জানেন, আমি একবার একটা বইতে পড়েছিলাম–আবার ক্রোম্বি কেস–অবশ্য সেই লোকটাকে সন্দেহ করার আগেই সে বেশ কয়েকজনকে বিষ খাইয়েছিলো। যাকগে, ও হ্যাঁ, কে একজন বলেছিল যে সেই লোকটা যার দিকেই চাইতো–মানে বিশেষভাবে চাইতো, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই সে অসুস্থ হয়ে পড়তো। আমি গল্পটি পড়ে বিশ্বাস করিনি–কিন্তু এখন দেখছি এমন ঘটনা বাস্তবেও সম্ভব।
কী?
চোখের বিশেষ দৃষ্টি।
ভদ্রমহিলার দিকে লিউক তাকালো। মনে হল, কে যেন ওঁর মুখের গোলাপী রঙের অনেকটা শুষে নিয়েছে।
মহিলা জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালেন।
এই যাঃ, আমরা যে এসে গেলাম। বলেই অস্থির হয়ে উঠলেন। ছাতাটা তুলে নিতে গিয়ে দুএকবার হাত থেকে পড়ে গেলে লিউক ছাতাটা তুলে হাতে দিলো।
আপনাকে ধন্যবাদ; আপনি বড় ভালো লোক। আমার কৃতজ্ঞতা রইল।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইয়ার্ডের লোকেরা আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে।আবার আন্তরিকতার সুর লিউকের গলায়।
আমার নাম পিঙ্কারটন।
লিউক মৃদু হেসে বলল, খুব উপযুক্ত নাম। সঙ্গে সঙ্গে লিউক বলল–আমার নাম লিউক ফিস্ উইলিয়াম্।
ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতেই লিউক বললো–আপনাকে একটা ট্যাক্সি ডেকে দেবো?
না, না, অনেক ধন্যবাদ।
আচ্ছা, ঠিক আছে। তাহলে চলি?
অন্তরঙ্গভাবে ভদ্রমহিলা লিউকের হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন–জানেন, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি হয়তো আমার কথা বিশ্বাসই করবেন না।
লিউক এবার লজ্জা পায়–এতগুলো খুন করা তো আর সোজা কথা নয়! খুবই কঠিন।
উনি বললেন-যদি সবার সন্দেহের বাইরে থাকা যায়, তবে খুন করা খুবই সহজ। যে খুনীর কথা বললাম, সে এমনই একজন যাকে কেউ সন্দেহই করবে না।
তা হতে পারে। নমস্কার।–বিদায় জানায় লিউক।
ভীড়ের মধ্যে মিস পিঙ্কারটন হারিয়ে গেলেন। লিউক নিজের মনে ভাবলো–একটু কি ছিটগ্রস্তা? কিন্তু তাও তো মনে হল না। কিন্তু সে যাই হোক, মহিলার স্বভাবটি বড় সুন্দর।
***
শোক-সংবাদ
লিউকের সবচেয়ে পুরনো বন্ধু জিমি লরিমার। লণ্ডনে এলেই ও জিমির কাছেই থাকে। এবারও ও জিমির বাড়িতেই উঠেছে। পরদিন সকাল বেলায় এককাপ কফি নিয়ে খবরের কাগজটার মধ্যে ডুবে গেল। ওর কানেই যাচ্ছিল না জিমির কথা। হঠাৎ কিছুক্ষণ পরে যেন সচেতন হলো।
দুঃখিত জিমি–বল, কী বলছিলে?
কী পড়ছিলে অত মন দিয়ে?
লিউক বললো–গতকাল এক বৃদ্ধা একই ট্রেনে আমার সঙ্গে এসেছিলেন–উনি গাড়ি চাপা পড়েছেন।
ভারী বিশ্রী ব্যাপার।–জিমি বললো।
হা, বেশ ভালো মহিলা। ওঁকে দেখেই আমার মিলড্রেড পিসির কথা মনে হয়েছিলো।
যে গাড়ি চালাচ্ছিল, সে এর জন্য দায়ী। তাকে হয়তো খুনের দায়ে ফেলা যাবে না। আমি তো লণ্ডনে গাড়ি চালাতে গেলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি।
তোমার এখন কী গাড়ি?
