কেবল মাত্র একটু রেগে ছিলো এই যা।–ফোড়ন কাটে লিউক।
লর্ড হুইটফিল্ড বলেন–তোমরা জানো ও কী করেছে? আমার ছোটো গাড়িটা ব্রিজেট নিজেই চালিয়ে আমাকে লাইনে নিয়ে গিয়েছিল; আর সেই ফাঁকে আমার গাড়ি বের করে ওই লুমি কার্টার না কি যেন নাম মেয়েটার, তাকে নিয়ে ও বেড়াতে গিয়েছিলো।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন,–অত্যন্ত অন্যায় করেছে।
বলো, অন্যায় নয়?–লর্ড বললেন।
কিন্তু আমি জানি এরজন্য ওকে অনুতাপ করতে হবে।
আমি ওকে অনুতাপ করিয়ে ছাড়বো।
আপনি তো ওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেইছেন।–মনে করিয়ে দেয় মিস ওয়েনফ্লিট।
লর্ড হুইটফিল্ড বলেন–ওই লোকটার ওতেই শেষ হবে না। তারপর বলেন, চলো না হনরিয়া, বাড়িতে গিয়ে একটু শেরী খাওয়া যাক।
আপনি বললেন এই-ই যথেষ্ট লর্ড, কিন্তু এই বইগুলো নিয়ে আমাকে একবার এক্ষুনি মিসেস আম্বলবির কাছে যেতে হবে। চলি। মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম–আশা করি, এবার আপনি নিরাপদ বোধ করবেন।
লিউকের আত্মনিবেশ ভাঙ্গে লর্ড হুইটফিল্ডের কথায়।
ওই হনরিয়া ওয়েনফ্লিট–অত্যন্ত বুদ্ধিমতী আর কাজের মহিলা।
আমারও তাই মনে হয়।
আজকের মতো তখন ও মোটেই রোগা আর এত বিশীর্ণ ছিলো না-রীতিমত সুন্দরী ছিলো। এখন যেন ভাবতেও কেমন লাগে। তখন ওরাই ছিলো এখানকার সম্ভ্রান্ত পরিবার।
তাই নাকি?
কর্নেল ওয়েনফ্লিটের তখন এখানকার জনমানসে দারুণ প্রভাব; সবাই ওঁকে সেলাম ঠুকে চলত। অত্যন্ত রক্ষণশীল প্রকৃতির লোক ছিলেন, তেমনি ছিলেন গর্বিত।
তারপর বললেন–হনরিয়া যখন আমাকে বিয়ে করবে বলে পরিবারের সবাইকে বললো, তখন যেন একেবারে তপ্ত কড়ায় ঘি পড়লো। ও নিজেকে পরিবর্তন পন্থী বলতো। জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে ছিলো। তাছাড়া, ও যা ভাবতো, তা আরম্ভ করবার চেষ্টা করতো।
ও, তাহলে ওর পরিবার থেকে এমন সুন্দর সম্ভাবনাকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিলো?
