লিউক বললো-খুবই সত্যি কথা। আম্বলবিকে কঠিন কথা বলা আর তার মৃত্যু; আবার টমির সঙ্গে খারাপ আচরণ করা–তার কয়েকদিন পরে সেও মারা গেল। আমার মনে হয়, এ ধরনের পর পর দুটো অভিজ্ঞতার ফলে মিঃ অ্যাবট ভবিষ্যতে নিজের জিভকে সংযত করবেন।
মিসেস পিয়ার্স বললেন–সেভেন স্টারস-এর হ্যারী কাটার জলে ডুবে মরবার কয়েকদিন আগে ওর সঙ্গেও দারুণ কথা কাটাকাটি হয়েছিলো। তবে এর জন্য মিঃ অ্যাবটকে দোষ দেওয়া যায় না। হতভাগী মিসেস কার্টার! কী কষ্ট করেই সে ওর সঙ্গে ঘর করতো! কার্টার মারা যাওয়ায় একদিক থেকে ওর ভালোই হয়েছে।
কার্টারও একটা মেয়ে রেখে গেছে না?
মিসেস পিয়ার্স বলেন–ও এই কথা। কিন্তু আমি কিছুতেই গুজব ছড়াবো না।
আগ্রহভাবে লিউক অপেক্ষা করলো।
আমি কখনোও বলি না যে একমাত্র কথার কথা ছাড়া আর কিছু আছে। লুসী কার্টার একদিক থেকে দেখতে শুনতে বেশ ভালো মেয়ে। তবে লোকে যা বলে তাও তো অস্বীকার করা যায় না–বিশেষ করে কার্টার গিয়ে ওর বাড়িতে এমনভাবে গালমন্দ আর চেঁচামেচি করার পর।
লিউক বললো–মিঃ অ্যাবটকে দেখলেই মনে হয় যে ভদ্রলোক অল্পবয়স্কা সুন্দরী মেয়েদের খুবই পছন্দ করেন।
মিসেস পিয়ার্স বলেন–সব পুরুষের ক্ষেত্রেই একথা খাটে। তা সত্ত্বেও যে ভদ্রলোক–সে ভদ্রলোকই থাকে; তবে শেষ পর্যন্ত সবই লোকের চোখে পড়ে। এমন ছোটো জায়গায় কিছুই গোপন থাকে না।
লিউক বলে–এই জায়গাটা কিন্তু খুব সুন্দর; একেবারে নিষ্পাপ বলে মনে হয়। আপনাদের এখানে তো জমকালো এক নতুন ইনস্টিটিউট রয়েছে।
মিসেস পিয়ার্স বললেন–লোকে অবশ্য বলে যে বাড়িটা খুব সুন্দর। আমাদের মহামান্য লর্ড সাহেব এই জায়গাটার জন্য অনেক কিছুই করেছেন, এ কথা আমরা সবাই জানি।
প্রশ্ন করে লিউক–কিন্তু ওঁর প্রচেষ্টা খুব একটা সার্থক হয়নি, তাই না?
শত হলেও উনি তো আর মিস ওয়েনফ্লিট বা মিস কনওয়ের মত অভিজাত ভদ্র নন। অবশ্য উনিই এখন লর্ড সাহেব হয়েছেন–ধনী হয়েছেন, কিন্তু তাতেই কি সব হয়, বলুন?
না, তা হয় না।
এইসব কথা বললাম বলে কিছু মনে করবেন না। আমি জানি যে আপনি ওই ম্যানর হাউসে থাকেন এবং একটা বই লিখছেন। তবে আপনি তো মিস কনওয়ের আত্মীয়; আর সেটাই হলো আসল কথা। মিস কনওয়ে ওই অ্যাশম্যানরের মালকিন হবেন শুনে আমরা সবাই খুব আনন্দিত।
দেখতেই পাচ্ছি যে আপনারা তাতে যথার্থ আনন্দিত।
লিউক এবার বিদায় জানিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো।–এই হতচ্ছাড়া গ্রাম আমাকে যেন গ্রাস করতে বসেছে। দেখতে কেমন সুন্দর, শান্ত হাসিখুশী, নিষ্পাপ–অথচ এখানেই একের পর এক বিচিত্র খুনের প্রবাহ বয়ে চলেছে। না কি আমি নিজেই পাগল হয়ে গেলাম?
