ওর শোবার ঘরে লিউক বসে। একটা সাদা কাগজ টেনে নিয়ে তাতে কয়েকটা নাম লিখলো–ডাঃ টমাস, মিঃ অ্যাবট, মেজর হর্টন, মিঃ এলসওয়ার্দি, মিঃ ওয়েক, মিঃ জোন, অ্যামির প্রেমিক, কসাই রুটিওয়ালা, মোমওয়ালা ইত্যাদি। ও শিরোনাম দিলো– শিকার, তার নিচে লিখলো–
অ্যামি গিবস : বিষপ্রয়োগ;
টমি পিয়ার্স : জানলা থেকে ধাক্কা;
হ্যারি কার্টার : সরু সাঁকো থেকে ধাক্কা (মাতাল? ওষুধ প্রয়োগ?);
ডাঃ আম্বলবি : রক্তে বিষয়োগ;
মিস পিঙ্কারটন: গাড়ি দিয়ে চাপা দেওয়া;
আরো যোগ করলো ও
মিসেস রোজ
বৃদ্ধ বেন?
একটু থেমে আবার লিখলো
মিসেস হর্টন?
তালিকাটা কিছুক্ষণ দেখে আবার লিখলো–
ডাঃ টমাস : বিরুদ্ধ সম্ভাব্য যুক্তি : ডাঃ আম্বলবির মৃত্যুতে রীতিমত লাভবান। মৃত্যুর পদ্ধতিতে পেশাগত সৌকর্য, যথা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রক্তে বীজাণু প্রয়োগ। অ্যামি গিবস্ যেদিন মারা যায়, সেদিন বিকেল বেলা তার সঙ্গে দেখা করে (ওদের দুজনের মধ্যে কি কিছু ছিলো? ব্ল্যাকমেল?)।
টমি পিয়ার্স : ডাঃ টমাসের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল কিনা জানা যায় না।
হ্যারি কার্টার : কোনো যোগাযোগ আছে বলে জানা যায় না।
যেদিন মিস পিঙ্কারটন লণ্ডনে গেলেন, সেদিন কি ডাঃ টমাস উইচউডে ছিলেন?
একটা বড় নিশ্বাস ফেলে লিউক নতুন করে আরো একটা শিরোনাম লিখলো
মিঃ অ্যাবট : বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুক্তি : (লিউকের ব্যক্তিগত অভিমত-ওকালতি পেশার লোকজন অত্যন্ত খুঁতখুতে, সন্দেহপ্রবণ এবং অমার্জিত হয়ে থাকে)। কিন্তু এক্ষেত্রে ভদ্রলোক অতি প্রাণবন্ত, সহজ, আচরণে মার্জিত। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে গল্প উপন্যাসের চরিত্রের ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
ডাঃ অ্যাম্বলবিকে খুন করার উদ্দেশ্য–ওদের দুজনের মধ্যে সবসময়ই একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিলো। অ্যাম্বলবি অ্যাবটকে ঘোরতর অপছন্দ করতেন। মিস পিঙ্কারটন খুব সহজেই এঁদের দুজনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করে থাকতে পারেন।
টমি পিয়ার্স : অ্যাবটের কাগজপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছিলো।
হ্যারি কার্টার : কোনো যোগাযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
অ্যামি গিবস : কোনো যোগাযোগ নেই। টুপির রং ব্যবহার করা অ্যাবটের চরিত্রানুগ। যেদিন মিস পিঙ্কারটন খুন হলেন, সেদিন কি অ্যাবট গ্রামে ছিলেন?
