উনি বললেন–লর্ড হুইটফিল্ডের সঙ্গে বিয়েতে ও সুখী হোক–বয়সের পার্থক্যটা বড়ই বেশি।
হুঁ, তা খানিকটা বেশিই।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মিস ওয়েনফ্লিট–এক সময়ে ওর সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।
আশ্চর্য হয়ে লিউক ওঁর দিকে তাকায়।
বহুকাল আগের কথা, তখন ও সবেমাত্র ওপরের দিকে উঠেছে। ওর লেখাপড়ায় আমিই সাহায্য করেছিলাম। ওর মধ্যে যে বড় হবার একটা অদম্য স্পৃহা ছিলো, তা নিয়ে আমার গর্বের শেষ ছিলো না। তারপর বললো–অবশ্য আমার বাড়ির লোকেরাই ওর সম্পর্কে বদনাম রটালো। সেই যুগে শ্রেণী বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট ছিলো। ওর উন্নতির দিকে আমি সব সময়ে সচেতন ছিলাম। কিন্তু আমার নিজের লোকেরাই ভুলটা করলো।
লিউকের মনে পড়লো সেও মিস ওয়েনফ্লিটকে একেবারে বৃদ্ধের পর্যায়ে ভেবেছিলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারলো যে ভদ্রমহিলার বয়স হয়তো ষাটের নিচে।
মরুকগে, আমার কী?–ও নিয়ে চিন্তা করা আমার কী দরকার? তার চেয়ে যে কাজে এসেছি–তাই-ই করি।
***
লিউকের মনোসংযোগ
অ্যামি গিবসের মামী মিসেস চার্চ একজন নিতান্তই অপ্রীতিকর মহিলা। টিকালো নাক, অস্থির তাকানো আর ঘনঘনে বাচনভঙ্গী-এই সব মিলে মহিলাকে দেখেই অস্বস্তিকর মনে হলো লিউকের।
আমি যে প্রশ্নগুলো করবো, আপনার কাজ হবে তার যতদূর সম্ভব সঠিক উত্তর দেওয়া। যদি কিছু গোপন করেন, তার ফলাফল খুব খারাপ হবে।
আজ্ঞে, বুঝতে পেরেছি। আমি যতটুকু জানি তার সবটাই আপনাকে বলবো। আমি এর আগে কক্ষনো পুলিশী ঝামেলায় পড়িনি।
আমি আপনার বোনঝি-র সম্পর্কে সব কথা জানতে চাই–কে কে ওর বন্ধু ছিলো, কী পরিমাণ টাকা ছিলো, সাধারণত যে সমস্ত কথাবার্তা বলতে তার বাইরে কিছু বলেছিলো কি না। প্রথমেই শুরু করা যাক, কারা ওর বন্ধু ছিলো।
মিসেস চার্চ বললেন–আপনি কি ওর পুরুষ বন্ধুদের কথা বলছেন?
ওর কি মেয়ে বন্ধু ছিলো?
আজ্ঞে বলতে গেলে না থাকারই মতো। আমি তাদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ রাখতো না। তবে ওই গ্যারাজে জিম হারভে নামে একটি ছেলে আছে, তার সঙ্গেই ওর ব্যাপার-স্যাপার চলছিলো। ছেলেটি কিন্তু বেশ ভালো।
বাধা দেয় লিউক–আর কোনো বন্ধু ছিলো?
আবার সেই নোংরা ধূর্ত চাহনি–ওহো, আপনি সেই ভদ্রলোকের কথা বলছেন, যার খেলনা, পুতুলের দোকান আছে? আমার ওই লোকটাকে মোটেই ভালো লাগতো না-সোজা কথা। নিজের ইজ্জত নিজের হাতে। যেখানে-সেখানে চুকচ্ছুক করা আমি পছন্দ করি না–কিন্তু বলবো কাকে? আজকালকার মেয়েগুলো কি ভালো কথায় কান দেয়? যা মনে হয় তাই-ই করে। কিন্তু পরে পস্তায়।
অ্যামি অনুতাপ করতো?
না, তা মনে হয় করতো না।
মৃত্যুর দিনে আমি গিয়েছিলো ডাঃ টমাসের কাছে–এই সমস্ত কারণেই কি ওখানে গিয়েছিলো?
