লিউক বলে-না না, ঠিক আছে। ধন্যবাদ।
মিঃ এলসওয়ার্দি ওদের সঙ্গে দরজা অবধি এসে হাত নেড়ে বিদায় জানালেন।
লিউক মন্তব্য করলো–মিঃ এলসওয়ার্দিকে খুব একটা সুবিধের লোক বলে মনে হয়নি।
ব্রিজেট বললো–ভদ্রলোকের মনটা যেমন নোংরা, অভ্যাসগুলিও তেমনি বিশ্রী।
কতকটা খাপছাড়া ভাবে লিউক বলে–হে ভগবান, এ ধরনের লোকই তো আমার দরকার। এই ব্যাপারে ওর সঙ্গে আরও বিশদভাবে কথা বলা উচিত ছিলো। যাকগে, অন্য আর একদিন ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করবো।
কোনোও উত্তর দেয় না ব্রিজেট। পথে যেতে যেতে হঠাৎ এক ভদ্রলোক ব্রিজেটকে নমস্কার জানায়। তাঁর সঙ্গে তিনটি ডালকুত্তা ছিলো।
লিউক জিজ্ঞেস করে–এই কি সেই মেজর হন এবং তার কুকুর বাহিনী?
ঠিকই ধরেছো।
আচ্ছা, এতক্ষণে কি আমরা উইচউড-এর প্রায় সবার সঙ্গেই দেখা করা শেষ করিনি?
তা করেছি।
আমার কেমন যেন নিজেকে কেউকেটা বলে মনে হচ্ছে!–লিউক বলে।
জিমি লরিমারের কথা লিউকের মনে পড়লো–আমার মনে হয়, ইংল্যাণ্ডের গ্রামে যখন নতুন কোনো লোক যায়, গ্রামে ঢোকবার মাইল খানেক আগে থেকেই সে সবার নজরে এসে যায়।
অতর্কিতে প্রস্তাব করে ব্রিজেট–আমাদের হাতে অনেক সময় আছে; এসো না নদীর পারে একটু বসি?
একটা এলিয়ে পড়া গাছের গুঁড়িতে ওরা দুজনে ঠেস দিয়ে বসে পড়ে।
ব্রিজেট বলে–মেজর হর্টন একেবারে পাকা সামরিক। একটা হুমদারী ভাব আছে। বিশ্বাস করা কঠিন যে, বছর খানেক আগে পর্যন্ত ভদ্রলোক কী দারুণ রকম স্ত্রৈণ ছিলেন। আমি কস্মিনকালে ওঁর স্ত্রীর মতো একজন খাপছাড়া মহিলা দেখিনি। বছর খানেক আগে পাকস্থলীর এক মারাত্মক অসুখে ভদ্রমহিলা ওঁর স্বামী, ডাঃ টমাস আর দুজন নার্সকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন আর তার পরেই এই কুকুর কুলের আবির্ভাব।
ব্রিজেট লিউককে জিজ্ঞেস করলো, তোমার এখানে আসবার আসল উদ্দেশ্য কী?
ব্রিজেটের এই ছোট্ট প্রশ্নটা লিউককে আঘাত করলো।
***
টুপির পেইন্ট
লিউক সবেমাত্র সিগারেটে আগুন ধরাতে যাচ্ছিলো, কিন্তু ব্রিজেটের এই আকস্মিক প্রশ্নে ওর হাত দুটি বরফ হয়ে গেলো। জ্বলন্ত দেশলাইয়ের কাঠি পুড়ে হাতে তাপ লাগাতে ওর বাহ্যজ্ঞান ফিরে এলো। ও চমকে উঠে পোড়া কাঠিটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো–কী সাংঘাতিক প্রশ্ন। তুমি আমাকে যা একটা প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিলে!–ক্লিষ্টভাবে ও হাসে।
তাই নাকি?
হা।–যাগে সে কথা। বুঝতে পারছি আমার আসল উদ্দেশ্যটা বোঝা সাধারণবুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনো লোকের পক্ষেই সম্ভব। আমার এই বই লেখার ব্যাপারটা তুমি বোধ হয় প্রথম থেকেই বিশ্বাস করোনি, তাই না?
