কেন?
কারণ ঐ ভদ্রমহিলাও আমারই মতো একই কথা ভাবেন।
আচ্ছা!–লিউক আগের ঘটনাগুলো চট করে ভেবে নিলো।–তাহলে উনিও তোমারই মতো ভাবেন যে, এই ঘটনার মধ্যে একটা অন্ধকার দিক আছে?
সম্মতি জানায় ব্রিজেট।
কিন্তু কেন? কারণটা কী?
প্রথম কারণ–টুপির রং।
টুপির রং বলে তুমি কী ইঙ্গিত করতে চাইছো?
আজ থেকে বিশ বছর আগে লোকে টুপি রং করতো। এক এক ঋতুতে এক এক রং; যেমন–গোলাপী, নীল অথবা কালো। কিন্তু আজকাল আর ওসব চলে না।
এমন কি অ্যামি গিবসের মতো মেয়েরাও?
আমি হয়তো বা টুপিতে রং করলেও করতে পারি, কিন্তু অ্যামি করবে না। তাছাড়া আর একটা বিশেষ দিকও আছে, পেইন্টটা ছিলো লাল রঙের।
তাতে কী হলো।
অ্যামি গিবসের চুলের রংও ছিলো লাল-অনেকটা গাজরের মতো।
ব্রিজেট সম্মতি জানিয়ে বলে-গাজরের রঙের চুলের সঙ্গে কেউ লাল রঙের টুপি পরে না। এটা এমনই একটা ব্যাপার যা পুরুষদের বুঝতে পারা সম্ভব নয়, কিন্তু
লিউক বলে–পুরুষদের পক্ষে বুঝতে পারা কঠিন। মিলে যাচ্ছে।
তাড়াতাড়ি করে লিউক বলল–আমি সরকারী গোয়েন্দা নই। জিমি যা তোমায় বলেছে আমি প্রাচ্যে একজন পুলিশ অফিসার ছিলাম, এখন অবসর নিয়েছি।
ও মিস পিঙ্কারটনের সঙ্গে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে তার পরবর্তী ঘটনারাশির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়, আর কেনই বা উইচউডে এসেছে তাও বলে।
তাহলেই দেখো, কী অলীক কাণ্ড! আমি এমন একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছি, সে একজন ছদ্মবেশী খুনী, সে হয়তো এখানেই উইচউডে সবার মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদি মিস পিঙ্কারটনের, তোমার আর মিসকী যেন নাম ভদ্রমহিলার? ধারণা সঠিক হয়, তাহলে সেই লোকই অ্যামি গিবসূকে খুন করেছে।
ব্রিজেট বললো বুঝতে পেরেছি।
আচ্ছা, বাইরে থেকে কেউ এসে কি এমন সব কাণ্ড ঘটাতে পারে?
ব্রিজেট বললো–অসম্ভব নয়। রীড এখানকার কনস্টেবল। সদর বাড়ির ছাদ বেয়ে অ্যামির জানলায় উঠেছিলো। জানলা দিয়ে ওর ঘরে যাওয়া মোটেই শক্ত কাজ নয়।
আচ্ছা, যদি ঢুকলোই, কিন্তু ঢুকে কী করলো?
ওষুধের বোতলটা সরিয়ে নিয়ে তার জায়গায় রঙের বোতলটা রেখে দিয়েছিলো।
অর্থাৎ, লোকটা ধরেই নিয়েছিলো যে, অ্যামির ঘুম ভাঙ্গবে আর টুপির রংটাও চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলবে, তারপর লোকে বলবে যে ও হয় ভুল করে ওটা খেয়েছে অথবা আত্মহত্যা করেছে?
হা।
— আচ্ছা, কু-মতলবপ্রসূত কাজ–তেমন কোনো কথা ওঠেনি?
না।
কোনো লোক টুপির রঙের সাহায্যে এটা করেছে তেমন কোনো কথাও ওঠেনি?
না।
তা সত্ত্বেও তোমার মনে এই সন্দেহ হয়েছিল?
