এলসওয়ার্দির বাড়ি তোলপাড় করছিলাম। লিউকের কণ্ঠে স্ফূর্তির আভাস।
দম বন্ধ হয়ে আসে ব্রিজেটের–কিছু পেলে ওখানে।
বুঝতে পারছি না, তবে বজ্জাতটাকে আর একটু ভালো করে চিনতে পেরেছি–বিশেষ করে ওর যৌনরুচি সম্পর্কে। তাছাড়া গোটা তিনেক জিনিষ পেয়েছি, যেগুলো থেকে কিঞ্চিৎ ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।
বেশ মন দিয়ে ব্রিজেট রাতের অভিযানের গল্প শোনে।
ব্রিজেটের সারা অঙ্গ থর থর করে কেঁপে ওঠে–কী ভয়ানক কাণ্ড!
চটে যায় লিউক,–কিন্তু তোমার এভাবে একা একা বেরিয়ে আসা উচিত হয়নি ব্রিজেট। যে কেউ তোমার মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে ফেলে দিতে পারতো।
ব্রিজেট বলে–তোমার ক্ষেত্রেও তো একই কথা খাটে।
না খাটে না, আমি আত্মরক্ষা করতে পারি।
এক ঝলক মত্ত হাওয়া ভেঙ্গে পড়ে। আচমকা লিউক বলে ওঠে–মাথা থেকে ওই বোরখাটা সরাও তো।
লিউকের আচরণে অস্থিরতা চনমন করে ওঠে। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেষ পর্যন্ত লিউক বলে–
চলো বাড়ি যাই।
দাঁড়াও।
কেন?
কারণ, তোমাকে দুএকটা কথা বলা দরকার। আসলে এই কথা বলবার জন্যই ম্যানরের বাইরে এসে অপেক্ষা করছিলাম।
লিউক বলে–তুমি কী বলতে চাও?
বলতে চাই যে আমি হুইটফিল্ড-ঘরণী হবার ইচ্ছেকে বিসর্জন দিয়েছি।
লিউক বলে–সত্যি বলছো?
হ্যাঁ, লিউক।
তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
করবো।
কিন্তু কেন?
জানি না, তবে তুমি আমার যতসব বিজাতীয় আখ্যায় ভূষিত করেছে, আমার ধারণা সেগুলো আমার ভালোই লেগেছে।
ওর হাত দুটো বুকে টেনে চুমু দিয়ে লিউক বলে–এ দুনিয়াটা একটা সত্যিকারের পাগলের কারখানা।
কিন্তু তুমি খুশী হলে তো লিউক?
খুশী হয়েছি একথা ঠিক বলা যায় না।
তুমি কি আমাকে নিয়ে কখনো খুশী হতে পারবে?
তা জানি না; তবে ঝুঁকি নেবো।
লিউক ব্রিজেটের একখানি হাত নিয়ে নিজের হাতে ধরে বললো–জানো সোনা, এই ব্যাপারটায় আমরা দুজনেই সমান বিদঘুঁটে। চলো, বাড়ি যাই, সকাল হলে হয়তো দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
হঠাৎ ব্রিজেট লিউককে সর্বশক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে আঁতকে উঠে বলে–লিউক, লিউক, দেখো এখানে এটা কী?
একটা ঢিবির মতো পড়ে থাকা কিসের সঙ্গে যেন ব্রিজেটের জুটো ঠোক্কর খেলো।
লিউক বিদ্যুৎ গতিতে ব্রিজেটের হাত সরিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পরীক্ষা করেই ওপরের গেটের পিলারের দিকে তাকায়। আর সেখানে সেই আনারসটা নেই। ও উঠে দাঁড়ায়।
এই সেই ড্রাইভার রিভার্স–বেঁচে নেই…।
নিশ্চয়ই এই বিশাল পাথরটা–বেশ কিছুদিন থেকেই ওটা আলগা হয়ে গিয়েছিলো। এমনকি হতে পারে যে, হাওয়ার দাপটে ওটা ওর ওপর এসে পড়েছিলো?
