এরপর কে? কার্টার? কার্টার মরলো কেন? মাঝরাতের পিশাচ সাধনার কথা তো ওর জানবার কথা নয়। এমন হতে পারে যে, ওর সুন্দরী তরুণী মেয়েটি এসব ভুতুড়ে ব্যাপারের সঙ্গে জড়িত ছিলো। এলসওয়ার্দি হয়তো মেয়েটির ওপর পাশবিক অত্যাচার করতো তাতে কার্টার খুব অসন্তুষ্ট হয়েছিলো তার জন্যই তাকে খুন করা হয়েছে।
এরপর টমি পিয়ার্স। টমিকে কেন এলসওয়ার্দি মারতে গেল? টমি সেই মাঝরাতের পৈশাচিক পুজো-পার্বণের ব্যাপারে ছিলো এবং সবাইকে বলে দেবে বলে ভয় দেখিয়েছিলো। হয়তো বা বলেছিলোও সুতরাং, টমির মুখ বন্ধ করার প্রয়োজন ছিলো।
ডাঃ আম্বলবিকে কেন খুন করলো? খুবই সহজ কারণে। ডাক্তার হিসেবে আম্বলবি ধরে ফেলেছিলো ওর মানসিক বৈকল্যের ব্যাপার। তার ফলেই আম্বলবির জীবনাবসান। এলসওয়ার্দি কী উপায়ে ডাঃ আম্বলবির রক্ত বিষিয়ে দিতে পারলো?
সবার শেষে মিস পিঙ্কারটন। বুধবার তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধের দিন। এলসওয়ার্দি সেদিন দোকান বন্ধ করে শহরে চলে গেল। ওর গাড়ি আছে না কি? যাকগে, এলসওয়ার্দি টের পেয়েছিলো যে, মিস পিঙ্কারটন ওকে সন্দেহ করেন সুতরাং তিনি হয়তো খুন হন।
মাথা নাড়তে নাড়তে লিউক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর আবার যুক্তির সাগরে ডুব দেয়।
অ্যাবট হতে পারে? ভদ্রলোক সুচতুর এবং আত্মবিশ্বাসী-খুনীরা সাধারণতঃ এমন হয়ে থাকে। আমি গিবস একবার এর সঙ্গে দেখা করেছিলো। কী কারণ হতে পারে? অ্যামি দেখা করতে চেয়েছিলো কেন? আইনের পরামর্শ নেবার ব্যাপারে? কে যেন বলেছিলো যে–জনৈক মহিলার কাছ থেকে একটা চিঠি এসেছিলো যেটা টমি দেখে ফেলেছিলো। সেই চিঠি কি অ্যামি লিখেছিলো? না কি মিসেস হর্টন? হয়তো অ্যামি সেই চিঠি হাত করেছিলো। এরা ছাড়া কে আর এমন মহিলা থাকতে পারে–যার চিঠি দৈবক্রমে টমি দেখে ফেলতে ভদ্রলোক রেগে অগ্নিশর্মা হয়েছিলেন? অ্যামি কেমন করে মারা গেল? হ্যাট পেইন্ট খেয়ে? কিন্তু টমি পিয়ার্সকে মারলো কেন?–স্বাভাবিক কারণ। চিঠিটা দেখে ফেলেছিলো বলে।
কিন্তু কার্টার? সম্ভবতঃ কার্টারের মেয়ের সঙ্গে একটা কিছু হয়েছিলো। অ্যাবটের পক্ষে সেই কেলেঙ্কারির কথা জানাজানি হওয়া ভয়ানক ক্ষতিকর হতো। কার্টারের যা মোটাবুদ্ধি আর উগ্র মেজাজও হয়তো অ্যাবটুকে শাসিয়েছিলো। অতএব কার্টারও খতম হলো।
এবার আম্বলবি। অ্যাবটের মতো ধূর্ত প্যাচালো উকিলের বিরুদ্ধে আম্বলবির মতো সহজ-সরল লোকের জেহাদ ঘোষণা। এর ফলে তার মৃত্যু।
এরপর পিঙ্কারটন। যে লোকটি ধরেই নিয়েছিলো যে, যে সব সন্দেহের অতীত তারই ওপর মিস পিঙ্কারটনের সন্দেহ হলো। মিস পিঙ্কারটন সেই ভয়াবহ গোপন কথাটি জেনে ফেললেন। কিন্তু তাহলেও হাতে কোনো প্রমাণ ছিলো না। স্বভাবতই তিনি প্রমাণ যোগাড়ের চেষ্টায় ছিলেন। অ্যাবটন লোকচরিত্র খুব ভালোই বোঝে। অতএব পিঙ্কারটন খুন হলেন।
