লিউক চিন্তায় ছেদ টানে। কী সর্বনাশ! আমি একজনের মৃত্যু কামনা করছি?
***
ড্রাইভারের অসম আচরণ
সেভেন স্টারস্ বার-এ শেষ পর্যন্ত বেশ বিব্রত হয়েই লিউক ওর বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দেয়।
অগত্যা কাউন্টারের ওপাশের মেয়েটির মনোরঞ্জনে মন দিলো। এই মেয়েটি যে লুসি কার্টার এটা ও প্রথমেই অনুমান করেছিলো।
লিউক পরিষ্কার বুঝতে দেয় যে, ও মেয়েটির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। মিস কার্টারও খিলখিল করে হেসে বলে–আপনি কি সত্যিই আপনার সঙ্গে বেড়াতে যেতে বলছেন না ওটা শুধুই কথার কথা?
লিউক এক চুমুকে বাকি বিয়ারটুকু শেষ করে উঠে পড়ে। হাঁটতে হাঁটতে ও নদীর ওপর যেখানে পায়ে চলার জন্য সাঁকো আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়।
পেছন থেকে হঠাৎ কে যেন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে–এই সেই জায়গা। এখান থেকেই হ্যারি পড়ে গিয়েছিলো।
ও পেছন ফিরেই লোকটিকে চিনতে পারলো। ওই লোকটি কিছুক্ষণের আগেই ওর পাশে বসে মদ খাচ্ছিলো। সেই-ই এখন সানন্দে এগিয়ে এসেছে মৃত্যুদৃশ্যের বর্ণনায়।
ঐতো, ওখানে একেবারে কাদার মধ্যে মাথাটা পুরো ডুবে গিয়েছিলো।–লোকটি বললো।
ওখান থেকে পড়ে যাওয়াটা ভারী অদ্ভুত।–বললো লিউক।
লোকটি বলেও একেবারে পাঁড় মাতাল অবস্থায় ছিলো।
তা হয়তো ছিলো; কিন্তু ঐ অবস্থায় তো ও প্রতিদিন থাকতো।
সে আপনি যথার্থ বলেছেন–হ্যারি প্রায় সব সময়েই মদের ঘোরে থাকতো।
লিউক বললো–কেউ হয়তো ওকে ওখান থেকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিলো।
তা হবে। তবে এমন কাজ কে করতে যাবে? আমার তো মাথায় আসছে না!
মাতাল অবস্থায় ও যখন যাকে গালাগাল করতো, তাদের মধ্যেই হয়তো কেউ কেউ ওর শত্রু ছিলো।
তা সত্যি। কিন্তু সেজন্য ওকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে–তা মনে হয় না।
লিউক প্রসঙ্গ বদলে বলে যেভাবেই ঘটে থাক–ঘটনাটা কিন্তু খুব দুঃখের।
ওর বউ আর মেয়ে লুসি খুব একটা দুঃখিত বলে আমার মনে হয় না। বৃদ্ধ লোকটি বলে।
হ্যারি কার্টারকে নিয়ে আলোচনায় ছেদ টেনে ওরা পরস্পরকে বিদায় দেয়।
ওল্ড হলের দিকে লিউক পা বাড়ায়। বাড়ির সামনের দুটো ঘরে লাইব্রেরি; ঘর দুটো পেরিয়ে ও পেছনের দিকে যায়। একটা ঘরের দরজায় লেখা আছে-মিউজিয়াম। সেইখানে আছে রোম দেশের কিছু টাকা পয়সা, কিছু বাসনপত্র। এছাড়া আছে মেজর হর্টনের দেওয়া কিছু ভারতীয় দেব-দেবী–যার মধ্যে আছে বিকট দর্শন এক বুদ্ধমূর্তি। আর রয়েছে কিছু মিশরীয় সন্দেহজনক পুঁতির মালা।
লিউক আবার হলে ঢোকে। সেখানে কাউকে না দেখতে পেয়ে উপরে উঠে যায়। ওর মতে বেশির ভাগ ঘরগুলোই বাজে জবরজং লটবহরে ভর্তি। কোথাও কোথাও আবার রাখা আছে মান্ধাতার আমলের গল্প-উপন্যাসের বই।
জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় লিউক। টমি হয়তো জানলার ওপর দাঁড়িয়ে পরিষ্কার করছিলো। এমন সময় একজন কেউ এখানে এলো। সেই লোকটি কথায় কথায় একেবারে কাছে এগিয়ে এলো। অতঃপর-অতর্কিতে এক ধাক্কা।
ও নিজের মনে বলে–যে কেউ অতি সহজেই এসে কাজ হাসিল করে চলে যেতে পারে।
মিস ওয়েনফ্লিট বগলে একগাদা বই নিয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসেন। মুখে চোখে একটা পরিতৃপ্তি-মাখানো ব্যস্ততার ছাপ। লিউককে দেখে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার চোখ।
আরে, মিঃ ফিস্ উইলিয়াম্! আমাদের মিউজিয়ামটা দেখেছেন? যদিও দেখবার মতো বিশেষ কিছুই নেই; তবে লর্ড হুইটফিল্ড বলেছেন যে ভালো ভালো কিছু দর্শনীয় জিনিষ উনি এনে দেবেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, বলেছেন লণ্ডনের বিজ্ঞান-মন্দিরে যেমন আছে, তেমনি আধুনিক, কিছু কিছু দ্রষ্টব্য–এ্যারোপ্লেন, রেল-ইঞ্জিনের মডেল–এইসব আর কি।
এগুলো আনলে মিউজিয়ামের চেহারা অনেক ভালো হবে।
তা হবে। আমি একথা মানি না যে, মিউজিয়াম কেবলমাত্র অতীতের আস্তানা। আপনার কী মত?
তা হয়তো নয়।
ওসব ছাড়া আরও নানা রকম জিনিষপত্র আসবে–যেমন, খাবারদাবার এবং সেগুলোর। গুণগত তাৎপর্য; কোন খাদ্যে কী কী ভিটামিন ইত্যাদি। লর্ড হুইটফিল্ড উপযুক্ততার মতবাদে দারুণ বিশ্বাসী।
এই ধরনের কথাই উনি সেদিন বলেছিলেন।
আমার মতে বর্তমানই হলো আসল। লর্ড হুইটফিল্ড কিন্তু বলেছিলেন যে, একদিন উনি ওয়েলারম্যান গবেষণাগারে কী কী সব জীবাণু, জীবাণুতত্ত্ব এবং সে সব নিয়ে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা দেখে এসেছেন–যেটা আমার বুদ্ধিতে কুলালো না।
লিউক বললো,–লর্ড হুইটফিল্ডও হয়তো কিছুই বোঝেননি। ওঁর চেয়ে আপনার মাথা অনেক পরিষ্কার।
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–এ আপনি নেহাই আমার প্রশংসা করলেন মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম।
লিউক বললো–মিউজিয়ামটা একটু ঘুরে ঘুরে দেখে ওপরতলার সেই জানলাটা দেখতে গিয়েছিলাম।
অর্থাৎ যেখান থেকে টমিযেন শিউরে ওঠেন মিস ওয়েনফ্লিট-উঃ কী ভয়াবহ সেই ব্যাপার।
হ্যাঁ, ব্যাপারটা সুন্দর নয় মোটেই। অ্যামির মামী মিসেস চার্চের ওখানে ঘণ্টাখানেক ছিলাম। ভদ্রমহিলা মোটেই সুবিধের নয়।
আপনি ঠিকই ধরেছেন।
আমাকে বাধ্য হয়েই বেশ কিছুটা কড়া হয়ে কথাবার্তা বলতে হয়েছে। আমার ধারণা, মহিলা ধরেই নিয়েছিলো যে, আমি একজন পুলিশের কোনো কর্তাব্যক্তি।
মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম, ওকে সব বলে আপনি কি ঠিক কাজ করলেন?
সঠিক বুঝতে পারছি না। তবে, একদিন না একদিন আমাকে বলতেই হতো। আসল ঘটনা। জানবার জন্য সোজাসুজি প্রশ্ন আমাকে করতে হতোই।