ও একবার অপাঙ্গদৃষ্টিতে হাই স্ট্রীটের দিকে তাকালো। ওর কাছে সবই যেন কেমন অসত্য বলে মনে হলো। আপন মনে ও বলে উঠলোনা, এসব ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। তার পরমুহূর্তেই আবার ভাবলো এখানে সব কিছুই ঘটা সম্ভব; খুন, জখম, নিষ্ঠুরতা, ডাইনীতত্ত্ব–সবই এখানে সম্ভব।
মাথা তুলে লিউক দূরে তাকিয়ে দেখতে পেলো দুটো অস্পষ্ট দেহ চলেছে। দূরত্ব সত্ত্বেও ও দুজনকেই চিনতে পারলো। একজন এলসওয়ার্দি অপরজন ব্রিজেট। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন ওরা দুজন এক স্বপ্নরাজ্য থেকে নেমে এসে নিঃশব্দে ঘাসের ওপর দিয়ে বেড়ালের মত লাফিয়ে চলেছে। এইভাবে দেখে ওর ব্রিজেট সম্পর্কে অদ্ভুত পুরানো অনুভূতিই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
নিজের মনে ও বললো–আমাকেই ডাইনীতে পেয়েছে! এ আর কিছুই নয়–ডাইনীর প্রভাব!
নিশ্চল হয়ে ও দাঁড়িয়ে রইলো। ওকে এক অদ্ভুত ভাবনা নিথর করে দিলো। প্রশ্ন জাগলো ওর মনে–এই রহস্যের কিনারা কে করতে পারবে? কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।
***
রোজ আম্বলবি
লিউক পেছনে সামান্য শব্দ হতে চমকে একেবারে ঘুরে দাঁড়ালো। একটি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি সামনা সামনি হতেই যেন কতকটা বিব্রত হয়ে পড়লো।
প্রশ্ন করলো মেয়েটি–আপনিই মিঃ ফিৎস্ উইলিয়াম?
হ্যাঁ,আমিই
আমার নাম রোজ আম্বলবি। ব্রিজেট বললো যে, আমার বাবার পরিচিত কয়েকজনকে আপনি চেনেন।
লিউক আমতা আমতা করে বললো–সে বহুদিন আগের ব্যাপার। আপনার বাবার বিয়ের আগে তারা ওঁকে চিনতেন–উনি তখন পূর্ণবয়স্ক যুবক ছিলেন।
রোজ আম্বলবি নিরাশ হয়ে বললো–আপনি তো একটা বই লিখছেন তাই না?
হ্যাঁ, এই আর কি–গ্রাম্য আচার-বিচার সংস্কার ইত্যাদির ওপর ছোটোখাটো একটা নোট লিখছি।
শুনে কিন্তু মনে হচ্ছে যে বইটা দারুণ হবে।
মোটেই না, বরঞ্চ ঘোলা জলে ডোবার মতোই এক নৈরাশ্যময় ব্যাপার হবে।
না না, তা কেন হতে যাবে?
লিউক হেসে রোজ আম্বলবিকে বললো–কেউ কেউ আছে যারা একটা উৎসাহোদ্দীপক বিষয়েও একেবারে জলো করে ফেলে, আমি তাদেরই একজন।
কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে তেমনটি হবে কেন?
তা জানি না, তবে আমার মনে হচ্ছে তেমনই একটা কিছু হবে।
রোজ আম্বলবি হেসে বলে–আচ্ছা আপনি এই সংস্কার, কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন?
খুব কঠিন প্রশ্ন-উত্তর দেওয়া শক্ত। তবে কথা হচ্ছে যে, বিশ্বাস না থাকলেও তাতে উৎসাহ থাকতে বাধা নেই।
তা অবশ্য নেই।-রোজ বলে।
আপনি নিজে এসব বিশ্বাস করেন?
না, না, আমার বিশ্বাস নেই; তবে সুসময়, দুঃসময় মানি।
সরাসরি লিউক প্রশ্ন করে–ভাগ্য?