মাথা নাড়েন মিস ওয়েনফ্লিটজানেন তো, এসব জায়গায় যে-কোনো খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে!
অর্থাৎ, আপনি বলছেন যে, যখন আমি রাস্তা দিয়ে যাবো, লোকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলবে–ওই চললো টিকটিকি? ওতে বিশেষ কিছু ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না, বরঞ্চ এর ফলে আমি হয়তো আরও বেশি খবর পাবো।
আমি কিন্তু সে কথা ভাবছি না। আমার ভয়, সেই লোকটি টের পেয়ে যাবে। সে বুঝে ফেলবে যে আপনি ওর পেছনে লেগেছেন। –মিস ওয়েনফ্লিটের কথায় একটা দমচাপা আর্তি।
লিউক বলে–তা হয়তো বুঝতে পারবে।
সেটা যে কি ভয়ানক হবে বুঝতে পারছেন না? অত্যন্ত বিপজ্জনক।
লিউক বলে–আপনি বলতে চান, হত্যাকারী এবার আমার ওপর চড়াও হবে?
মজার কথা কি জানেন, এদিকটা আমি একেবারে ভেবে দেখিনি। আপনি হয়তো ঠিকই ভেবেছেন। দেখা যাক্, তাই যদি ঘটে তাতে আমার লাভ সবচেয়ে বেশি।
আপনি কি বুঝতে পারছেন না যে, সেই লোকটা–লোকটা প্রচণ্ড ধূর্ত আর শেয়ালের মতো সতর্ক?
লিউক বলে–আপনার কথাই হয়তো ঠিক।
মিস ওয়েনফ্লিট যেন আঁতাকে ওঠেন–সত্যি বলছি। আমার মোটেই ভালো লাগছে না। আমি খুব শঙ্কিত।
আপনি ভয় পাবেন না। আমি সাবধানে চলবো। কিন্তু ভেবে দেখুন, বিভিন্ন সম্ভাবনাগুলো গুছিয়ে আমি এমন এক জায়গায় এনেছি যে এখন আমার মোটামুটি একটা ধারণা হয়েছে যে, কে খুন করে থাকতে পারে…
চকিতে চোখ তুলে তাকান ভদ্রমহিলা।
লিউক প্রশ্ন করলো–মিস ওয়েনফ্লিট, ডাঃ টমাস আর মিঃ অ্যাবট–এই দুজনের মধ্যে কাকে আপনার খুনী বলে মনে হয়?
মিস ওয়েনফ্লিট হাঁফ ছাড়েন–ওঃ। আমি জানি না কিছু জানি না। বলেই আচমকা ঘুরে দাঁড়ান। লিউক বুঝতে পারে না।
লিউক বলে–আপনি কি বাড়ি যাচ্ছেন?
না, এই বইগুলো নিয়ে মিসেস আম্বলবির বাড়ি যাচ্ছিলাম। আপনার ম্যানরে ফেরবার পথেই বাড়িটা। চলুন, আরও কিছুটা পথ একসঙ্গেই যাওয়া যাবে।
সেই ভালো চলুন।
পেছন ফিরে লিউক বাড়িটার রাজকীয় গঠনের দিকে একবার তাকিয়ে বলে–আপনার বাবার আমলে বাড়িটা হয়তো আরও কত সুন্দর ছিলো।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন-আমরা সবাই মিলে এই বাড়িটায় খুব সুখে ছিলাম। অন্য আর পাঁচটা বাড়ির মতো এই বাড়িটাও যে ভাঙ্গা হয়নি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
সেটা কিন্তু সত্যিই দুঃখের হতো।
এবং, সত্যি কথা বলতে কি–এই নতুন বাড়িগুলো খুব একটা সুন্দর হয় না।
আমারও মনে হয় এই বাড়িগুলো বেশিদিন টিকবে না।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–তবে একথা সত্যি যে, আধুনিক বাড়িগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না, পুরানো বাড়ির দাওয়া বারান্দা এত বড় বড় হয় যে, শুধু মেঝে মুছতেই দম শেষ।