ফোর্ড, ভি, ৮। তোমায় আমি বলছি
জিমি আলোচনায় বাধা দিয়ে বলে ওঠে–তুমি তখন থেকে গুগুন্ করে কী বলছো বলতো?
লিউক নিজের মনে আবৃত্তি করছিলো–
Fiddle de dee, fiddle de dee.
The fly has married the humble bee.
জিমি জিজ্ঞেস করলো ওর দিকে তাকিয়ে–কী হয়েছে?
লিউক মাথা তুলে কেমন যেন এক অদ্ভূতদৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে তাকাতে জিমি একটু ঘাবড়ে গেল।কী হলো লিউক? তোমায় দেখে মনে হচ্ছে যেন ভূত দেখছো?
লিউক বললো–জিমি, শোন জিমি, তোমার কি মনে পড়ে আমার ইংল্যাণ্ডে আসার দিন একজন বৃদ্ধা মহিলার কথা তোমায় বলেছিলাম, যিনি আমার সঙ্গে একই ট্রেনে এসেছিলেন?
সেই যিনি চাপা পড়ে মারা গেলেন?
হ্যাঁ, সেই। শোন জিমি, এই ভদ্রমহিলা পরপর অনেকগুলো খুনের এক অদ্ভুত গল্প বলার জন্য স্টকল্যাণ্ড ইয়ার্ডে যাচ্ছিলেন।
তুমি তো বলোনি আমায় যে ভদ্রমহিলার মাথায় একটু ছিট ছিলো।–জিমি বললো।
আমার মনে হয়নি যে, উনি সে ধরনের ছিলেন।
ঠিক আছে বাবা, ঠিক আছে–বলল, বলে যাও।
বুঝলে, ভদ্রমহিলা পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ঘটনার সত্যাসত্য স্থির করেছিলেন। যারা খুন হয়েছে তাদের দুএকজনের নামও বলেছিলেন।
জিমি এবার উৎসাহিত হয়ে বলে–আচ্ছা?
লিউক বলে যায়–এই আম্বলবি নামটা আমার মনে ছিলো, কারণ ছেলেবেলায় পড়া বাচ্চাদের এই ছড়াটা আমার মনে ছিলো–
Fiddle de dee, fiddle de dee.
The fly has married the humble bee.
তুমি নিঃসন্দেহে মেধাবী–কিন্তু কী বলতে চাইছো?
আমায় সেই মহিলাটি বলেছিলেন যে, ডাঃ আম্বলবিই হচ্ছেন পরবর্তী শিকার। ভদ্রলোক নাকি খুবই সজ্জন এবং এই জন্যই সেই বৃদ্ধা আরও চিন্তিত ছিলেন।
তারপর?
এই দেখ কাগজটা।–লিউক খবরের কাগজটা দিতেই ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করে–আম্বলবি : ১৩ইজুন, নিজগৃহ, সানগেট, উইচউড আণ্ডার অ্যাশ, আকস্মিক মৃত্যু। জন এডওয়ার্ড আম্বলবি, এম. ডি., জেসমী রোজ আম্বলবির স্বামী। আগামী শুক্রবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া।
–দেখছ জিমি? এ থেকে তুমি কি বুঝলে?
অদ্ভুত কাণ্ড! কিন্তু আমার মনে হয় এটা একই সময়ে দুটো ঘটনা ঘটার এক আশ্চর্য নমুনা মাত্র।
এই ঘটনাটা কি শুধুই তাই?–লিউক আবার পায়চারি আরম্ভ করে।
লিউক হঠাৎ ঘুরে দাঁড়ায়। ধর সেই বিচিত্র ভদ্রমহিলার সব কথা যদি সত্যি হয়?
এ তুমি বাড়াবাড়ি করছে। এ তো পুলিসওয়ালার মতো কথা।
হয়তো ঠিকই বলেছো। একবারে যে পুলিশ হয়, সে চিরকালই পুলিশ থেকে যায়। আবার ক্রোম্বি যেভাবে দিনের পর দিন সবার নাকের ডগা দিয়ে একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছিলো, সেই ঘটনা যদি একবার অজ্ঞাত কুলশীলা বৃদ্ধা মহিলা টের পেয়ে প্রতিকারের জন্য কাউকে বলেন, তাহলে তার কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?