আচ্ছা! আপনাকে তাহলে নিশ্চয়ই ব্রিজেট কনওয়ে আনিয়েছে?
মিস ওয়েনফ্লিট বলেন–ব্রিজেট অত্যন্ত দক্ষ মেয়ে আর খুব উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন। ওর জায়গায় যদি আমি হতাম, তাহলে কিন্তু এমন একটা সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারতাম না। কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে ঘটনাগুলো না জানা থাকলে কর্মপন্থা ঠিক করা এক দুরূহ কাজ।
কিন্তু আপনার তো জানা আছে, আছে না?
কী বলছেন মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম? আমি কী করে জানবো? বিশেষ করে আমার মত যারা একা থাকে এবং যেখানে কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার পর্যন্ত সুযোগ নেই।
তা সত্ত্বেও লিউক প্রশ্ন করে–কিন্তু আপনার মন নিশ্চয়ই জানে কী ঘটেছে?
এবারও মিস ওয়েনফ্লিট অসম্মতি জানিয়ে প্রশ্ন করলো-আমরা কি পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সওয়াল জবাব করছি?
লিউক হেসে বলে-বুঝতে পারলাম। আপনি চান যে, আপনার কাছে সোজাসুজি সব ব্যাপারটা রাখি। বেশ, তাই হবে। আচ্ছা, আপনি কি মনে করেন অ্যামি গি খুন হয়েছিলো?
ওঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আমি মোটেই নিঃসন্দেহ নই–সব ব্যাপারটার ভেতরে একটা গভীর সন্দেহের কারণ আছে বলেই আমি মনে করি।
কিন্তু আপনি এ কথা বলবেন যে ও স্বাভাবিক কারণে মারা গিয়েছিলো?
না, তা বলবো না।
তাহলে কি মনে করেন যে ওর মৃত্যুর কারণ কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা?
না, তাও আমার মনে হয় না। নানা রকমের
লিউক প্রশ্ন করে–নিশ্চয়ই আত্মহত্যা বলে মনে করেন না?
অসম্ভব।
তাহলে? আপনি ভালো করেই জানেন যে এটা খুন?
হ্যাঁ, আমি ঠিক তাই মনে করি।
বেশ। এবার তাহলে কার্যকারণ বিশ্লেষণ করা যাক।
কিন্তু আমার এই ধারণার পেছনে কোনো প্রমাণ আমি দিতে পারবো না–সবটাই আমার অনুমান মাত্র।
তাতে কিছু এসে যায় না। আমরা শুধুই আলোচনা করছি মাত্র এবং দুজনের কে কী। ভাবছি, কী সন্দেহ করছি–এটা পরস্পরকে বলছি।
মিস ওয়েনফ্লিট সম্মতি জানান।
লিউক প্রশ্ন করে-কে খুন করতে চাইতে পারে?
ও যে ছেলেটিকে ভালোবাসতো, তার সঙ্গে ওর ঝগড়া হয়েছিলো গ্যারাজে বসে। জিম হারভে ছেলেটির নাম-অত্যন্ত ভালো ছেলে। শুনেছি কোনো কোনো ছেলে তার বান্ধবীর ওপর পাশবিক অত্যাচার করে কিন্তু জিম সেইরকম ছিলো না। তা ছাড়া যেভাবে খুন করা হয়েছে জিম হলে সেভাবে করতোও না। পাইপ বেয়ে জানলায় উঠে ঘরের ভেতর ঢুকে কাশির ওষুধের বোতল সরিয়ে তার জায়গায় বিষভরা শিশি রেখে দেওয়া। মানে, ঠিক এমন
লিউক বললো–হঠাৎ রেগে যাওয়া কোনো প্রেমিকের কাজ বলে মনে হয় না, তাই না? ঠিকই বলেছেন। অ্যামিকে খুন করেছে এমন একজন, যে ওকে পথের কাঁটা ভেবে একেবারে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছে এবং এমন ভাবে ভেবেচিন্তে সরিয়েছে, যাতে মনে হতে পারে যে, মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনা। আমাদের সমস্যা এবং প্রশ্ন–কে সেই একজন?
