মিস ওয়েনফ্লিট বলেন, সঠিক জানতাম না। যদি জানতাম, তাহলে নিশ্চয় আমি আপনাকে বলতাম। কিন্তু সবসময়েই আমার মনে একটা ভয় ছিলো।
তা সত্ত্বেও একটা ছোটো ইঙ্গিত পর্যন্ত আমাকে দিলেন না?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–কী করে বলবো বলুন? বলা কি যায়? আমি যে একদিন ওকে ভালোবাসতাম।
লিউক শান্ত গলায় বললো-বুঝতে পারছি।
তারপর মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–ব্রিজেট যে এ বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে, তার জন্য আমি সত্যিই খুশী। ও তো আপনাকেই বিয়ে করছে?
হা।
মিস ওয়েনফ্লিট পরমুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে যান। ওঁর চোখেমুখে ফুটে ওঠে দুশ্চিন্তার ছাপ।–কিন্তু খুব সাবধানে থাকবেন। আপনারা দুজনেই অত্যন্ত সতর্ক থাকবেন।
আপনি কি হুইটফিল্ডের কথা বলছেন?
হা। এখনই ওকে কিছু বলার দরকার নেই।
কপাল কোঁচকায় লিউক।-আপনার একথাটা আমাদের দুজনের মনঃপূত হবে বলে মনে হয় না।
ওঃ, কিন্তু না বললে ক্ষতি কী? আপনি বুঝতে পারছেন না যে, ও কত বড় উন্মাদ! একেবারে উন্মত্ত! এক মুহূর্তের জন্যও ও এসব সহ্য করবে না। ব্রিজেটের যদি কিছু হয়।
ওর কিছুই আমি হতে দেবো না।
তা জানি, কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, ওর সঙ্গে আপনি পাল্লা দিয়ে পারবেন না। ও যে অত্যন্ত মারাত্মক রকমের ধূর্ত। ব্রিজেটকে এখনই এখান থেকে সরিয়ে নিন–সেই একমাত্র পথ। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি আপনারা দুজনেই বিদেশে চলে যান।
লিউক বলে–যদি যেতে হয়, ব্রিজেটকে পাঠিয়ে দেবো, কিন্তু আমি এর হেস্তনেস্ত না করে নড়বো না।
আমিও ভেবেছিলাম, আপনি এমনটাই বলবেন। কিন্তু আর দেরি করবেন না। ওকে এই মুহূর্তে সরিয়ে আনুন।
লিউক বলে–হয়তো ঠিকই বলেছেন।
হয়তো নয়, আমি জানি আমি ঠিক বলছি। এক্ষুনি পাঠিয়ে দিন, না হলে হয়তো বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
***
ভগ্ন প্রতিশ্রুতি
ব্রিজেট লিউকের গাড়ির আওয়াজ পেয়েই বাইরের সিঁড়িতে ছুটে এসে বললো–আমি ওকে সব বলে দিয়েছি।
কী বলছো–লিউক হতচকিত, ব্রিজেটের নজর এড়ালো না।
লিউক তোমার কী হয়েছে? তোমাকে দেখে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে?
লিউক বলে–আমার ধারণা ছিলো যে আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা করবে এবং এমন কথাই তুমি দিয়েছিলে।
জানি, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম যে সব কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়াই ভালো। এই বিয়েকে কেন্দ্র করে ও সমস্ত রকম ব্যবস্থাপত্র একেবারে পাকা করে ফেলেছিলো, এমনকি, হনিমুন কোথায় হবে সে জায়গা পর্যন্ত ঠিক করতে যাচ্ছিলো, কাজেই আমার না বলে আর উপায় ছিলো না।
একটু থেমে ব্রিজেট বললো–ভদ্রতার দিক থেকেও ওকে সব কথা বলা দরকার ছিলো।
লিউক বললো বুঝতে পারছি যে তোমার দিক থেকে তুমি ঠিকই করেছে।
আমার মনে হয় সাধারণ ভদ্রতাবোধের দিক থেকেও ঠিক করেছি।
লিউক বললো–কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন ভদ্রতাবোধের অনুশাসন মেনে চলা যায় না।
তুমি কী বলছো লিউক?