ঠিক তা নয়, আসলে একটা সামান্য কারণে আমাদের মধ্যে একটা কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। ওর কতকগুলো অতি বিচ্ছিরি বেড়াল আর কতকগুলো বিরক্তিকর ক্যানারী ছিলো। পাখিগুলো সব সময়ে কিচিরমিচির করতো। অতি বিরক্তিকর। তারপর সেই একটা পাখির ঘাড় মটকাবার ঘটনাটা ঘটায়–সে এক বিশ্রী ব্যাপার। যাকগে, অতীতের চর্বিতচর্বণ করে কী-ই-বা হবে? ও ভুলে যাওয়াই ভালো।
কথাগুলো এমনভাবে বললো যেন মনে হলো একটা দুর্বল চিন্তার বোঝা শরীর থেকে। ঝেড়ে ফেলে দিলেন। তার পরেই বললেন,–মনে করবেন না যে, ও আমাকে তার জন্য কোনোদিন ক্ষমা করবে। অবশ্য না করাটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমার মনে হয় আপনার ওপর ওঁর কোনো রাগ নেই।–বললো লিউক।
আপনার কি তাই মনে হয়? কি জানেন, আমি হনরিয়াকে শ্রদ্ধা করি। ও একজন সত্যিকারের মহিলা–আজকালকার দিনেও এটা মূল্যবান। ওরই নিপুণ পরিচালনায় লাইব্রেরিটা এত ভালো চলছে। ওঁর গলার স্বর পালটে যায় চোখ তুলে তাকাতেই–ওই, ব্রিজেট এগিয়ে আসছে।
***
আনারস-রহস্য
লিউকের পেশী শক্ত হয়ে উঠল ব্রিজেটকে আসতে দেখেই। টেনিস খেলার পর থেকে আর দেখাসাক্ষাৎ হয়নি ওদের মধ্যে।
ব্রিজেট হাল্কা গলায় বললো–গর্ডন, আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না যে তোমার হঠাৎ কী হলো।
লর্ড হুইটফিল্ড বললেন,–এই খানিকটা কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করতে হলো। রিভার্সটা এত বড় বেয়াদব যে আজ বিকেলে ও আমার রোস্ নিয়ে বেরিয়েছিলো।
ঠাট্টা করে ব্রিজেট–রাজকীয় রসনা।
এই নিয়ে রসিকতা মোটেই ভালো নয় ব্রিজেট। ঘটনা অত্যন্ত গুরুতর। ও একটা মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলো।
আমার বিশ্বাস, ও যদি একা একা গাড়ি নিয়ে বেড়াতে যেতো, তাহলে সব আনন্দই মাটি হতো।
আমার অধীনে থাকতে গেলে উন্নত চারিত্রিক মান বজায় রেখে চলতে হবে।
একটি মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে গেলেই কেউ দুশ্চরিত্র হয় না।
হা, হয়। যখন আমার গাড়ি নিয়ে যায়।
সেটা অবশ্যই দুশ্চরিত্রার অপরাধ থেকেও জঘন্য। একেবারে নরকীয় পাপ। তবে কিনা যৌবনের দাবীকে তুমি একেবারে অস্বীকার করতে পারো না গর্ডন। বিশেষ করে এমন ভরাট গ্রীষ্মের প্রারম্ভে তার ওপর যদি আবার পূর্ণচন্দ্রমার মায়াজাল হাতছানি দেয়।
কী সর্বনাশ! তাই নাকি?-বলে লিউক।
ব্রিজেট বলে–বে মোটলিতে তিনটি কিস্তুতের আবির্ভাব ঘটেছে। আমি আশঙ্কা করছি এরা সবাই আমার শ্রীমান এলার্দির সাঙ্গপাঙ্গ। কিংবদন্তীর লেখক বলেন–কে যেন কানে কানে বলে গেল যে আজ রাতে হেথাকার ডাইনীর প্রান্তরে উদযাপিত হবে এক আনন্দ লহরিত উৎসব।
লর্ড হুইটফিল্ড বলেন–এ আমি কিছুতেই হতে দেবো না।
প্রিয়তম আমার, এক্ষেত্রে নিতান্তই তুমি অক্ষম।
অধর্ম এই হল্লা আমি এখানে কিছুতেই হতে দেবো না। স্ক্যাণ্ডাল পত্রিকায় আমি সব ফাঁস করে দেবো।
ব্রিজেট বলে–অতঃপর ডাইনীতত্ত্বের বিরুদ্ধে লর্ড হুইটফিল্ডের জেহাদ–গ্রাম্য জীবনের শান্ত পরিবেশে কুসংস্কারের প্রভাব অদ্যাবধি বিদ্যমান।
ব্রিজেটের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে লর্ড বাড়ির ভেতর চলে গেলেন।
নিজের আখের সম্পর্কে তোমার আরও যত্ন নেওয়া উচিত।–লিউকের গলায় আনন্দের অভিব্যক্তি।
কী বলতে চাও?
চাকরিটা যদি খোয়া যায়, তাহলে কিন্তু পস্তাবে। বিবাহহাৎসব নামক অনুষ্ঠানটি পর্যন্ত তোমার সরস ব্যঙ্গোক্তিগুলো একটু রয়ে সয়ে ব্যবহার কোরো।
আহা লিউক, তুমি কী মহান আর দারুণ পরোপকারী।