আবার অফিসারটি বলেন–আমরা নানাভাবে আরও খোঁজাখুঁজি করেছি। এমন পর্যন্ত ধরে নিয়েছিলাম যে হয়তো নম্বরটা এফ. জেড. এক্স ৪৪৯৮-এর কাছাকাছি কোনো নম্বর হতে পারে। হয়তো এমনও হতে পারে যে, ভদ্রমহিলা যে নম্বরটা দেখেছিলেন তার প্রথম দুটো সংখ্যা হয়তো ৪৪ দিয়ে আরম্ভ। আমরা এই জাতীয় নম্বরের সম্ভাব্য সব গাড়ীরই খোঁজ করেছি। কিন্তু সবকটি গাড়িরই খতিয়ান সন্তোষজনক।
লিউকের দিকে স্যার উইলিয়াম্ স-প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকান, লিউকও মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
ঠিক আছে মশায়, আপনি এবার আসুন।-স্যার উইলিয়াম্ বলেন।
স্যার উইলিয়াম্ লোকটি চলে যেতে লিউকের দিকে তাকিয়ে বলেন–কিছু বুঝতে পারলে ফিৎস্?
লিউক বললো–সবই হুবহু ছকের মত মিলে যাচ্ছে। স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডের ধুরন্ধরদের এই জঘন্য খুনের কাহিনী শোনাবার উদ্দেশ্যে পিঙ্কারটন এখানে আসছিলেন। যদিও আমি জানি না তোমরা ওঁর কথায় কর্ণপাত করতে কিনা–হয়তো করতে না
সম্ভবতঃ করতাম। উড়ো খবর, গল্প–কিছুই আমরা উপেক্ষা করি না এই আশ্বাস তোমায় দিতে পারি।
খুনীও হয়তো এমনটাই আশঙ্কা করেছিলো, তাই সে আর ঝুঁকি নেয়নি। পিঙ্কারটনকে চিরতরে সরিয়ে দিলো; আর যদিও বা জনৈক ভদ্রমহিলা তার গাড়ির নম্বরটা দেখে ফেলেছিলো। কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস পর্যন্ত করলো না।
বিলিবোনস লাফিয়ে উঠলো–তুমি কী বলছো?
হ্যাঁ, ঠিকই বলছি। আমি বাজি রেখে বলতে পারি যে, হুইটফিল্ড ওঁকে গাড়ি চাপা দিয়েছিলেন। ড্রাইভার চা খেতে গিয়েছিলো–হয়তো সেই সময়ে বা অন্য কোনো পথে ও ড্রাইভারের কোট গায়ে চাপিয়ে টুপিটা মাথায় দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো। আমি বলছি বিলি, ওই-ই একাজ করেছে।
অসম্ভব।
মোটেই না। হুইটফিল্ড আমার জানার মধ্যে অন্ততঃ সাতটা খুন করেছে–হয়তো আসলে তার চেয়েও বেশি।
এ…অসম্ভব।
আরে ভাই, ও নিজে কাল রাতে কবুল করেছে।
তাহলে তো বলতে হবে লোকটা ঘোর উন্মাদ?
পাগল ঠিকই, তবে অত্যন্ত ধূর্ত ও শয়তান। ওকে বুঝতে দিলে চলবে না যে, আমরা ওকে সন্দেহ করি।
বিলিবোনস বলে–কিন্তু এ যে একেবারে অবিশ্বাস্য..
