মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–আমার মনে হয় না। ওর কাছে বেশি টাকা থাকলে আমি অন্ততঃ জানতে পারতাম।
মৃত্যুর আগেই কোনো মোটা খরচপত্র করেছিলো কি না জানেন?
যতদূর জানি–করেনি।
তাহলে তো আর ব্ল্যাকমেলতত্ত্ব দাঁড়াচ্ছে না। অবশ্য আরও একটা সূত্র আছে–মেয়েটি হয়তো বিশেষ কোনো ধরনের ঘটনা জানতো।
কোনো ধরনের ঘটনা?
এমন কিছু, যা উইচউডের কোনো ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে অত্যন্ত মারাত্মক। ধরুন, এখানকার বেশ কয়েকটা বাড়িতে মেয়েটি কাজ করত; কাজ করতে গিয়ে সেই বাড়ির কারো একজন সম্পর্কে ও এমন সব তথ্য জেনে ফেললো যা সেই লোকটির আয় উপার্জনের ক্ষতি করতে পারে। ধরুন, মিঃ অ্যাবটের মতো কেউ একজন।
মিঃ অ্যাবট?
লিউক আবার বলে–অথবা ধরুন, ডাঃ টমাসের কোনো গাফিলতি বা ডাক্তার হিসেবে কোনো অপরাধমূলক কাজে প্রশ্রয়দান?
কিন্তু তা কি–মিস ওয়েনফ্লিট বলতে গিয়ে থেমে যান।
লিউক বলে যায়–আপনিই বলেছেন যে অ্যামি গিবস্ ঝি-এর কাজ করতো এবং মিসেস হর্টন যখন মারা যান, তখন ও ওই বাড়িতেই কাজ করতো।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–আপনি কী বলছেন মিঃ ফিস উইলিয়াম? এর মধ্যে আবার হর্টনদের এনে টানাটানি করছেন কেন? বছর খানেকেরও বেশি হয়ে গেল মিসেস হর্টন মারা গেছেন।
সেই কথাই তো বলছি।
অ্যামি গিবস্ তখন ও বাড়িতেই কাজ করতো।
বুঝলাম। কিন্তু হর্টনরা এর মধ্যে আসে কী করে?
মিসেস হর্টন তো মারাত্মক ধরনের গ্যাস্ট্রাইটিসে মারা গেছেন, তাই না?
হ্যাঁ।
ওর মৃত্যু কি আকস্মিক হয়েছিলো?
আমার কাছে তাই মনে হয়েছিলো। ও বেশ ভালো হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু একেবারেই হঠাৎ একদিন রোগটা প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেল এবং তাতেই মারা গেল।
ডাঃ টমাসও কি খুব আশ্চর্য হয়েছিলেন?
কার বেশ কয়েকটা, এমন সব তথ্য জেনে কেউ একজন
সঠিক জানি না–হয়তো হয়েছিলো!
কিন্তু আপনার নিজের কাছে কি এই মৃত্যুটা অদ্ভুত মনে হয়নি?
তা হয়েছে। ওর চোখেমুখে মৃত্যুর কোনো চিহ্নই ছিলো না–বরঞ্চ অনেকটা সুস্থই মনে হয়েছিলো।
এই অসুস্থতা সম্পর্কে ভদ্রমহিলা কি কিছু বলতেন?
বলতেন যে নার্সরা ওকে বিষ খাওয়াচ্ছে।
আপনি নিশ্চয়ই এসব কথার কোনো গুরুত্বই দেননি?
না, দিইনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম যে, এই মনোভাব অসুস্থতার ফল।
লিউক বলে–ভদ্রমহিলা কি ওর স্বামীকে সন্দেহ করতেন?
না না, স্বামীর ওপর কোনো সন্দেহ ওর ছিলো না।
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–আপনার কি তাই মনে হয়?
দুনিয়ার বহু স্বামীরাই তাদের বউকে খুন করে পার পেয়েছে। তাছাড়া, শুনেছি যে স্ত্রীর মৃত্যুতে ভদ্রলোক অনেক টাকাও পেয়েছেন।
তা পেয়েছেন।
এ থেকে আপনার কী মনে হয় মিস ওয়েনটি?