চিন্তাসূত্রে লিউকের ছেদ পড়ে। মেজর হর্টনও যে একজন সার্থক খুনী হতে পারেন, সেই সম্ভাবনার সূত্র ধরতে ওর কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়।
হর্টন ওঁর স্ত্রীকে খুন করেছিলো। একথা ধরে নিয়েই হর্টনের প্রসঙ্গ আরম্ভ করা যাক। হর্টনের খুন করার পেছনে যথেষ্ট কারণ ছিলো এবং স্ত্রীর মৃত্যুতে ওঁর প্রচুর লাভও হয়েছিলো। সুনিপুণ হাতে স্ত্রীকে হত্যা করার জন্য স্ত্রীর প্রতি অস্বাভাবিক অনুরাগ খুব একটা প্রয়োজনীয় ছিলো না।
এরপর অ্যামি গিবস। সহজ ব্যাপার। অ্যামি যে সময়ে ও বাড়িতে কাজ করতো; কিছু একটা হয়তো দেখে ফেলেছিলো। মেজরের পক্ষে স্ত্রীর চায়ের সঙ্গে কোনো বিষ মিশিয়ে দেওয়া কিছু কঠিন কাজ ছিলো? প্রথম দিকে আমি হয়তো বুঝতে পারেনি; কিন্তু যখন বুঝেছে তখন হ্যাট পেইন্টের সাহায্যে ওকেও সরানো মেজরের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক।
এরপর কার্টার। অ্যামি হয়তো কার্টারকে কিছু বলেছিলো; অতএব, আরো একটা সাদাসিধে খুন।
এবার টমি পিয়ার্স। সম্ভবতঃ অ্যাবটের অফিসে ও যে চিঠিটা দেখেছিলো সেটা হয়তো মিসেস হর্টনের লেখা। উনি হয়তো লিখেছিলেন যে, ওর স্বামী তাঁকে বিষ খাইয়ে মারবার চেষ্টা করেছিল? অতএব মেজর বুঝতেই পেরেছিলেন টমি ওঁর পক্ষে বিপজ্জনক। তাই টমিকে খুন করা হলো।
এবারই হলো আসল এবং কঠিনতম সমস্যা। আম্বলবি। কী উদ্দেশ্য? দুরুহ ব্যাপার। মিসেস হর্টনকে প্রথমদিকে আম্বলবিই দেখেছিলেন। রোগের ধরন দেখে হয়তো কিছু একটা আঁচও করেছিলেন; ফলে হর্টন স্ত্রীকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে টমাসকে এনেছিলো। কিন্তু তাহলে একদিন বাদে আম্বলবির বিপদ এলো কেন? মুশকিল। তাছাড়া ওঁর মৃত্যুর পদ্ধতিও ঠিক ছকে মিলছে না। বিষিয়ে যাওয়া আঙ্গুলের সঙ্গে মেজরের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
লিউকের চিন্তার ভারে ভুরু-কপাল কুঁচকে আসে।
আমার মনে হয় না এ সব এলওয়ার্দির কাজ–ওদেরই মধ্যে কেউ একজন–কে জানে, আবার হতেও পারে, ওর কথাই সবার মনে আসে। মিস ওয়েনফ্লিট মূর্খ নন, কাকে সন্দেহ করেন ভদ্রমহিলা? অ্যাবটকে না টমাসকে? নিশ্চয়ই এই দুজনের একজনকে। যদি একটু কায়দা করে ওঁকে সরাসরি প্রশ্ন করি-বলুন এদের মধ্যে কে?–হয়তো উত্তরটা পেয়ে যেতে পারি।
কিন্তু মিস ওয়েনফ্লিটের ভুল হতে পারে। উনি যে সঠিক বলেছেন, সেকথা তো প্রমাণ করার উপায় নেই–যেমন মিস পিঙ্কারটন প্রমাণ করেছিলেন নিজের প্রাণের বিনিময়ে। আমার প্রয়োজন অকাট্য প্রমাণ। যদি আর একটা তেমন ঘটে মাত্র আর একজনের জীবন বলি হয় তাহলেই হয়তো বুঝতে পারতাম…