- বইয়ের নামঃ মার্ডার ইজ ইজি
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, গোয়েন্দা কাহিনী
মার্ডার ইজ ইজি
১. সহযাত্রিণী
মার্ডার ইজ ইজি (উপন্যাস) – আগাথা ক্রিস্টি
সহযাত্রিণী
ইংল্যান্ড! আবার সেই কতদিন পর ইংল্যাণ্ডের মাটিতে! কেমন লাগবে কে জানে?
জাহাজঘাটে যেতে যেতে লিউক ফিৎস উইলিয়াম নিজেকেই নিজে প্রশ্নটা করলো। একনাগাড়ে বেশি কিছুদিন জলের দেশে বাস করার পর ডাঙ্গায় নেমে জাহাজী ট্রেনে উঠতেই এই চিন্তাগুলোই তাকে বিভোর করে ফেলল।
ইংল্যান্ডে ছুটিতে আসার ব্যাপারটা আলাদা; খুশিমত খরচ করার টাকা (অন্ততঃ প্রথম দিকটায়), পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারা, ঠাট্টা-মস্করা করে সময় কাটানো–যেন খেয়াল-খুশির আনন্দমেলা। ভাবটা যেন–আর কটা দিনই বা আছি, এই তো ফিরে যাওয়ার সময় প্রায় হয়ে এলো, তারই মধ্যে যতটা করে নেওয়া যায়।
কিন্তু এবার ফিরে যাবার আর প্রশ্ন নেই। সেই ভ্যাপসা গরম রাতের ছটফটানি, নির্জন সন্ধ্যায় একাকীত্ব, পুরোনো টাইমস্ বার বার পড়া–এর কোনোটাই আর লিউকের কাছে ফিরে আসবে না। দেশের মানুষ এবার দেশে ফিরে এসেছে। হাতে অখণ্ড অবসর। নিজেকে নিয়ে এবার ও কী করবে এটাই সমস্যা।
ওর কাছে ইংল্যাণ্ডের এই জুন মাসের আবছা নীল আকাশ আর ধারালো হাওয়ায় বিছুটি দুটোই সমান বিরক্তিকর। এর ওপর মানুষ! আর দেখছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা
নিজের কামরায় চোখ ফিরিয়ে সদ্য কেনা টাইমস, দৈনিক ক্ল্যারিয়ন আর পানচ সবগুলো কাগজ নিয়ে গুছিয়ে বসলো সে। প্রথমেই মন দিলো দৈনিক ক্ল্যারিয়নের ডারবী রেসের পাতায়; আফশোষ হল যদি গতকাল এসে পৌঁছোতে পারতো। যখন ওর উনিশ বছর বয়স, তখন ডারবী দেখেছিল শেষবারের মতো।
ক্লাব সুইপের একটি ঘোড়ার ওপর বাজি ধরেছে লিউক। ক্ল্যারিয়নের ঘোড়দৌড় বিশারদ সেই ঘোড়াটির সম্পর্কে অল্পস্বল্প মন্তব্য করে তার বক্তব্য শেষ করেছিল–এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় জুজুরে সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। বরঞ্চ বাইরের একটি ঘোড়ার কিন্তু লিউকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে না বাইরের সেই সম্ভাবনাময় ঘোড়াটি। দ্বিতীয় জুজুবের ওপর ও বাজির সংখ্যা গুণে দেখলো ৪০ঃ১।
সময় দেখলো ঘড়িতে পৌনে চারটে। খেলা শেষ হলো এতক্ষণে : এঃ যদি বাজি ধরতাম ক্ল্যারিগোল্ডের ওপর! দ্বিতীয় সম্ভাবনা হলো ক্ল্যারিগোল্ড।
লিউক এবারে টাইমস খুলে গুরুত্বপূর্ণ খবর দেখতে লাগল। এমন সময় বিশ্রী দেখতে এক কর্নেল আধঘণ্টা বক বক করে তারপর ঘুমিয়ে পড়ল। ভদ্রলোক ঘুমোতেই লিউক বাইরের দিকে তাকাল। সামনেই একটা প্ল্যাটফর্ম। তার একটু দূরে একটা প্ল্যাকার্ডের দিকে ওর নজর
পড়লো। তাতে লেখা আছে :
ডারবীর ফলাফল
দ্বিতীয় জুজুব–প্রথম
মাজেপ্পা-দ্বিতীয়
ক্ল্যারিগোল্ড–তৃতীয়
লিউকের মুখ প্রসন্ন হাসিতে ভরে উঠলো। ইচ্ছেমতো খরচ করার জন্য ১০০ পাউণ্ড। অথচ কত অবজ্ঞা করেছে এই জুজুবকেই ঘোড়দৌড় বিশেষজ্ঞরা। ও কাগজটা ভাজ করে পেছন ফিরতেই একই বোকা বনে গেল। ট্রেন নেই, প্ল্যাটফর্ম শূন্য। আনন্দের উত্তেজনার মাঝে কখন ট্রেনটা এক ফাঁকে চলে গেছে। একজন কুলিকে জিজ্ঞেস করলো–এই হতচ্ছাড়া ট্রেনটা কখন ছেড়ে গেল?