মেজর হর্টন : বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুক্তি : অ্যামি গিসের সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিলো বলে জানা যায় না। টমি বা কার্টারের ব্যাপারেও তাই। মিসেস হর্টন সম্বন্ধে কোনো সূত্র আছে কি? মৃত্যুর ধরন থেকে মনে হয় যে, আর্সেনিক বিষে ভদ্রমহিলা মারা গেছেন।
বিঃদ্রঃ–টমাস চিকিৎসা করেছে। টমাসের ওপর সন্দেহের আরও একটা কারণ।
মিঃ এলসওয়ার্দি : বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুক্তি : বাজে ধরনের লোক; ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে কারবার। অ্যামি গিসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলো। টমি পিয়ার্স বা কার্টারের সঙ্গে কি কোনো সংযোগ ছিলো? জানা যায়নি। আম্বলবির সঙ্গে? হয়তো বা এলসওয়ার্দির মানসিক গঠন নিয়ে বলাবলি করেছেন। মিস পিঙ্কারটন? মিস পিঙ্কারটন যখন খুন হলেন, তখন কি এলসওয়ার্দি উইচউডের বাইরে ছিলো?
মিঃ ওয়েক : বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুক্তি : খুব সম্ভবতঃ খুনী নয়। ধর্মীয় অনুশাসনে খুন করার ব্রত? গল্পে এই পবিত্র পাদ্রীমশাই খুনী হলেও হয়তো হতে পারে।
দ্রষ্টব্য : কার্টার, টমি, অ্যামি–সবাই ধর্মমতের বাইরে। তবে কি স্বর্গীয় আদেশে এদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে?
মিঃ জোনস্ : তথ্য অজানা।
অ্যামির প্রেমিক : অ্যামিকে খুন করার মধ্যে হয়তো যুক্তি আছে; কিন্তু অন্যান্য খুনের কোনো কারণ নেই।
অন্যান্য : নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়।
ওসব লেখাটা পড়ে বলল–একেবারে অসম্ভব। ইউক্লিড কেমন ছন্দবদ্ধভাবে সাজাতে জানে! সবকটি লিস্টই ছিঁড়ে ও একেবারে পুড়িয়ে ফেললো।
নিজের মনে বললো–কাজটা খুব সহজ বলে মনে হয় না।
***
২. ডাঃ টমাস
ডাঃ টমাস
ডাঃ টমাস বেশ রূপবান পুরুষ। গায়ের রং ধবধবে সাদা। তিরিশ বছর বয়স। চোখেমুখে সর্বদাই একটা চমকে ওঠা অভিব্যক্তি। কিন্তু ভদ্রলোক যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান লোক, অচিরেই লিউক তার প্রমাণ প্রায়। ডাঃ টমাসের চেম্বারে আসার অজুহাতে হিসেবে লিউক নিজের গেটে বাতের কথা বলে। ওর অসুখের কথা শুনে টমাস যে ওষুধ দেন তা হার্লি স্ট্রীটের বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ মাত্র সপ্তাহখানেক আগে দিয়েছিলেন।
লিউক বললো–ধন্যবাদ। শুনে আশ্বস্ত হলাম যে আমার অসুখটা সেরে যাবে।
ডাঃ টমাস হেসে বললেন–না, না, তেমন বিপদ আছে বলে মনে হয় না মিঃ ফিস উইলিয়াম্।
লিউক বললো–সে যাই হোক, আপনি কিন্তু আমাকে বেশ নিশ্চিন্ত করলেন।
আসলে আপনার এই অসুখে কোনো রকম জটিলতা নেই।
আমি তো ভেবেছিলাম যে, এই গেঁটে বাতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে একেবারেই অথর্ব হয়ে যাবো।
লিউক তাড়াতাড়ি বললো–পুরুষ মানুষেরা সাধারণতঃ এ ভাবেই খুব তাড়াতাড়ি অথর্ব হয়ে পড়ে।
ডাঃ টমাস প্রশ্ন করলেন–আপনি ম্যাজিক নিয়ে একখানা বই লিখেছেন না মিঃ ফিস উইলিয়াম?
লিউক আশ্চর্য হয়ে বললো–আপনি এ কথা কি করে জানলেন?
তিনি বললেন–আমাদের এখানকার মত জায়গায় সব খবরই তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে; তার কারণ আমাদের প্রসঙ্গ বড়ই অল্প।
একদিন হয়তো শুনবেন যে আমি স্থানীয় মৃত আত্মাদের আর ডাইনীদের ডেকে ধরাতলে এনেছি।