লিউক বলে,–কিন্তু সত্যি। বিলি, তুমি আমার বহুকালের বন্ধু। আমরা দুজনেই এ ঘটনার একেবারে মূলসুদ্ধ টেনে বার করবো। শোনো, সব ব্যাপারটা তোমায় গুছিয়ে বলি।
ওরা দুজনে দীর্ঘসময় ধরে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে।
***
লিউক পরদিন সকালে গাড়ি নিয়ে উইচউডে ফিরে আসে।
উইচউডে পৌঁছে প্রথমেই মিস ওয়েনফ্লিটের বাড়িতে গাড়ি থামালো। মিস ওয়েনফ্লিট লিউককে দেখে খানিকটা বিস্মিত হয়ে সাদরে ওকে ডেকে বসালেন।
এমন সাত সকালে আপনাকে বিরক্তি করছি বলে দুঃখিত।
লিউক সময় নষ্ট না করে সরাসরি প্রশ্ন করলো-আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে এসেছি মিস ওয়েনফ্লিট, আমি জানি, ব্যাপারটা নিতান্তই ব্যক্তিগত; তার জন্য আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আপনার যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করতে পারেন, কারণ আমি জানি যে একান্ত প্রয়োজন না হলে আপনি জিজ্ঞেস করতেন না।
লিউক বলে–ধন্যবাদ। লর্ড হুইটফিল্ডের সঙ্গে আপনার বিয়েটা কেন ভেঙ্গে গিয়েছিলো?
এর সঠিক উত্তর আমার জানা দরকার।
মিস ওয়েনফ্লিট আঁৎকে উঠে বলেও আপনাকে কিছু বলেছে?
একটা পাখি নিয়ে কী যেন বলছিলেন–পাখিটার ঘাড় মটকে দেওয়া হয়েছিলো বা ঐ জাতীয় কিছু উত্তর দেয় লিউক।
এই কথা বলেছে? শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলো তাহলে? অদ্ভুত ব্যাপার তো!
আপনি আমাকে সব কথা খুলে বলুন।
হ্যাঁ, আপনাকে সবই বলবো; গর্ডনকে কিন্তু দয়া করে কিছু বলবেন না। এসব ঘটনা বহুকাল আগের–আর সবই তো শেষ হয়ে গেছে। আমি সেই মরা অতীতকে আর খুঁচিয়ে তুলতে চাই না।–মিস ওয়েনফ্লিট বলেন।
সম্মতি জানায় লিউক–আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, একথা আমি কখনো উচ্চারণ করবো না–একেবারে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির জন্য আমি জানতে চাইছি।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন,ধন্যবাদ, শুনুন তাহলে। আমার একটা ছোটো ক্যানারী পাখি ছিলো; পাখিটাকে আমি খুব ভালোবাসতাম। যদিও আমি একথা বুঝি যে, একজন পূর্ণবয়স্ক দায়িত্বশীল লোকের পক্ষে এটা সহ্য করা কঠিন।
লিউক বললো–আমি জানি।
গর্ডন পাখিটাকে খুব হিংসে করতো। একদিন ভীষণ রেগে গিয়ে ও বললো–তুমি আমার চেয়ে পাখিটাকে বেশি ভালোবাসো।–এবং আমিও তরুণী মেয়েদের স্বভাবসুলভ চপল ভঙ্গীতে পাখিটাকে আঙুলের ওপর তুলে নিয়ে বলেছিলাম–একটা বুড়ো খোকার চেয়ে আমি তোকে নিশ্চয়ই বেশি ভালোবাসি ডিকি!–আর তার ফল হলো অত্যন্ত বীভৎস। গর্ডন পাখিটাকে আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে একেবারে ঘাড় মটকে মেরে ফেললো। সে কি প্রচণ্ড আঘাত! আমি জীবনে কখনো ভুলতে পারবো না!
প্রশ্ন করে লিউক–এইজন্যই আপনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ, এই ঘটনার পর আমার মনটা সত্যিই ওর ওপর একেবারে বিরূপ হয়ে উঠলো। দেখুন, মিস ফিৎ, ওয়েনফ্লিট একটু ইতস্ততঃ করে বলেন–কেবলমাত্র হিংসা বা রাগ থেকে যদি এ কাজ ও করতো, তাহলে হয়তো আমি এতটা ভয় পেতাম না; কিন্তু আমি যেন দেখলাম, ঘাড় মটকাবার সময়ে ওর চোখে এক বিজাতীয় আনন্দ এবং এই কারণেই আমি এত ভয় পেয়েছিলাম।
লিউকের কথা প্রায় অনুচ্চারিত।–অতদিন আগেও, সেই তরুণ বয়সেও…
আপনি আগাগোড়াই জানতেন যে লর্ড হুইটফিল্ড একের পর এক এতগুলো খুন করেছে, তাই না?