আজ্ঞে না স্যার, ইভানস বলল, যেভাবে একটানা তুষার পড়েছিল তাতে বিকেলে আর বাড়ি থেকে আমি বেরোতে পারিনি। কাপ্তেন অবশ্য এজন্য আমাকে কিছু বলেননি, এদিক থেকে উনি ছিলেন খুব ভালো মনিব, খুব বিবেচক। যতক্ষণ পর্যন্ত আমি ভালোভাবে কাজ করছি, চুরিচামারি করছি না, ততক্ষণ পর্যন্ত উনি আমায় ঘাঁটাবেন না এই ধাঁচের মনিব ছিলেন উনি। বহুদিন ধরে তো দেখছি, কাপ্তেন বরাবর এইরকমই ছিলেন।
গতকাল দুপুরে উনি তোমায় ঠিক কি বলেছিলেন তা মনে আছে?
আছে হুজুর,ইভানস রুমালে চোখ মুছে বলল, জানালা দিয়ে বাইরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন কাপ্তেন, তারপর নিজের মনে বলে উঠলেন, মনে হচ্ছে আজ বারনাবি আসতে পারবে না, এই বিশ্রী দিনে আসবেই বা কি করে। কাপ্তেনের পুরোনো বন্ধু মেজর বারনাবি প্রত্যেক শুক্রবার এখানে আসতেন আবার প্রত্যেক মঙ্গলবার কাপ্তেন যেতেন ওঁর কাছে। দুই বন্ধু দাবা খেলতেন, আর ছিলেন ক্রসওয়ার্ড পাজলের ভক্ত। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে কাপ্তেন হঠাৎ বলে উঠলেন, ইভানস তুমি বাড়ি যেতে পারো, আজ বিকেলে আর আসবার দরকার নেই। আবার কাল সকালে এসো।
মেজর বারনাবি ছাড়া তোমার মনিব আর কারো কথা বলেছিলেন কি যার এখানে আসবার কথা ছিল?
না স্যার, তেমন কিছু তো গতকাল ওঁকে বলতে শুনিনি।
ওঁর কথাবার্তায় বা আচরণে এমন কিছু দেখেছিলেন যা তোমার চোখে অস্বাভাবিক ঠেকেছিল?
না স্যার।
আচ্ছা ইভানস, তুমি হালে বিয়ে করেছ তাই না?
হ্যাঁ স্যার, ইভানস বলল, মিসেস বেলিংয়ের মেয়েকে আমি বিয়ে করেছি।
কিন্তু শুনলাম তোমার এই বিয়ের ব্যাপারে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নাকি খুশি হয়নি, কথাটা সত্যি?
ঠিকই শুনেছেন স্যার। ইভানস ধীরে ধীরে বলল, আমার স্ত্রী রেবেকার রান্নার হাত খুব ভালো আর তাই আমি একসময় স্থির করেছিলাম যে তাকেও এখানে ঠিকে কাজে লাগিয়ে দেব। এ বাড়িতে আর কেউ তো নেই, কাপ্তেনকে বিপদে আপদে দেখাশোনা করার কেউ নেই, রেবেকা থাকলে এই অভাব মিটতো। কিন্তু কাপ্তেন আমার সে প্রস্তাবে একবারও রাজি হননি, বারবার আমায় বলতেন যে বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে কোন মেয়েকে তিনি কাজে বহাল করবেন না। এরপর কাপ্তেন মিসেস উইলেটকে ওঁর সিটাফোর্ড হাউস বাড়িটা ভাড়া দিলেন আর নিজের থাকার জন্য এই হ্যাজেলমুর বাড়িটা ভাড়া নিলেন। সেই থেকে আমি কাপ্তেনের দুবেলা রান্নাবান্না আর ঘরদোর দেখাশোনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম। বিশ্বাস করুন স্যার, আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে শীতের শেষে মিসেস উইলেট আবার ফিরে যাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায় আর তখন কাপ্তেনও ভাড়া বাড়ি ছেড়ে ফিরে যাবেন ওঁর নিজের বাড়িতে। তখন রেবেকাকেও আমি সেখানে নিয়ে যেতে পারতাম। একরকম ঠিক করেই রেখেছিলাম যে রেবেকা সারাদিন রান্নাঘরেই ব্যস্ত থাকবে, আমি অন্যান্য কাজকর্ম করব, রেবেকার মুখ যাতে কাপ্তেন সারা দিনে একবারও দেখতে না পান সে ব্যবস্থা আমি করব। কিন্তু সবই পোড়াকপাল, মাঝখান থেকে সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান মেয়েদের ওপর এমন হাড়ে হাড়ে চটেছিলেন কেন তা বলতে পারো?