মাথা নাড়ে লিউক–বাতাসের অত জোর হতে পারে না। আসলে ঘটনাটা এভাবেই সাজানো হয়েছিলো–এমন কিছু একটা বোঝাবার জন্য যাতে দুর্ঘটনা মনে হয়। কিন্তু টিকলো না–আবার সেই খুনী।
না, লিউক না।
নির্ঘাত তাই। তুমি জানো ওর মাথার চটচটে রক্তের মধ্যে কী পেলাম?–গুড়ো গুঁড়ো বালি। অথচ, এখানে কোথাও বালির চিহ্ন নেই। আমি তোমাকে বলছি ব্রিজেট, কেউ এখানে দাঁড়িয়েছিলো আর ও যেমনি বাড়িতে যাবার জন্য গেটের তলা দিয়ে ঢুকতে যাবে, তখন একটা কিছু দিয়ে ওকে আঘাত করে যার ফলে ও মারা যায় এবং তারপর এই আনারস সে ঠেলে ওর ওপর ফেলে দেয়!
ব্রিজেট বলে–লিউক, তোমার হাতভর্তি রক্ত…
লিউক বলে–আরও একজনের হাতেও এই রক্ত লেগে আছে। জানো, আজই সন্ধ্যাবেলা কী ভাবছিলাম? ভাবছিলাম, আর একজন যদি কেউ খুন হতো তাহলেই সমস্ত ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যেতো। এবং, আমরা জেনেছি! এলসওয়ার্দি। ও রাতে বাইরে গিয়েছিলো এবং ফিরেও এসেছিলো রক্তমাখা হাতে–চোখে মুখে খুনীর মতো এক উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি নিয়ে…
পড়ে থাকা লোকটিকে দেখে ব্রিজেটের সারা শরীর থর থর করে কেঁপে ওঠে। ও বলে–আহা রে, বেচারা রিভার্স।
লিউক বলে–হতভাগ্য। লোকটার কপাল নেহাতই মন্দ। কিন্তু ব্রিজেট, এই শেষ–এবার আমরা টের পেয়ে গেছি; ওর আর নিস্তার নেই।
ব্রিজেট যেন একটু একটু টলছে লিউক দেখলো। ও দুহাতে ব্রিজেটকে জড়িয়ে ধরলো।
ব্রিজেট বলে–লিউক আমার দারুণ ভয় করছে…
ভয় পেয়োর না লক্ষ্মীটি। এই শেষ–এখানেই এর শেষ।
আমার মনে কখনো কোনো কষ্ট দিয়ো না। আমি আঘাতে আঘাতে একেবারে জর্জরিত।
আমরা দুজনেই দুজনকে আঘাত করেছি। এবার থেকে আর কোনো আঘাত নয়।
***
লর্ড হুইটফিল্ডের ভাষ্য
ডাঃ টমাস আর লিউক রোগী পরীক্ষা করার ঘরে মুখোমুখি বসে।
আশ্চর্য! দারুণ বিস্ময়কর মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম। আপনি কি সত্যিই একথা নিজে বিশ্বাস করেন?
নিঃসন্দেহে। আমার স্থির বিশ্বাস এলসওয়ার্দি একজন বিপজ্জনক নেশাগ্রস্ত খুনী।
আমি যদিও ওকে খুব একটা লক্ষ্য করিনি, তবে হতেও পারে যে লোকটা হয়তো কিছুটা অন্য ধরনের।
আমি কিন্তু বলবো যে, ওর চেয়ে অস্বাভাবিকতার মাত্রা কল্পনা শক্তিকে ছাড়িয়ে যায়।
আপনার স্থির বিশ্বাস যে রিভার্স খুন হয়েছে?
নিশ্চিত। আপনি নিজে ওর মাথায় বালি পাননি?
ডাঃ টমাস বলেন–আপনি বলবার পর আমি দেখেছিলাম, স্বীকার করছি যে আপনার কথা সত্য।
এ থেকেই তো প্রমাণ হয় যে, দুর্ঘটনাটা ছিলো একটা সাজানো ব্যাপার। আসলে ওকে হত্যা করা হয়েছিলো বালির বস্তা দিয়ে আঘাত করে অথবা ঐ জাতীয় একটা কোনো উপায়ে।
তা প্রমাণ হয় না।
কী বলছেন আপনি?
ডাঃ টমাস বললেন,-এ অঞ্চলে প্রচুর বালির ঢিবি ছড়িয়ে রয়েছে। এমনও তো হতে পারে যে, সেদিন রিভার্স ওইরকম একটা বালির ঢিবিতে শুয়েছিলো? তাতেও তো ওর চুলে বালি পাওয়া যেতে পারে?