মিস পিঙ্কারটনের বুদ্ধি তেমনি একটা প্রখর না থাকায় প্রথমটায় ওঁর কথায় আমি কোনো গুরুত্বই দিইনি। লিউক বললো।
— ব্রিজেট বলে কিন্তু আমি আগাগোড়া ভাবতাম যে উনি খুব দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মহিলা ছিলেন। আচ্ছা, তুমি না বলেছিলে উনি আরও কয়েকটা নাম বলেছিলেন?
লিউক বললো–নাম টমি পিয়ার্স। এছাড়া, কার্টারের নামও বলেছিলেন।
ব্রিজেট বললে–কার্টার, টমি পিয়ার্স, অ্যামি গিবস, ডাঃ আম্বলবি-সবই যেন কেমন অলীক বলে মনে হয়। এরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে আলাদা ছিলো।
আচ্ছা, এই কার্টার কী করে মারা গেল জানো?
ও নদীতে পড়ে ডুবে মারা যায়। ঐ নদীর ওপরে সরু একটা সাঁকো আছে; সবার ধারণা পা ফসকে গিয়ে নিচে পড়ে যায়।
কিন্তু কেউ একজন খুব সহজেই ওকে ধাক্কা মেরে ফেলেও দিয়ে থাকতে পারে?
তা তো পারেই।
তা হলে এ কথাই দাঁড়াচ্ছে যে নিজেকে সবার সন্দেহের বাইরে রেখে অতি সহজেই এই তিনজনকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে?
মিস পিঙ্কারটন কিন্তু তাই সন্দেহ করেছিলেন।
–ব্রিজেট বললো।
লিউক বললো-তুমি কাউকে সন্দেহ করো কিনা, একথা জিজ্ঞেস করা কি অপ্রাসঙ্গিক হবে?
উইচউডে যাদের আমি চিনি বা জানি তাদের সবাইকেই আমার মনে হয়, তারা সুস্থ, সম্মানিত এবং সম্পূর্ণ সাধারণ।
লিউক বলে–আমি জানতাম তুমি একথাই বলবে।
ব্রিজেট বলে–যে কোনো লোক থাকতে পারে; যেমন ধরো-মাংসওয়ালা, রুটিওয়ালা, মুদী, ক্ষেতমজুর বা দুধওয়ালা।
তা হয়তো হতে পারে, তবে আমার মনে হয় যে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সন্দেহের ক্ষেত্র আরও সীমাবদ্ধ।
কেন?
মিস পিঙ্কারটন বলেছিলেন যে আততায়ীর পরবর্তী শিকারকে তার চোখের শিরশিরে, ঠান্ডা দৃষ্টিতে মেপে দেখতো। ওঁর কথা থেকে আমার ধারণা হয়েছিল। অবশ্য আমারও ভুল হতে পারে।
তুমি হয়তো ঠিকই বলেছে।
লিউক বললো–জানো, তোমায় সমস্ত ব্যাপারটা জানাতে পেরে আমি খুব স্বস্তি পাচ্ছি।
তাতে তোমার উপকারই হবে। আমিও হয়তো কোনো কোনো ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করতে পারবো। কিন্তু এ ব্যাপারে তুমি সত্যিই নিজেকে জড়াবে?
নিশ্চয়ই।
লিউক বললো–লর্ড হুইটফিল্ডের ভূমিকা এ ব্যাপারে কী হবে? তোমার কী মনে হয়।
স্বভাবতই আমরা গর্ডনকে এ ব্যাপারে কিছু বলবো না। বললো ব্রিজেট।
তুমি বলতে চাও যে উনি বিশ্বাস করবেন না?
না না, বিশ্বাস ও ঠিকই করবে। গর্ডন সবকিছুই বিশ্বাস করে। ও দারুণ উৎসাহিত আর উৎফুল্ল হবে এই ঘটনা শুনলে।
তা হলে তো আর ওকে বলা যায় না।
হ্যাঁ, এমন অনাবিল আনন্দ ওকে দেওয়ার উপায় নেই।
লিউক ব্রিজেটের দিকে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে দেখে।
ব্রিজেট বলে–এবার আমাদের যাওয়া উচিত।-ও উঠে দাঁড়ায়।
দুজনেই বাড়ির উদ্দেশ্যে নিঃশব্দে পথ চলে।
***
সম্ভাবনা