন্তু এখানে তা সম্ভব নয়। আমার সঙ্গে গাড়িতে এসো, কোথাও একটা নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে কথা বলবো।
ও মিস ওয়েনফ্লিটের দিকে তাকিয়ে বলে–আপনি যদি কিছু মনে না করেন, ঘন্টা খানেক বাদে আপনার বাড়ি আমরা আসতে পারি? কয়েকটা ব্যাপারে আপনার পরামর্শ দরকার।
নিশ্চয়ই আসবেন, আমি আপনাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবো।
লিউক মিস ওয়েনফ্লিটকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্রিজেটকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। চলতে চলতে বলে-বাক্সপত্র পরে এক সময়ে নিয়ে আসা যাবে, এখন চলো।
সামনের দরজা দিয়ে ওরা দুজনে বেরিয়ে আসে। লিউক ব্রিজেটকে গাড়িতে উঠতে বলে এবং নিজে ব্রিজেটের পাশে বসে গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে তীব্র গতিতে ভেতরের রাস্তাটা পেরিয়ে গেটের বাইরে এসেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, বাব্বা। শেষ পর্যন্ত তোমাকে নিরাপদেই এ বাড়ির বাইরে বের করে আনতে পেরেছি।
তুমিও কি পাগল হয়ে গেলে লিউক? এই ঢাক-ঢাক-গুড়-গুড়, এখন আমাকে কিছু বলতে পারছো না,–এসবের মানেটা কী?
ধরতে পারো ব্যাপারটা যথার্থই কঠিন। যার ছাদের নিচে তুমি বসবাস করছে, সে যদি নিজেই একজন খুনী হয়, তখন ব্যাপারটা গুছিয়ে বলা কঠিন ব্যাপার বৈকি।
***
মিলে-মিশে করি কাজ ব্রিজেট প্রায় এক মিনিট নিশ্চল থেকে বললো–গর্ডন? মাথা নেড়ে লিউক সম্মতি জানায়।
গর্ডন? গর্ডন খুনী? এমন উদ্ভট কথা জীবনে কখনো শুনিনি।
তোমার এই কথা মনে হলো?
ঠিক এই কথাই মনে হলো, কারণ গর্ডনকে দেখেছি–ও একটা মাছি পর্যন্ত মারতে চায় না।
লিউক বলে–হতে পারে, যদিও আমার জানা নেই। কিন্তু একথা সত্যি যে ও ক্যানারীটাকে মেরেছিলো এবং আমার স্থির বিশ্বাস যে, বেশ কিছুসংখ্যক মানুষ ও খুন করেছে।
কিন্তু লিউক, আমি কিছুতেই একথা বিশ্বাস করতে পারছি না।
জানি, শুনতে অবিশ্বাস্যই মনে হয়; তাছাড়া আমার মাথাতেও ঘুণাক্ষরে এ চিন্তা আসেনি– এমন কি গত পরশু পর্যন্ত আমি কোনো রকম সন্দেহ পর্যন্ত করিনি।
কিন্তু আমিও যে গর্ডনকে আগাগোড়া চিনি। আমি জানি ও কেমন মানুষ। ও একেবারে নিপাট, ভালো মানুষ–বড় বড় কথা বলে, কিন্তু তাতে ওকে কেবল করুণা করা চলে, আর কিছু নয়।
লিউক বলে–এখন থেকে ওর সম্পর্কে তোমার ধারণা পাল্টাতে হবে ব্রিজেট।
তাতে কোনো লাভ নেই লিউক, আদতেই আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তোমার মাথায় কী করে এমন এক অসম্ভব চিন্তা এলো?–কেন, দুদিন আগেও তো তুমি নিশ্চিত ছিলে যে এলসওয়ার্দিই খুনী?
লিউক বলে–জানি জানি, তুমি ভাবছো যে, আগামীকাল হয়তো আমি সন্দেহ করবো টমাসকে, তার পরদিন হয়তো হর্টনকে। তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো–আমি অতটা তালকানা নই। তবে যদি ভালো করে অনুধাবন কর, তাহলে দেখতে পাবে যে প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে অন্যান্য কার্যকারণের পরিপূর্ণ সামঞ্জস্য আছে। এখন বুঝতে পারছি, মিস পিঙ্কারটন কেন স্থানীয় পুলিশের কাছে যেতে চাননি। ওরা ওঁকে একেবারে হেসেই উড়িয়ে দিতো; কাজেই স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডই ওঁর শেষ ভরসা ছিলো।
কিন্তু পর পর এতগুলো খুন করার পেছনে গর্ডনের কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? না না, এ একেবারেই অসম্ভব কথা।
মানছি, কিন্তু একথা তো তুমি জান যে গর্ডন হুইটফিল্ড নিজেকে কী বিশাল একজন কেষ্ট-বিচ্ছু ভাবে?
ব্রিজেট বলে–তবুও আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা লিউক, তোমার হাতে কোনো প্রমাণ আছে?
প্রথম প্রমাণ ওর নিজের কথা। গত পরশু রাতে ও আমাকে বলেছিলো যে, যে-ই ওর বিরুদ্ধাচরণ করেছে, তাকেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে।