শুনুন মশাই, আমি বলছি যে ওকে খুন করা হয়েছে।
আপনি সেকথা আমাকে বলতে পারেন, কিন্তু তাতেই তো আর আপনার বক্তব্য সত্যি হয়ে যাবে না। ডাঃ টমাস শুকনো গলায় বলেন।
লিউক বলে–মনে হচ্ছে যে, আমি যা বলছি তার একটি কথাও আপনি বিশ্বাস করছেন না।
মৃদু হেসে টমাস–মিঃ লিউক, একথা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে, পুরো ব্যাপারটাই আরব্য-উপন্যাসের মত অবিশ্বাস্য। আপনি নিতান্তই গায়ের জোরে বলছেন যে, এলওয়ার্দি সেই ঝি মেয়েটিকে, ছোটো ছেলেটাকে, আমার সহকারীকে এবং শেষকালে রিভার্সকে পর পর খুন করেছে।
আপনি বিশ্বাস করেন না?
ডাঃ টমাস বলেন–আম্বলবির রোগ সম্পর্কে অন্ততঃ আমার নিজের জানা ছিলো। এলওয়ার্দির মতো লোকের পক্ষে ওভাবে মৃত্যু ঘটানো প্রায় অসম্ভব; অথচ ওর অপরাধ প্রমাণ করবার মতো কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণও আপনার নেই।
আমি সঠিক বলতে পারবো না ও কী করে করতে পেরেছিলো–লিউক স্বীকারোক্তি করে, তবে সমস্ত ঘটনাই মিস পিঙ্কারটনের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। একবার যখন জেনেছি যে, কে খুনী। তখন সাক্ষ্যপ্রমাণও জোগাড় করে ফেলবো।
ডাঃ টমাস বলেন–তা যদি করতে পারেন তাহলে অবশ্য সবচেয়ে ভালো হবে। তবে, যদি এমন হয় যে, আপনার ধারণা আগাগোড়া এক ভুলের…
বাধা দেয় লিউক। আপনি কি আমার বক্তব্যের সবটাই অবিশ্বাস করেন?
এই পাইকারী হারে খুন?–সত্যিকথা বলতে কি লিউক, এ আমি বিশ্বাস করি না।
বিরক্ত হয় লিউক–আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে আমি নিজে একজন পুলিশের লোক? পুরোপুরি শৌখিন খেয়াল নয়।
ডাঃ টমাস হেসে বলেন–জানি, মেয়াংস্ট্রেটেও?
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই!
লিউক রাগ চেপে নিয়ে ডাঃ টমাসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ব্রিজেটের কাছে যেতেই ব্রিজেট জিজ্ঞেস করে–কেমন কথাবার্তা হলো?
ও আমাকে আদৌ বিশ্বাস করেনি। অবশ্য ভালো করে ভেবে দেখতে গেলে ওকে দোষ দেওয়া যায় না।
কেউ কি বিশ্বাস করবে?
এখন হয়তো করবে না, তবে আমার পুরানো বন্ধু বিলিবোনসের সঙ্গে আগামীকাল দেখা করার পর চাকা ঘুরে যাবে। ওর এই লম্বাচুলওয়ালা এওয়াদি সম্পর্কে খোঁজখবর করলেই সব ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যাবে।
ব্রিজেটের ভেতরটা শিরশির করে ওঠে–দোহাই লিউক, একটু সাবধান হও।
আমি খুবই সতর্ক আছি। পাথরের আনারস দিয়ে সাজানো গেটের তলা দিয়ে হাঁটি না। রাত-বিরেতে বন-জঙ্গলে যাই না আর খাবারদাবারও বেশ সাবধানে খাই–এসব পথ আমার ভালো করে জানা আছে।
আচ্ছা, এখানকার পুলিশকে বললে কিছু সুরাহা হয়?
জবাব দেয় লিউক–মনে হয় না–তার চেয়ে স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ডেই যাওয়া ভালো।
মিস পিঙ্কারটনও এই কথা ভেবেছিলেন।
তা ঠিক,আমি সবরকম বিপদের জন্যই তৈরি থাকবো।
আমি কাল গর্ডনকে সঙ্গে করে ওই বদমাসটার দোকানে গিয়ে ওকে দিয়ে জিনিষপত্রের দরদাম করবো।
যাতে এলসওয়ার্দি হোয়াইট হলের সিঁড়ির মুখে আমাকে খুন করার জন্য লুকিয়ে থাকতে না পারে?