না না, আপনি যা ভাবছেন তেমন কোনো রোগের জন্য ও ডাক্তারের কাছে যায়নি, এ আমি সঠিক করে বলতে পারি। ও কদিন সর্দিকাশিতে ভুগছিলো, সেই জন্যেই গিয়েছিলো।
আপনার কথাই মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওর আর এলসওয়ার্দির মধ্যেকার ব্যাপার কতদূর এগিয়েছিলো?
মিসেস চার্চ বলেন–সে কথা আমি বলতে পারবো না–অ্যামি ওর গোপন ব্যাপার আমায় কখনো বলতো না।
লিউক বলে–কিন্তু ওরা তো অনেকটাই এগিয়েছিলো?
এই ভদ্দর লোককে এখানকার কেউ ভালো বলতো না। শহর থেকে বন্ধু-বান্ধব এনে কি সমস্ত করতো-টরতো সবাই মিলে ওই ডাইনী মাঠে।
অ্যামি যেতো?
একবার গিয়েছিলো বলে জানি। সারারাত ওখানে ছিলো। লর্ড হুইটফিল্ডের কাছে ধরাও পড়েছিলো। লর্ড খুব বকেছিলেন, আমিও মুখে মুখে জবাব দিয়েছিলো, তাতেই তো ওর চাকরিটা গেল।
ও যাঁদের বাড়ি কাজ করতো, তাদের সম্পর্কে আপনার সঙ্গে কোনো গল্পগুজব করতো?
খুব একটা করতো না।
মেজর হর্টনের বাড়িতেও কিছুদিন কাজ করেছে–না?
তা–প্রায় বছর খানেক হবে।
ছাড়লো কেন?
ভালো মাইনে পেয়ে গেলো। সেই সময়ে ম্যানরে কাজ খালি ছিলো–ওঁদের মাইনে অনেক ভালো ছিলো।
মাথা নাড়ে লিউক।–আচ্ছা, মিসেস হর্টনের মৃত্যুর সময় ওতত ওই বাড়িতেই কাজ করছিলো–তাই না?
আজ্ঞে হ্যাঁ।
উকিল মিঃ অ্যাবট-তাঁর বাড়িতেও ও কাজ করছে?
না, মিঃ অ্যাবটের বাড়িতে একজন লোক আর তার বউ–এই দুজনে মিলে কাজ করতো। তবে, মিঃ অ্যাবটের বাড়িতে ও একবার গিয়েছিলো–কেন গিয়েছিলো বলতে পারবো না।
এ অঞ্চলের আর কোনো লোকের কাছে ও যাতায়াত করতো?
যা বলেছি তার বাইরে আর কিছু বলতে পারবো না।
মিসেস চার্চ, মনে রাখবেন আমি সত্যি কথা শুনতে চাই।
কিন্তু সেই লোকটা মোটেই ভদ্দরলোক ছিলেন না; আমিও ওকে বলেছিলাম যে, আর নিজেকে অত নিচে নামাস না।–কিন্তু শুনলে তো
মিসেস চার্চ, হেঁয়ালি রেখে স্পষ্ট করে বলবেন?
আপনি সেভেন স্টাপ-এর নাম শুনেছেন? মোটেই ভালো বাড়ি নয় ওটা।–ওই বাড়ির মালিক হলে গিয়ে হ্যারি কার্টার–একটা আস্ত ছোটোলোক; সব সময়ে মদে চুর হয়ে থাকতো।
সেও অ্যামির বন্ধু ছিলো?
দুএকদিন ওর সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিলো।
লিউক অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়–টমি পিয়ার্স নামে একটা ছোটো ছেলেকে চিনতেন?
কাকে? মিসেস পিয়ার্সের ছেলেকে? খু-উ-ব ভালো করে চিনতাম–হাড়বজ্জাত ছিলো।
ওর সঙ্গে কি অ্যামির ঘন ঘন দেখাশুনো হতো।
না না, অ্যামির সঙ্গে বজ্জাতি করতে গেলে ওর কান আর আস্ত থাকতো না।
মিস ওয়েনফ্লিটের কাছে ও খুশী মনে ছিলো?