না, সত্যিই তেমন কারও কথা আমি ভাবতেই পারছি না।
ভালো করে ভেবে দেখেছেন?
না না, বিশ্বাস করুন—
ও অন্য প্রশ্ন করে–কোনো অভিসন্ধি আছে বলে আপনার মনে হয়?
কী অভিসন্ধি থাকতে পারে? আমি তো বুঝতে পারছি না।
ও কি উইচউডের সর্বত্র ঘোরাঘুরি করতো?
লর্ড হুইটফিল্ডের ওখানে কাজ করার আগে ও বছর খানেক হর্টনদের বাড়িতে ছিলো।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কেউ একজন ওকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিলো এবং যতটুকু আমরা জেনেছি, তার থেকে অনুমান করা যায় যে,–প্রথমতঃ সেই কেউ একজন হচ্ছে পুরুষ মানুষ, তার দৃষ্টিভঙ্গী মোটামুটি সেকেলে। দ্বিতীয়তঃ লোকটির শরীর সুগঠিত এবং শক্তিশালী–তার প্রমাণ মেলে দেওয়াল বেয়ে বাড়ির বাড়ির ছাদে উঠে মেয়েটির ঘরের জানলার মধ্য দিয়ে ঢোকার মধ্যে। আমার বক্তব্যের সঙ্গে আপনি একমত?
পুরোপুরি–মিস ওয়েনফ্লিট বলেন।
আচ্ছা, আমি নিজে যদি ওই জানলায় উঠে দেখি, আপনি কিছু মনে করবেন না তো?
মনে করবো কেন? এতো খুব ভালো কথা।
লিউককে সঙ্গে নিয়ে একটা ছোট্ট দরজা দিয়ে বার বাড়ির উঠোনে গিয়ে উপস্থিত হলেন। লিউক অল্পায়াসেই ছাদে উঠে গেল এবং ওখানে দাঁড়িয়ে খানিকটা চেষ্টা করে জানলার শার্সি খুলে তার ভেতর দিয়ে হল ঘরের ভিতরে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পরেই মিস ওয়েনফ্লিটের কাছে ফিরে এলো।
যতটা কঠিন বলে মনে হয়েছিলো ততটা কঠিন নয়, হাতে পায়ে একটু জোর থাকলেই হলো। আচ্ছা জানলার বাইরে কোনো রকম চিহ্ন বা ছাপ পাওয়া যায়নি?
মিঃ ওয়েনফ্লিট বললেন–মনে তো হয় না। তাছাড়া, পুলিশের লোকও তো উঠেছিলো ওখানে।
ওকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে এলেন মিস ওয়েনফ্লিট।
লিউক জিজ্ঞেস করে–অ্যামি গিবসের ঘুম খুব গাঢ় ছিলো কিনা আপনি জানেন?
মিস ওয়েনইফ্লিট বলেন–সকালে ওকে ঘুম থেকে জাগানো এক দুরূহ ব্যাপার ছিলো। কোনো কোনোদিন বার বার ওর দরজায় টোকা দিয়ে ওর সাড়া পেতাম না; তবে কথা হচ্ছে যে, যে শুনেও শুনতে চায় না–তাকে আর কে শোনাতে পারে বলুন?
সে তো ঠিকই। আচ্ছা, ওই লোকটি–এলওয়ার্দি–ওর সঙ্গে কি এই মেয়েটির কোনো ব্যাপার-স্যাপার কিছু ছিলো?-প্রশ্নটা করেই সঙ্গে সঙ্গে জুড়ে দেয়–আমি কিন্তু স্রেফ আপনার মতামত জানতে চাইছি।
হা ছিলো।
লিউক মাথা নাড়ে–আপনার কি মনে হয় এলসওয়ার্দিকে ও ব্ল্যাকমেল করতো?
এবারও সেই একই কথা; অর্থাৎ আমার মত যদি চেয়ে থাকেন তাহলে বলবো, ওর পক্ষে তা সম্ভব।
আপনি কি জানেন, মারা যাবার সময় ওর কাছে অনেক টাকাকড়ি ছিলো কিনা?