হা, সেই জন্যই।
লিউক বিব্রত হয়ে বলে–হুঁইটফিল্ড সম্পর্কে
ব্রিজেট বাধা দিয়ে তাড়াতাড়ি বলে–ওসব তুমি ফিরে আসা পর্যন্ত থাক। পরে এক সময়ে বলা যাবে।
আচ্ছা, ভদ্রলোক কি খুব রেগে যাবেন? তোমার কী মনে হয়?
ব্রিজেট বলে–তা–ওর খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে।
লর্ড হুইটফিল্ড সন্ধ্যাবেলাটা প্রচণ্ড খুশীর মেজাজে ছিলেন। মোটর ড্রাইভারের মৃত্যুতে আনন্দে একেবারে ডগমগ করছিলেন।
পোর্টে ভরা দামী কাঁচের গ্লাসটা আলোর দিকে ধরে তার দিকে তাকিয়ে বললেন–আমি তোমাদের আগেই বলেছিলাম যে, লোকটা শেষ পর্যন্ত পস্তাবে। কাল সন্ধ্যাবেলায়ই একথা বলিনি?
হ্যাঁ, বলেছিলেনই তো।
দেখলেন তো, আমি ঠিক কথা বলেছিলাম কিনা? আমার বেশির ভাগ কথাই এমন আশ্চর্যজনক ভাবে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়।
এটা সত্যিই আপনার গৌরবের বিষয়।
শুনুন, আমি ধর্মকে মেনে চলি। ভালো আর মন্দ–দুটোতেই আমার সমান বিশ্বাস; আর বিশ্বাস রাখি সেই শাশ্বত সুবিচারের ওপর। স্বর্গীয় বিচার কতটা একেবারে ধ্রুব সত্য, মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম, এখানেও সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
আমারও সুবিচারের ওপর আস্থা আছে।–যোগ দেয় লিউক।
মার কথা মনে হলো, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সদাচরণ কর, সৃষ্টিকর্তাও তোমার সঙ্গে সদাচার করবেন।
সে তো নির্জলা সত্য।–লিউক হাই তুলতে তুলতে বলে।
লর্ড হুইটফিল্ড বলেন–আশ্চর্য! পরমাশ্চর্য ব্যাপার। যে ন্যায়পরায়ণ তার শত্রুরা যেভাবেই হোক নিঃশেষ হয়ে যাবেই। কালকের ঘটনাটাই দেখুন না। লোকটা আমাকে গালাগাল দিলো, এমনকি আমার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতে যাচ্ছিলো। অথচ কী হলো? আজ ও কোথায়?
নাটকীয় ভঙ্গীতে নিজেই জবাব দিলো–মৃত্যু! ঈশ্বর-প্রদত্ত চরম শাস্তি!
লিউক বললো–একপাত্র বেশি মদ খাওয়া রাগের মাথায় দুচারটে ছোটোবড়ো কথা বলার পক্ষে দণ্ডটা বোধহয় একটু বেশিই হয়ে গেছে।
লর্ড হুইটফিল্ড অস্বীকার করেন–এই রকমই হয়। পাপের শাস্তি অতি দ্রুত ফলে এবং তা আসেও অতি ভয়াল মূর্তিতে। এইভাবেই এর প্রতিবিধান হয় মিঃ ফিস্ উইলিয়াম্।
আমার কিন্তু সব সময়েই মনে হতো যে, এটা কিছুটা বাড়াবাড়ি রকম নিষ্ঠুরতা।
কক্ষনো নয়, আপনি ভুল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। এলিসা ছিলেন এক মহান স্বর্গীয় পুরুষ; তাঁকে অপদস্থ করে কারোরই আর বেঁচে থাকার অধিকার থাকতে পারে না।-এবং, আমার বিশ্বাস, আমার ক্ষেত্রেও ওই একই কারণ।