হ্যাঁ, ইভানসের সঙ্গে আমার দেখা করা খুবই দরকার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মন্তব্য করলেন, ও নিশ্চয়ই অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের সরবরাহ করতে পারবে।
আপনার কি ধারণা–কথাটা শেষ না করে মাঝপথে থেমে গেলেন সার্জেন্ট পোলক।
আমার ধারণা এই যে খুনের রহস্যের সাথে ছোটখাটো এমন একটা ঘটনা জড়িয়ে আছে যা সাধারণ চোখে বাইরে থেকে ধরা পড়ে না।
একটু উদাহরণ যদি দেন, স্যার?
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন, হাসিমুখে শুধু বললেন, এই ইভানস কোথায়? ওকে কোথায় রেখেছেন?
ও খাবার ঘরে অপেক্ষা করছে স্যার।
লোকটা কেমন?
নৌবাহিনীর নোক, অত্যন্ত বদখত টাইপ,সার্জেন্ট পোলক সংক্ষেপে মন্তব্য করলেন।
মদ খায়?
না স্যার।
ও হালে বিয়ে করেছে বললেন না?
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট গলা নামিয়ে বললেন, ইভানসের বউ-এর ওপর ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের কোনোরকম দুর্বলতা ছিল না তো?
না স্যার, সার্জেন্ট পোলক মৃদু হাসলেন, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের ওইরকম কোনো দুর্নাম ছিল না। তাছাড়া আগেই বলেছি যে উনি মেয়েদের খুব ঘেন্না করতেন।
আর এই ইভানস নিশ্চয়ই ছিল ওঁর বিশ্বস্ত ও অনুগত ভৃত্য?
আমরা সবাই তো তাই জানি স্যার। সার্জেন্ট পোলক মুচকি হেসে বললেন, এক্সহ্যাম্পটন জায়গাটা খুব ছোট তা তো নিজের চোখেই দেখছেন। এখানে যা কিছু ঘটুক না কেন, কিছুই চাপা থাকে না।
বেশ, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, তাহলে এ ঘরে আর দেখার কিছু নেই। এবার আমরা ইভানসকে কিছু প্রশ্ন করে তারপর এ বাড়ির বাকি ঘরগুলো আমি পরীক্ষা করব। তারপর আমি থ্রি ক্রাউনসে একবার যাব, মেজর বারনাবির সঙ্গেও দেখা করব। খুনের সময় সম্পর্কে উনি একটা মন্তব্য করেছিলেন আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিট, মনে পড়ে? হয়তো অজানা কিছু তথ্য ওঁর কাছেও আছে নয়তো খুন কখন হয়েছে তা এত নিখুঁতভাবে উনি বলেন কি করে?
তাহলে এটা আদৌ চুরির প্রচেষ্টা নয়। সার্জেন্ট পোলক দরজার দিকে এগোতে এগোতে বললেন, আসলে অপরাধী গোটা ব্যাপারটাকে ওইরকম চেহারা দিতে চেয়েছিল।
এটা আমার কাছে তেমন অস্বাভাবিক নয়, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মন্তব্য করলেন, এই পরিস্থিতিতে ওইটাই স্বাভাবিক। আসলে জানালাটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
জানালাটা? সার্জেন্ট পোলক বললেন, আপনি কি বলতে চাইছেন স্যার?
গতকাল রাতে আবহাওয়া যেমন বিশ্রী স্যাঁতসেঁতে ছিল তাতে খুনী জানালা দিয়ে এঘরে ঢুকতে গেল কেন? বিশেষতঃ যেখানে আমার ধারণা গৃহস্বামী ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের যে ছিল বিশেষ পরিচিত? এক্ষেত্রে সে তো সহজেই সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারত, নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল।
হয়তো তাই, সায় দিয়ে সার্জেন্ট পোলক বললেন, সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলে রাস্তা থেকে পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়েই হয়তো খুনী জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল।
আপনার যুক্তিটা আদৌ জোরালো নয়, পোলক। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, গতকালের বিশ্রী আবহাওয়ায় রাস্তায় কজন লোক বেরিয়েছিল যারা ওকে সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেখতে? তা নয়, অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে এর পেছনে যা যথাসময় জানা যাবে।
০৫. ট্রেভিলিয়ানের ঠিকে রাঁধুনি
০৫.
ট্রেভিলিয়ানের ঠিকে রাঁধুনি ইভানস খাবার ঘরে একটি চেয়ারে বসেছিল, সার্জেন্ট পোলককে সঙ্গে নিয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট যেখানে আসতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সে।
ইভানস বেঁটেখাটো স্বাস্থ্যবান চেহারার লোক, তার হাত দুখানা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ লম্বা, দুহাতের মুঠো অর্ধেক বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যেস আছে তার। ইভানসের দাড়ি গোঁফ পরিষ্কার কামানো, তার গোলাকার মুখে ক্ষুদে দুটি চোখের চাউনি খুব সতর্ক আর তীব্র, হঠাৎ দেখলে বুলডগের কথা মনে পড়ে। ইভানস যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও ধূর্ত প্রকৃতির লোক তা একনজর তাকে দেখেই বুঝতে পারলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
তোমার পুরো নাম কি?
হাত নেড়ে ইসারায় তাকে বসতে বলে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট।
আজ্ঞে রবার্ট হেনরী ইভানস।
ভাল, খুব ভাল। এবার বলো তো বাপু, ওই খুনের ঘটনা সম্পর্কে তুমি কতটুকু জানো?
আজ্ঞে আমি কিছুই জানি না স্যার, ইভানস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, কাপ্তেন আর আমি আগে বহু জাহাজে একই সঙ্গে কাজ করেছি, উনি ছিলেন জাহাজের কম্যান্ডার, আর আমি ছিলাম ওঁর জাহাজের রান্নাঘরের হেড বাবুর্চি। আমার হাতে তৈরি রান্না কাপ্তেনের খুব প্রিয় ছিল। ওঁর মৃত্যুতে তাই আমার বুকের পাঁজরগুলো ভেঙ্গে গেছে। হতে পারেন উনি ছিলেন বড় অফিসার আর আমি এক খুদে খালাসী, তাহলেও একসঙ্গে অনেকগুলো বছর আমরা কাটিয়েছি তো, গত বিশ্বযুদ্ধেও লড়েছি।
ইভানস তার মনের যে ভাব প্রকাশ করতে চাইছে তার পুরোটাই যে ছলনা নয় সে সম্পর্কে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট নিঃসন্দেহ হলেন।
গতকাল শেষবার কখন তুমি ওঁকে জীবিত অবস্থায় দেখেছিলে?
তখন বেলা প্রায় দুটো হবে স্যার,ইভানস বলল, কাপ্তেনের লাঞ্চ খাওয়া শেষ হলে আমি তার এঁটো বাসনপত্র সরিয়ে নিয়েছিলাম টেবিল থেকে। কাপ্তেন নিজেই বললেন যে বিকেলে আমার আসবার দরকার নেই।
পরশুদিন বিকেলে তুমি এ বাড়িতে কাজ করতে এসেছিলে? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জানতে চাইলেন।