ওখানে মাইনেপওর ভালো ছিলো না, আর খুব একঘেঁয়েমি ছিলো।
ও অন্য কোথাও চলে যেতে পারতো না?
লণ্ডনের কথা বলছেন?
কিংবা, দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে?
মিসেস চার্চ বলেন–অ্যামি উইচউডের ওই সব কাণ্ডকারখানা ছেড়ে যেতে চাইতো না।
ওই সব বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?
জিম আর সেই খেলনা-পুতুলের দোকানের ভদ্দরলোকদের সঙ্গে ওর দহরম-মহরমের ব্যাপার।
মিসেস চার্চের কাছে জানার মতো আর বিশেষ কিছু নেই। কিন্তু তবুও শেষ বারের মতো আন্দাজে একটা ঢিল ছুঁড়লো।
বুঝতেই পারছেন যে, এই সমস্ত প্রশ্ন আপনাকে কেন করলাম। দুর্ঘটনার ফলে ও মারা গেছে–এটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না এবং তা যদি না হয়, তাহলে বুঝে নিন যে এটা কী হতে পারে।
মিসেস চার্চ বলেন–হত্যাকাণ্ড।
ঠিক। ধরে নিন যে, আপনার বোনঝি এক হত্যাকাণ্ডের ফলে মারা গিয়েছিলো–কাকে আপনি সন্দেহ করেন?
মিসেস চার্চ বললেন–আচ্ছা, পুলিশকে খুনীর হদিস বলতে পারলে পুরস্কার পাওয়া যাবে?
তা হয়তো পাওয়া যেতে পারে।
কিন্তু একেবারে ঠিক ঠিক বলতে পারবো না–তবে ঐ খেলনার দোকানের লোকটাকে আমার যেন কেমন মনে হয়। ক্যাস্টর মামলার কথা মনে করে দেখুন–সেই মেয়েটার খুনের খুঁটিনাটি সব প্রমাণ পেলো ক্যাস্টর সৈকতের সেই বাংলো বাড়িটায়, আর তা থেকেই অন্য মেয়েদের খুনের কথা সব বেরিয়ে পড়লো। এই এলসওয়ার্দিও হয়তো এমনই একজন।
আপনার তাই মনে হচ্ছে?
হতেও তো পারে; বলুন পারে কি না?
লিউক স্বীকার করে, হা হতেও পারে। তারপর বলেন–আচ্ছা ডারবী খেলার দিন বিকেলে এলসওয়ার্দি কোথাও বাইরে গিয়েছিলো? এটা কিন্তু খুব দরকারী।
চিন্তিতভাবে মিসেস চার্চ বলেন–ডারবীর দিনে?
হ্যাঁ, দিন পনেরো আগের এক বুধবার।
মিসেস চার্চ বলেন-তা বলতে পারবো না। তবে বুধবার এমনিতেই ওর দোকান সকাল সকাল বন্ধ হয়। সেদিন ও সাধারণতঃ শহরে যায়।
ওহো, আগেই বন্ধ হয়?
উঠে পড়ে লিউক। মানুষ হিসেবে মহিলাকে ওর মনে হয়েছে অত্যন্ত নিম্নশ্রেণীর। তবে বিচ্ছিন্নভাবে পরচর্চার মধ্য থেকে কিছু কিছু দরকারী খবর ও সংগ্রহ করতে পেরেছে।
নিজের মনে ও সমস্ত খবরগুলো পর্যালোচনা করে। ওই চারজনের নামই ঘুরে ফিরে মনে আসছে–টমাস, অ্যাবট, হর্টন আর এলসওয়ার্দি। মিস ওয়েনফ্লিটের কথাবার্তা থেকেও এই চারজনের যে-কোনো একজনকেই সন্দেহ হচ্ছে। কোনো মাংসওয়ালা, বা রুটিওয়ালা অথবা মোমবাতি বিক্রেতা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।
প্রথমেই দেখতে হবে যে, মিস ওয়েনফ্লিট-এর নাম বলতে অনিচ্ছার কী কারণ; ভদ্রমহিলার বিচার-বিবেচনা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ এবং মানবিক। ওঁর ধারণা যে মিস পিঙ্কারটন যাকে সন্দেহ করেন সেই লোকে কে তা ওঁর জানা; কিন্তু আবার বলছেন যে সেটা ওঁর বিশ্বাস মাত্র–সত্যি না-ও হতে পারে।
কাকে সন্দেহ করেন মিস ওয়েনফ্লিট?
