কখনো কখনো এ কথাও মনে হতো।
এবং, আমার মনে হয় আপনি ওঁর অত্যন্ত প্রিয়জন ছিলেন–তাই আপনাকে হারাবার ভয়ও ছিল।
ঠিক তা নয়, বাবা আর জিওফ্রে–ওঁরা দুজনেই দুজনের একেবারে বিপরীত এবং কখনো কখনো ওঁদের মধ্যে প্রচণ্ড মতবৈষম্য দেখা দিতো। জিওফ্রে এই ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবেই নিতো কিন্তু ওর ওপর বাবার অনমনীয় মনোভাবের জন্য ও যেন কেমন মনমরা হয়ে থাকতো। আমার বাবা কখনো ওকে বুঝতেই চেষ্টা করেননি।
আচ্ছা, এমন কিছু নেই তো যার ফলে হয়তো আপনার বাবা ওঁকে সঠিক কারণেই অপছন্দ করতেন? যেমন ধরুন, জিওফ্রের কি অতিরিক্ত পরিমাণে মদের নেশা বা রেসখেলা–এসব ছিলো?
না না, জিওফ্রের এসব দোষ কিছুই নেই। রেস খেলার ও কিছুই বোঝে না। আমার ধারণা ডারবীতে কোনো ঘোড়াটা প্রথম হলো তাও জানে না।
আশ্চর্য! আমি কিন্তু ডারবী খেলার দিন এপসমে ডাঃ টমাসকে পরিষ্কার দেখেছি।
রোজ বললো–আপনার মনে হলো আপনি জিওফ্রেকে দেখেছেন? কিন্তু তা একেবারেই অসম্ভব। প্রথমতঃ ওর যাবার উপায়ই ছিলো না কারণ ও সেদিন প্রায় সারাদিনই অ্যাশওয়াল্ড, গ্রামে ছিলো একটা ডেলিভারী কেস নিয়ে।
কী অদ্ভুত স্মরণশক্তি আপনার।
হেসে বলে রোজ-আমার বিশেষ করে মনে থাকার কারণ, ওই বাচ্চাটার ডাকনাম রাখা হয়েছে জুজুব।
ঘাড় নাড়ে লিউক।
তাছাড়া, রেস খেলা জিওফ্রের দারুণ একঘেয়ে লাগে, ও একদম সহ্য করতে পারে না। যাগে ওসব আলোচনা–আমাদের বাড়ি আসবেন না? মা কিন্তু আপনাকে দেখলে খুশী হবেন।
কী করে জানলেন?
ওকে নিয়ে রোজ একটা ঘরে ঢুকলো। একজন ভদ্রমহিলা একটা চেয়ারে জবুথবু হয়ে বসে আছেন।
মা, ইনিই মিঃ ফিৎস উইলিয়াম।
মিসেস আম্বলবি দাঁড়িয়ে নমকার করলেন। রোজ ঘরের বাইরে চলে গেল।
আপনি আসাতে খুব ভালো লাগছে মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম। রোজ বলেছিলো যে, আপনার কোনো কোনো বন্ধু না কি আমার স্বামীকে চিনতেন।
আজ্ঞে হ্যাঁ, মিসেস আম্বলবি।
আপনার সঙ্গে আমার স্বামীর দেখা হলো না–যদি হতো, দেখতেন কী সুন্দর চরিত্রের মানুষ। ডাক্তার হিসেবে ছিলেন অতি মহৎ। যে সমস্ত রোগীদের জন্য ডাক্তাররা জবাব দিতেন, তাদের পর্যন্ত সারিয়ে তুলেছেন স্রেফ ব্যক্তিত্বের গুণে।
লিউক বলে–আমি ওঁর সম্পর্কে অনেক গল্পও শুনেছি। সবাই ওঁকে খুব শ্রদ্ধা করতো।
আপনি কি বিশ্বাস করেন মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম যে, এই দুনিয়াটা একটা শয়তানের কারখানা?
একথা শুনতে লিউক প্রস্তুত ছিলো না। ওর কাছে কথাটা একটু আচমকাই মনে হলো। হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে কথাটা সত্যি।
না, আমার প্রশ্ন–আপনি নিজে জানেন কি না? আপনার চারিদিকে সর্বদা শয়তান ঘুরে বেড়াচ্ছে–আপনি সে সম্পর্কে সচেতন? এবং, এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত আছেন? আমার স্বামী জানতেন এবং তিনি সর্বদা ন্যায় বিধানের জন্য লড়তেন।
আন্তরিকতার সঙ্গে লিউক বলে–আমি জানি।
তিনি জানতেন যে আমাদের এই জায়গায় কি ঘৃণ্য একটা শয়তানী চক্র ছিলো।–বলতে বলতে মিসেস আম্বাব কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তিনি বললেন–কিছু মনে করবেন না।–লিউকের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন–এখানে যতদিন আছেন, সময় করে মাঝে মাঝে আমাদের বাড়ি আসবেন। রোজ আপনাকে খুব পছন্দ করে। আপনি এলে ওর খুব ভালো লাগবে।
আমারও ওকে ভালো লাগে। ওর মতো ভালো মেয়ে আমি স্মরণকালের মধ্যে খুব কমই দেখেছি।
ও খুব যত্ন নিয়ে আমাকে দেখাশোনা করে।
ডাঃ টমাস খুব ভাগ্যবান পুরুষ।
লিউকের হাত ছেড়ে দিয়ে উনি বলেন–হ্যাঁ, তবে আমি যেন বুঝে উঠতে পারছি না।
লিউক বিদায় নিয়ে চলে এলো। বাড়ি ফেরবার পরে ওর ওখানকার আলাপ আলোচনাগুলো সারাক্ষণ মনে আসছিলো। মিসেস আম্বলবির কথাগুলো ওর মনে পড়লো।–এখানে একটা শয়তানী চক্র আছে।বার বার একথা বলে উনি কি বোঝাতে চাইছিলেন? এ কি শুধুই স্বামীর শোকে সন্তপ্ত মনের বিকার না আরও তাৎপর্যময়?
উনি কি কিছু জানেন? তার স্বামী মৃত্যুর আগে যা জানতেন–তেমন কিছু?
লিউক মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে–এই রহস্য আমাকে ভেদ করতেই হবে।
নিজের মনকে শাসন করে ও ব্রিজেটের সঙ্গে সেদিনকার দৈত-যুদ্ধের ঘটনাটা মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
***
৩. মিস ওয়েনফ্লিটের বক্তব্য
লিউক পরদিন সকালবেলা একটা সিদ্ধান্ত নেয়। বই লিখতে আসার বাহানা আর ধোপে টিকবে না; সুতরাং উইচউডে আসার পেছনে যা সত্যিকারের কারণ, তা-ই সামনে রেখে তদন্ত চালিয়ে যাবে।
ও ঠিক করে মিস ওয়েনফ্লিটের সঙ্গে দেখা করবে। উনি যা যা নিজে জানতেন, ইতিমধ্যেই লিউক ওঁর কাছ থেকে সব শুনেছে। কিন্তু এবার ও বের করার চেষ্টা করবে উনি যা অনুমান করেন ও সন্দেহ করেন।
ও চার্চে গিয়ে উপস্থিত হয়। এভাবে হঠাৎ লিউককে দেখে ভদ্রমহিলার ব্যবহারে কোনোরকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখা গেল না। ফলে অনেক সহজ হলো লিউকের পক্ষে সরাসরি প্রসঙ্গে আসতে।
আপনার কাছে বলতে আর দ্বিধা নেই মিস ওয়েনফ্লিট যে আমি শুধুমাত্র একখানা বই লিখতে এখানে আসিনি–একথা আপনি নিশ্চয়ই সন্দেহ করেছেন?
মিস ওয়েনফ্লিট সম্মতি জানান।
অ্যামি গিবস্ নামে মেয়েটির মৃত্যুর কারণে তদন্তের জন্যই আমি এখানে আসি।
অর্থাৎ, পুলিশ থেকে আপনাকে পাঠিয়েছে?
না না, আমি সাদা পোশাকের টিকটিকি নই।–লিউক একটু হেসে বলে–বরঞ্চ বলতে পারেন, আমি সেই গল্পেপড়া বিখ্যাত সখের গোয়েন্দা।