লিউক বলে–আমি তোমাকে এক্ষুনি সব কথা বুঝিয়ে বলতে পারছি না। যাকগে, হুইটফিল্ড তোমার বক্তব্য কী ভাবে নিলো?
ব্রিজেট বললো–অত্যন্ত ভালোভাবে নিয়েছে। সত্যি, এত শান্তভাবে নেবে বুঝতে পারিনি। জানো লিউক, কেবলমাত্র ওর বাইরেটা দেখে আমি হয়তো ওকে অহেতুক ছোটো করছি। এখন মনে হচ্ছে, ওর অন্তঃকরণটা সত্যিই উদার, মহান।
লিউক বললো–আমরা যেটা আদৌ সন্দেহ করিনি সেদিকে ও হয়তো খুবই মহৎ। শোনো ব্রিজেট, যত শীঘ্র সম্ভব তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে।
সে তো হবেই। আমি আজই আমার জিনিষপত্র বেঁধে নেবো। তুমি আমাকে শহর পর্যন্ত পৌঁছে দিও। এলসওয়ার্দি যদি দলবল নিয়ে বিদায় হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো আমরা দুজনেই বেস্-মোটলি হোটেলে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারবো।
লিউক বলে–না, তা হবে না। তুমি লন্ডনে চলে যাও। তোমাকে আমি একটু পরেই সব বুঝিয়ে বলছি–ততক্ষণ আমি হুইটফিল্ডের সঙ্গে একটু দেখা করে আসি।
সেই ভালো। এখানে সব কিছুই যেন কেমন জান্তব, তাই না? এই জায়গাটায় আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো।
লিউক বললো–সে যাই হোক, ওর সঙ্গে দর কষাকষিটা তোমার ভালোই হয়েছে। যা হয়ে গেছে, তা নিয়ে আর হা-হুঁতাশ করে লাভ নেই।
লিউক ঘরে ঢুকতেই দেখলো যে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত হুইটফিল্ড পায়চারী করছেন।
এই যে ফিৎস উইলিয়াম্ এসে গেছেন?
দেখুন, আমি যে দুঃখিত বা অনুতপ্ত–এমন কোনো কিছুই আমি বলতে আসিনি, কারণ সেটা নেহাৎই ভণ্ডামী বলে মনে হতে পারে। তবে একথা বুঝতে পারছি যে, আপনার দিক থেকে দেখলে বলতে হবে, আমি অত্যন্ত অন্যায় করেছি। কিন্তু এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, এমনটাও কখনো কখনো ঘটে থাকে।
লর্ড বলেন-বুঝেছি, বুঝেছি।
থামে না লিউক–ব্রিজেট আর আমি দুজনেই আপনার সঙ্গে প্রতারণা করেছি; কিন্তু ঘটনাকে অস্বীকার করে লাভ নেই–আমরা দুজনে দুজনকে পছন্দ করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আর কিছু করবার ছিলো না। সবচেয়ে ভালো হবে ঘটনার বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এখান থেকে আমাদের চলে যাওয়া।
লর্ড বললেন–ঠিকই বলেছেন। এ ব্যাপারে আপনাদের কিছু করার নেই।
লর্ড হুইটফিল্ডের কথাটা সুরটা যেন অনেকটা বেসুরো মনে হলো। তিনি কিছুক্ষণ ধরে যাচাই করার ভঙ্গীতে লিউকের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
তীব্রস্বরে লিউক বলে ওঠে–আপনি কী বলতে চান?
বলতে চাই যে আপনাদের কিছু করার নেই; অর্থাৎ অনেক দেরি হয়ে গেছে।–লর্ড হুইটফিল্ড বলেন।