তোমাকে দেখার পর আর করিনি।
তার আগে পর্যন্ত করেছিলে?
তা করেছিলাম।
অর্থাৎ আমার গল্পটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠেনি।
মানে বই লেখার মতো বুদ্ধিসুদ্ধি আমার নেই–এই তো? না না, আমাকে আঘাত দেওয়া হবে–একথা ভেবো না, আমার জানা দরকার।
বই হয়তো তুমি ঠিকই লিখতে পারো, তবে এ জাতের বই নয়। পুরানো দিনের আচার, বিচার, সংস্কার–এসব তোমায় মানায় না।
বুঝলাম।–লিউকের মুখে ফুটে উঠে উদ্বেগের রেখা। নিকুচি করেছে। আমি এখানে আসার পর থেকেই তুমি আমাকে ঘাবড়ে দিচ্ছো। তোমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত বুদ্ধিতে ঠাসা!
শুকনো গলায় ব্রিজেট বললো–আমি তার জন্য দুঃখিত। কিন্তু তুমি আমাকে কেমনটি আশা করেছিলে?
বিশেষ কিছু আশা করিনি।
ব্রিজেট শান্ত কণ্ঠে বললো–আমি জানি। তুমি ভেবেছিলে একটা মেয়ে যার বুদ্ধির দৌড় হলো বড়জোর সুযোগ বুঝে তার মনিবকে বিয়ে করা পর্যন্ত।
কতকটা ধৃষ্টতার সঙ্গে লিউক বললো–হতে পারে এমনই কিছু, হয়তো একটা ভেবে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাইনি।
ব্রিজেট বললো–সে কথা আমি বিশ্বাস করি কারণ, ঘটনার একেবারে মুখোমুখি না হওয়া পর্যন্ত তুমি কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছোও না।
এবার লিউক হতাশ হয়ে বলে–আচ্ছা, লর্ড হুইটফিল্ডও কি ব্যাপার ধরে ফেলেছেন।
না না, গর্ডন কিছুই অবিশ্বাস করে না। ও সহজাত বিশ্বাসী মনের লোক।
যে যাই হোক, আমার অজুহাত কিন্তু মোটের ওপর খুবই কাঁচা।
তোমার ধারণাটা আমার যেন কিরকম মুখস্থ, আমি যেন সবটাই স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি, আর তাতে–খুবই মজাই লাগছিলো।
হ্যাঁ, তা তো লাগবেই। সাধারণতঃ বুদ্ধিমতী মেয়েরা খুব ঠান্ডা মাথায় থোক না তোক নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে।
ব্রিজেট বললো–এ জীবনে যেখান থেকে যতটুকু আনন্দ পাওয়া যায় সেইটুকুই লাভ। আবার বলল–কিন্তু তুমি এখানে কেন এসেছো?
আবার সে একই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে লিউক ব্রিজেটের মুখের দিকে তাকাতেই ওর চোখে চোখ পড়লো। ও কতকটা তন্ময় ভাবে বললো–তোমার কাছে মিথ্যের বোঝা আর না বাড়ানোই ভালো।
খুবই ভালো কথা।
কিন্তু এক্ষেত্রে যা সত্যি তা খুব কদর্যতর শোনো।
লিউক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল–শোন, আমি এখানে এসেছি অনেকটা আন্দাজের ওপর নির্ভর করে। পুরো ব্যাপারটা যেমন অদ্ভুত তেমনই আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব। আমি গিবস্ সেই মেয়েটির মৃত্যুর ঘটনারাশির একটা অংশ মাত্র। আমি জানতে চাই ও ঠিক কীভাবে মারা গিয়েছিলো?
আমিও তাই ভেবেছি।
ওর মৃত্যুর মধ্যে এমন কী আছে যাতে তোমারও কৌতূহল হয়েছে?
ব্রিজেট বললো–আগাগোড়া আমার মনে হয়েছে যে ওর মৃত্যুর মধ্যে একটা অস্বাভাবিকতা আছে, আর তাই আমি তোমাকে মিস ওয়েনফ্লিটের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।