মিস ওয়েনফ্লিটের ভয় যে, ওঁর দোষারোপের ফলে একজন নিরপরাধ লোকের ক্ষতি হতে পারে। এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় সেই লোকটি সমাজে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত এবং আশেপাশের সবাই তাকে সম্মান করে।
সুতরাং, এইদিক থেকে বিচার করলে আর এলসওয়ার্দিকে সন্দেহ করা চলে না। উনি উইচউডে নতুন এসেছেন; তাছাড়া, সুনামও নেই।
এবার আর কে কে আছে দেখা যাক। মেজর হর্টন তার স্ত্রীকে বিষ খাওয়াতে পারেন কিনা এই প্রসঙ্গ উঠতেই মিস ওয়েনফ্লিট বিরক্তির সঙ্গেই এই সম্ভাবনাটা উড়িয়ে দেন। মিসেস হর্টনের মৃত্যুর পরের খুনগুলো নিয়ে মিস ওয়েনফ্লিট যদি কোনোরকম সন্দেহ করতেন হর্টনকে, তাহলে বিষ প্রয়োগের প্রশ্নে এতটা নিঃসন্দেহ হতে পারতেন না।
এবার বাকি থাকছেন ডাঃ টমাস আর মিঃ অ্যাবট। পেশার দিক থেকে দুজনেই স্বাধীন এবং পদমর্যাদাসম্পন্ন। দুজনেই মোটামুটি জনপ্রিয় এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে সুপরিচিত। এই সব তথ্যের দিক থেকে বিচার করলে দুজনকেই সমানভাবে সন্দেহ করা চলে।
মিস পিঙ্কারটন নিশ্চিতভাবে জানতেন সেই লোকটিকে। তার প্রথম প্রমাণ ওঁর নিজের মৃত্যু এবং দ্বিতীয় প্রমাণ ডাঃ আম্বলবির মৃত্যু। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে যে, মিস পিঙ্কারটন সেই লোকটির নাম মিস ওয়েনফ্লিটের কাছে বলেননি।
স্বগতোক্তি করে লিউক–ধরে নেওয়া যাক যে, এলসওয়ার্দিই খুনী, এবং এটা আমার বেশ ভালো করেই জানা। এবার আসা যাক, একের পর এক যারা খুন হয়েছে : এক নম্বর–মিসেস হর্টন। মিসেস হর্টনকে খুন করার পেছনে এলসওয়ার্দির কী উদ্দেশ্য চরিতার্থ হলো বোঝ কঠিন। মিসেস হর্টন এলসওয়ার্দির কাছ থেকে কি সব তুকতা ওষুধ নিয়েছিলো। সেই ওষুধের সঙ্গে খুব সহজেই কিছু আর্সেনিক মিশিয়ে দেওয়া মোটেই কঠিন ছিলো না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে কেন?
এবার আসা যাক অ্যামি গিবসের প্রসঙ্গে। এলওয়ার্দির কী অভিসন্ধি থাকতে পারে অ্যামিকে খুন করার পেছনে? সহজেই যে কারণটা মনে আসে, তা হলো এই যে, আমি কোনো বিষয়ে আশাহত হয়েছিলো এবং তার জন্য ভয় দেখিয়েছিলো। হয়তো বা লর্ড হুইটফিল্ড উইচউডে বেশ প্রভাবশালী এবং ব্রিজেটের মতে তিনি একজন যথার্থ চরিত্রবান লোক। এলওয়ার্দির সেই সব অসামাজিক বীভৎস কাণ্ডকারখানার কথা জানাজানি হয়ে গেলে লর্ড হুইটফিল্ড ছেড়ে দিতেন না। অতএব, সরাও অ্যামিকে। যেভাবে খুন করা হয়েছে, তাতে মনে হয় না যে স্রেফ খুন করার আনন্দে খুন করা হয়েছে।