আপনার কথাটা কিন্তু বেশ তাৎপর্যপূর্ণ!
কেন?
ইতিমধ্যেই আপনার সম্পর্কে গুজব রটেছে যে আপনি না কি টমি পিয়ার্সের প্রেতাত্মাকে এনেছেন।
পিয়ার্স? ও, সেই ছেলেটি যে জানলা থেকে পড়ে গিয়েছিলো?
হা।
আমি ভেবে পাচ্ছি না একথা কী করে রটলো; আমি সেই উকিল ভদ্রলোকের কাছে প্রসঙ্গটা করেছিলাম–কী যেন নাম–অ্যাবট।
হ্যাঁ, অ্যাবটের কাছ থেকেই গল্পটা রটেছে।
তা হলেই বুঝুন।
আপনি নিজে ভূতে বিশ্বাস করেন?
না, তবে আকস্মিক অথবা বীভৎস মৃত্যুর ক্ষেত্রে নানা রকম অদ্ভুত লক্ষণের কথা জানি–সে সম্পর্কে আমি বেশি আগ্রহী। যেমন ধরুন, প্রচলিত আছে যে, কোনো খুন হওয়া তোক নাকি তার কবরে বিশ্রাম করতে পারে না। আমি ঠিক বুঝতে পারি না যে এসব কথা লোকে কী করে ভাবতে পারে!
টমাস্ বলেন–আজকাল বেশির ভাগ লোকই এই সমস্ত গল্প বিশ্বাস করে না।
বেশ প্রশান্তিময় আপনাদের এই গ্রাম। কোনো দুষ্কার্য হবার মত জায়গা এটা নয়;তবে হতে পারে যদি কেউ সেই ছোট্ট টমিকে জানলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে থাকে।
মনে হচ্ছে ছেলেটা একেবারে নচ্ছার ধরনের ছিলো, ওকে এই দুনিয়া থেকে সরানো হয়তো বা জনহিতকর কাজ হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
তা হয়তো সত্যি; তবে এই ধরনের জনহিতকর কাজ করাতো আর সম্ভব নয়।
লিউক বললো–আপনার কি মনে হয় না যে বেছে বেছে অপ্রয়োজনীয়দের অপসারণ সমাজের পক্ষে মঙ্গলদায়ক?
তা কথাটা মন্দ বলেননি।
লিউক বলে–অর্থাৎ আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। আমি কিন্তু দিচ্ছি। কোনো মানুষ যদি প্রগতির বিরুদ্ধে কাজ করে, আমার মতে তাকে অপসারণ করা উচিত।
ডাঃ টমাস বলেন–স্বীকার করেছি। কিন্তু কোনো মানুষ উপযুক্ত আর কোনো মানুষ উপযুক্ত নয় তার বিচার কে করবে?
লিউক স্বীকার করে-সেটা একটা কঠিন কাজই বটে।
ডাঃ টমাস বলেন–আমার কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যহীনের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেওয়া এবং আমি স্বীকার করছি যে, সেটাই একটা প্রচণ্ড রকম দুরূহ কাজ।
লিউক বললো–আচ্ছা, তর্কের খাতিরে ধরা যাক যে মৃত হ্যাঁরী কার্টার
ডাঃ টমাস চমকে উঠলেন–কার্টার? আপনি সেই সেভেন স্টারএর বাড়িওয়ালার কথা বলছেন?
হ্যাঁ, সেই লোকটাই। আমি লোকটাকে চিনি না। তবে আমার বোন মিস কনওয়ে ওর সম্বন্ধে বলেছিলেন।
হ্যাঁ, ও খুব মদ খেতো, বউ-মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতো।
তার মানে ও বিদায় হওয়ায় পৃথিবী ভারমুক্তই হয়েছে?
এ কথাটা খুব একটা অযৌক্তিক নয়।–টমাস মন্তব্য করলো।
ও নিজে পড়ে না গিয়ে কেউ যদি ধাক্কা দিয়ে ওকে নদীতে ফেলে দিয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে যে সে একরকম জনহিতকর কাজই করেছে।
টমাস বললো–আপনি যেসব পদ্ধতির কাজ বলছেন,সেখানকার লোকজনদের ওপর প্রয়োগ করেছেন?