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মেজর হন তাঁর স্ত্রীর প্রতি একান্ত অনুরক্ত ছিলেন; স্বপ্নেও এসব বাজে চিন্তাও ওঁর মাথায় আসেনি।
লিউক বললো-বুঝলাম। আপনি যখন বলছেন তখন হয়তো এ কথাই ঠিক। তেমন কিছু হলে নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়তো।
আচ্ছা, অ্যামি গিবস্ সম্পর্কে পিঙ্কারটন কী ভাবতেন?
বলা খুব কঠিন। ল্যাভিনিয়ার একটা অদ্ভুত ধারণা ছিলো।
কী ধারণা?
ও মনে করতো যে উইচউডে কিছু একটা বিচিত্র ব্যাপার ঘটছিলো।
আচ্ছা, উনি কি ভাবতেন যে টমি পিয়ার্সকে কেউ জানলা থেকে ফেলে দিয়েছিলো?
একথা আপনি কী করে জানলেন মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম?
লিউক বলে–যেদিন উনি খুন হয়েছিলেন, সেদিন আমরা একই সঙ্গে লণ্ডনে যাচ্ছিলাম।
ও আপনাকে ঠিক কী বলেছিলো?
উনি বলেছিলেন যে উইচউডে বড্ড বেশি পরিমাণ লোক মারা যাচ্ছিলো। কয়েকটা নামও উনি করেছিলেন–অ্যামি গিবস, টমি পিয়ার্স এবং কার্টারের নাম। তাছাড়া, উনি ডাঃ আম্বলবির নাম করে বলেছিলেন যে, তারও দিন অতি সীমিত। এমন একজন লোক যার চোখে একটা বিচিত্র দৃষ্টি দেখলেই বোঝা যায় যে, সেই-ই খুনী। সেই লোকটি যখন আম্বলবির সঙ্গে কথা বলেছিলো, তখন তার চোখের সেই দৃষ্টি উনি দেখতে পেয়েছিলেন এবং তার সঙ্গে কথা বলেছিলো যে, আম্বলবির মৃত্যু আসন্ন।
মিস ওয়েনফ্লিট বললেন–কী সর্বনাশ! এবং তার পরেই সে মারা গেল।
প্রশ্ন করে লিউক–কে সেই লোক? বলুন মিস ওয়েনফ্লিট। আপনি নিশ্চয়ই জানেন–বলুন সে কে?
আমি জানি না–ও আমায় বলেনি।
কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারেন, কে হতে পারে? ওঁর মনে কার কথা ছিলো সে সম্পর্কে অন্ততঃ একটা ধারণা আপনার আছে।
মাথা নিচু করেন মিস ওয়েনফ্লিট।
এবার তাহলে বলুন।-জোর দেয় লিউক।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–কী করে আপনি আমাকে এমন একটা কাজ করতে বলছেন–যা অত্যন্ত অন্যায়। না জেনে শুধুমাত্র অনুমানের ওপর ভিত্তি করে কাউকে দোষারোপ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
হেরে গিয়েও কিন্তু লিউক মাথা ঠিক রাখতে জানে। ও যে আবার এই ব্যাপার নিয়ে এখানে আসবে–ওর আচরণের মধ্যে তেমন আভাস দিয়ে বলে–
আপনার বিবেক যা নির্দেশ দেয়, সেই অনুযায়ী আপনি চলুন। যাই হোক, আমাকে আপনি প্রচুর সাহায্য করেছেন–ধন্যবাদ।
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন-আমাকে দিয়ে আর যদি কোনো উপকার হয়, আনায়াসে বলবেন।
নিশ্চয়ই বলবো। আমাদের যা যা কথাবার্তা হলো, কাউকে বলবেন না।
না না, এর একটি কথাও কেউ জানতে পারবে না।
একথার অন্যথা যে হবে না লিউক জানে। আবার ভদ্রমহিলা বললেন–ব্রিজেটকে আমার ভালোবাসা জানাবেন। মেয়েটি ভারী সুন্দর আর বুদ্ধিও রাখে প্রচুর। ও সুখী হোক।