উত্তরে কুলি বললো–কোনো ট্রেন? ৩-১৪ মিনিটের পর আর কোনো ট্রেন তো এখানে থামেনি।
এক্ষুনি এখানে একটা ট্রেন থেমেছিল–বোট এক্সপ্রেস। আমি ওটা থেকে নেমেছি।
কুলিটি বললো-বোট এক্সপ্রেস লণ্ডনের আগে কোথাও থামে না।
কিন্তু থেমেছিল–জোর দিয়ে বলে লিউক–আমি এখানে নামলাম।
একই উত্তর দিলো কুলিটিলণ্ডনের আগে কোথাও থামে না।
আমি বলছি থেমেছিল।
কুলিটি এবার বললো–আপনার এখানে নামা উচিত হয়নি। ও ট্রেনের এখানে থামার কথা নয়।
তোমার মত অত সূক্ষ্ম বুদ্ধি আমার নেই। সে যাই হোক, কথা হচ্ছে এখন কী করি?
তখনও কুলিটি একই ভাবে বললো–আপনার এখানে নামাই উচিত হয়নি।
সে তো মানলাম। মহাজনেরা বলেছেন, যতই কাঁদ না কেন, মৃত অতীত আর ফিরে আসবে না–এ তো জানা কথা। তুমি আমায় কী করতে বলছো?
৪-২৫ মিনিটে একটা আছে, ওটাই আপনার পক্ষে ভালো হবে।
তা হলে ওতেই আমি লণ্ডন যাবো।
লিউক কতকটা নিশ্চিন্ত হয়ে পায়চারি করতে লাগলো। একটা বড় বোর্ডে স্টেশনের নামটা লেখা-ফেনি ক্লেটন-উইচউড আণ্ডার অ্যাশ-এ যাবার জন্য এখানে ট্রেন বদল করুন। কিছুক্ষণ পরেই দুকামরার একটা ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ালো। ট্রেন থেকে দুসাতজন লোক নেমে ওভার ব্রিজ দিয়ে প্ল্যাটফর্মে এলো।
শেষ পর্যন্ত লণ্ডনগামী ট্রেনখানি স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। তৃতীয় শ্রেণীর কামরাগুলোতে অত্যন্ত ভীড়। প্রথম শ্রেণীর জন্য মাত্র তিনখানি কামরা। প্রথম কামরাটি ধূমপায়ীদের জন্য সংরক্ষিত। সেই কামরাটি পেরিয়ে লিউক দ্বিতীয় কামরার সামনে এসে দাঁড়ালো। সেই কামরায় বেশ কেতাদুরস্ত এক তরুণী বসে, দেখে মনে হলো যেন খুব ক্লান্ত। হয়তো মেয়েটি কোনো নার্সারীর গভর্নেস; কারণ, সঙ্গে তিনটি অল্প বয়সের চঞ্চল ছেলে। পরের কামরায় একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলাকে দেখেই লিউকের নিজের মিলড্রেড পিসিকে মনে পড়লো। মিলড্রেড পিসি দুনিয়ার অন্যান্য সব পিসিদের মতোই খুব ভালো ছিলেন। সেই কামরায় উঠে লিউক একটা জায়গা দেখে বসলো।