লিউক হেসে বললো–না, না, এটা আমার অভিমত। কখনও প্রয়োগ করে দেখিনি।
হঠাৎ লিউক বললো–বলুন তো, আপনি নিজে কখনো এমন লোক দেখেছেন যাকে দেখে খুনী বলে মনে হয়েছে?
টমাস তীব্রস্বরে বলে উঠলেন–সত্যিই কী অসাধারণ প্রশ্ন!
তাই কি? একথাটা কি অস্বীকার করতে পারেন যে, একজন ডাক্তারকে কত রকমের বিচিত্র চরিত্রের লোকজন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়? তাঁর পক্ষে একজন নেশাগ্রস্ত খুনী চিনে বের করা তুলনামূলক ভাবে অনেক সহজ।
রাগত স্বরে টমাস বলেন–খুন করা যাদের নেশা তাদের সম্পর্কে আপনার জ্ঞান দেখছি একেবারেই মামুলি। কিন্তু আমি আপনাকে বলছি শুনে রাখুন, নেশাগ্রস্ত খুনীকে চিনতে পারা দুনিয়ার কঠিনতম কাজের মধ্যে একটি।
আপনি ঠিক বলছেন কি?
নিশ্চয়ই ঠিক বলছি। একজন নেশাগ্রস্ত খুনী যখন খুন করে, সে তখুন ধরে নেয় যে, সে আত্মরক্ষার্থে খুন করছে। অবশ্য এমন খুনীও আছে, যারা আপনার আমার মত স্বাভাবিক এবং সাধারণ মানুষ।
আপনি হয়তো একদিন আবিষ্কার করে বসবেন যে আমি নিজেই গোটা পাঁচ ছয় খুন করেছি।
ডাঃ টমাস হাসলেন–আমার মনে হয় না তেমন ঘটনা ঘটবে মিঃ ফিৎস উইলিয়াম।
দুজনেই হেসে উঠলো।
লিউক দাঁড়িয়ে উঠে নমস্কার করে বললো–আমি আপনার অনেকটা সময় নষ্ট করে দিলাম।
ঠিক আছে, আমি মোটেই ব্যস্ত নই। বাইরে কারুর সঙ্গে কথা বলতে পারলে বেশ ভালো লাগে।
আমিও ভাবছিলাম যে–হঠাৎ লিউক থেমে যায়।
কিছু বলছিলেন?
মিস কনওয়ে যখন আমাকে এখানে পাঠান তখন আমাকে বলেছিলেন যে আপনি অত্যন্ত মেধাবী লোক।
নিজের প্র্যাকটিস আরম্ভ করার দিক থেকে একেবারে খারাপ নয়–ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
কিন্তু এমন একটা আবদ্ধ জায়গায় কি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবেন? শুনেছি, আপনার অংশীদার ডাঃ আম্বলবির খুব একটা উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিলো না? আচ্ছা, উনি নিশ্চয়ই এখানে বহুদিন বাস করেছেন?
বলতে গেলে সারাজীবন।
লিউক পরিহাসের সুরে বলল–শুনেছি উনি খুব সুন্দরী একটি মেয়ে রেখে গেছেন।
টমাস বললেন–তা–ঠিকই শুনেছেন।
তারপর বললেন–আমরা যে অপরাধতত্ত্ব নিয়ে কথা বলছিলাম, তার ওপর লেখা একখানা ভালো বই আপনাকে আমি দিতে পারি। বইখানা জার্মান ভাষায় অনুবাদ, Kreuzheimmer-এর হীনতা এবং অপরাধ।
লিউক বললো-ধন্যবাদ।
ডাঃ টমাস বইখানা বের করে লিউকের হাতে দিয়ে বললেন–এই নিন। এর কোনো কোনো বিষয় সত্যিই খুব চমকপ্রদ। যদিও বিষয়গুলির বেশির ভাগই কেবলমাত্র মতামত সর্বস্ব, কিন্তু বেশ মজাদার; যেমন ধরুন, ফ্রাঙ্কফুর্টের কসাই Menzheld-এর ছোটোবেলাকার জীবন। তারপর আর একটা অধ্যায় আছে খুনী নার্স Anna Helm-এর ওপর, খুব ভালো লাগবে।