হাড়ে হাড়ে চটা নয় স্যার, ইভানস মুচকি হেসে বলল, আসলে উনি ছিলেন খুব লাজুক স্বভাবের লোক তাই মেয়েদের সঙ্গে নিজে থেকে মেলামেশা করতে পারতেন না। এমন ধাঁচের পুরুষ আকছার দেখা যায়, সাধারণত অল্পবয়সে মেয়েদের হাতে কোনো কারণে নাকাল হলে এরা সবাই মেয়েদের ওপর এমনি রেগে যায়।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান বিয়ে করেছিলেন?
না, স্যার, উনি ছিলেন চিরকুমার।
ওঁর আত্মীয়রা কোথায় আছেন জানো?
স্যার, যতদুর জানি এক্সেটারে কাপ্তেনের এক বোন থাকেন,ইভানস বলল, তাছাড়া ওঁর মুখ থেকেই এক ভাইপো না ভাইঝির কথাও শুনেছিলাম।
এঁরা কেউ ওঁর সঙ্গে কখনো দেখা করতে আসতেন না?
না স্যার, ইভানস বলল, যতদূর জানি ওঁর এক বোন এক্সেটারে থাকেন। তার সঙ্গে ওঁর ঝগড়াঝাটি হয়েছিল।
ভদ্রমহিলার পদবী কি জানো?
গার্ডনার, স্যার, নাম কি তা বলতে পারব না।
ওঁর ঠিকানা দিতে পারবে?
না স্যার, ওঁর ঠিকানা তো আমার জানা নেই।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বৈষয়িক দলিলপত্র যে আমাদের খুঁটিয়ে দেখতে হবে তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। যাক, ইভানস, এবার বলো তো, গতকাল বিকেল চারটের পর থেকে তুমি কি করছিলে?
আমি বাড়িতে ছিলাম স্যার।
তোমার বাড়ি কোথায়?
এই তো মোড়ের মাথায় স্যার, ৮৫ নম্বর, ফোর স্ট্রীট।
বিকেলবেলা একবারও বাড়ি থেকে বেরোওনি তুমি?
না স্যার, ইভানস মুখ নামিয়ে বলল, তাছাড়া যেভাবে তুষার পড়ছিল তাতে বাইরে বেরোবোই বা কি করে?
সে তো বটেই। আচ্ছা ইভানস, তুমি যা বলছ তা যে অক্ষরে অক্ষরে সত্যি, তা প্রমাণ করতে পারো?
আপনার কথাটা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না স্যার।
আমি বলতে চাইছি ওই সময় কেউ তোমায় বাড়িতে থাকতে দেখেছিল? এমন লোক কেউ আছে?
আছে স্যার, ইভানস বলল, আমার স্ত্রী নিজে চোখে দেখেছে আমি বাড়ি ছেড়ে এক পাও বেরোইনি।
তাহলে তুমি আর তোমার স্ত্রী, দুজনেই গতকাল বিকেলে তোমাদের বাড়িতে ছিলে?
হ্যাঁ, স্যার।
মনে হচ্ছে তুমি সত্যি কথাই বলছ। যাক, তোমায় আর কোনো প্রশ্ন আপাতত করব না আমি।
স্যার, ইভানস বলল, যদি অনুমতি দেন তাহলে এবার আমি ঘরদোর সব সাফ করে ফেলতে পারি।