সম্মতি জানায় লিউক।
মিস ওয়েনফ্লিট ইতস্ততঃ করে বলেন–এমন সুন্দর বিকেল–আমার বড় ভালো লাগছে। চলুন, আপনার সঙ্গে বরং আর একটু এগিয়ে যাই। হাওয়াটা খুব ভালো লাগছে।
লিউক এ প্রস্তাবে সানন্দে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না, এমন বিকেলকে কী করে সুন্দর বলা যায়।
অবশ্য মিস ওয়েনফ্লিটের মধ্যে বেশ স্ফুর্তির ভাব। লিউকের সঙ্গে যেতে যেতে একনাগাড়ে গল্প করে যাচ্ছিলেন।
লর্ড হুইটফিল্ডের বাড়ির গেটে ঢুকতেই দুধারে দুটো কারুকার্য করা মনোরম থাম দিয়ে সাজানো। থাম দুটোর ওপরে দুটো বিশালাকায় গোলাপী পাথরের আনারস। এত কিছুর মধ্যে আনারস কেন?–এ প্রশ্নের সমাধান লিউক করতে পারেনি। তবে শুনেছে যে, লর্ড হুইটফিল্ডের মতে আনারসের মধ্যে একটা বিদগ্ধ আর উন্নত রুচির পরিচয় আছে।
ওরা গেটে ঢুকতেই শুনতে পেলো কেউ একজন রেগে প্রচণ্ড চিৎকার করছে। একটু এগোতেই দেখলো লর্ড হুইটফিল্ড একজনকে ধমকাচ্ছেন।
যাও, তোমার চাকরি গেল। শুনছো, তোমাকে আর আমি রাখবো না।
এইবারের মতো মাফ করে দিন হুজুর।
না, মাফ আমি করবো না। আমার গাড়ি নিয়ে বাইরে যাওয়া। তার ওপর গাড়িতে বসেই মদ খেয়ে ফুর্তি করা–হ্যাঁ, তুমি করেছে–অস্বীকার কোরো না। পই পই করে বলেছি, আমার জমিদারিতে তিনটে ব্যাপার কিছুতেই করা চলবে না–মাতলামো, দুশ্চরিত্রতা আর অবাধ্যপনা।
লোকটিও বললো-বুড়ো বেজন্মা–সব সময়ে এই কোরো না, সেই কোরো না! তোর কথা শুনে বমি আসে। তোকে চিনতে আমার বাকি আছে। আমার আর তোর মধ্যে ফারাক কোথায় রে?
লর্ড হুইটফিল্ড একেবারে ছাইয়ের মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেলেন।
এত স্পর্ধা তোমার? কোনো সাহসে তুমি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছো?
মোটর চালকটি রুখে এগিয়ে যায়। লিউক ততক্ষণে এগিয়ে আসে; গাড়ির চালককে ধমক দেয়-যাও এখান থেকে।
ড্রাইভারটি বলে–আমি লজ্জিত। কি করে যেন আমার মাথাটা হঠাৎ গরম হয়ে গেল।
লোকটি বিদায় হতেই লর্ড হুইটফিল্ড রাগে ফেটে পড়েন,–কী নির্লজ্জ অসভ্যতা! আমায়! শেষ পর্যন্ত আমার সঙ্গে এহেন বর্বরতা! ওই লোকটার শিগগিরই একটা কিছু ঘটবে। ছোটো বড় বোধ নেই–কাকে কী সম্মান দিতে হয় তা পর্যন্ত জানে না। বলতে বলতে চুপ করে যায়। এতক্ষণে একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা মিস ওয়েনফ্লিটের দিকে চোখ পড়ে। –হনরিয়া তুমি? এঃ, আমার ভাবতেই লজ্জা করছে যে, এমন একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা তোমার চোখে পড়লো।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–লোকটির তখন জ্ঞানগম্যি ছিলো না লর্ড হুইটফিল্ড।
ও পুরো মাত্রায় মাতাল ছিলো–একেবারে পাঁড় মাতাল।