স্যার, সার্জেন্ট পোলক উৎসাহিত হয়ে বলতে লাগলেন, আমার মনে হয় এবার কোনো আওয়াজ হচ্ছে শুনতে পেয়ে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ব্যাপারটা কি দেখতে নীচে নেমেছিলেন। আততায়ী ওঁর পায়ের আওয়াজ শুনেই ওঁর মাথায় জোরে আঘাত করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে ব্যাটা দরজার আড়ালে গিয়ে লুকোয়, ক্যাপ্টেন, ভেতরে ঢুকতেই ওই ভারি টিউবটা দিয়ে তার মাথায় জোরে আঘাত হানে পেছন থেকে।
হুম, নাক দিয়ে আবার আওয়াজ করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, মানছি আপনার বক্তব্যে যুক্তি আছে। সেক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নিশ্চয়ই জানালার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তাহলে পোলক, আপনার যুক্তিটা আমার খুব যুৎসই বলে মনে হচ্ছে না। এ আমার ভাল লাগছে না।
লাগছে না, স্যার?
না, আর তার কারণ একটাই–সন্ধ্যে পাঁচটায় শুধু চুরি করার মতলবে একজন অপরাধী জানালা দিয়ে কারো বাড়িতে ঢুকবে এ আমি বিশ্বাস করি না।
কেন স্যার? সার্জেন্ট পোলক নিজের জেদ বজায় রাখতে বলে উঠলেন, এমন পরিস্থিতিকে সে এক দারুণ সুযোগ বলে ভাবতে পারে।
সুযোগের কথা হচ্ছে না, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট মন্তব্য করলেন, বাইরে থেকে দেখে চুরি বলে মনে হলেও আসল ব্যাপারটা তা নয় সেকি আপনি এখনও বুঝতে পারছেন না?
আচ্ছা, আপনিই বলুন, জানালা দিয়ে চোরের কোন ঘরটিতে ঢোকা উচিত ছিল? রান্নাঘরে, তাই না? যেখানে দামি বাসনপত্র থাকে।
এদিকে থেকে আমি আপনার সঙ্গে পুরোপুরি একমত, সার্জেন্ট পোলক মন্তব্য করলেন।
জানালার দিকে একবার তাকান, সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, ভেতর থেকে তাতে ছিটকিনি আঁটা ছিল না, বাইরে থেকে সহজেই একটানে পাল্লা খুলে ফেলা হয়েছিল। লক্ষ্য করেছেন।
দুপা এগিয়ে এসে সার্জেন্ট পোলক জানালা পরীক্ষা করে বললেন, তারপর বিস্ময়সূচক ধ্বনি উচ্চারণ করে বললেন, কি আশ্চর্য! জানালার পাল্লা দুটো আলতো করে ভেজিয়ে রাখা হয়েছিল, ছিটকিনি আঁটা হয়নি। বোঝাই যায় যে চুরি করার উদ্দেশ্যেই অপরাধী জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকেছিল এটা আমরা ধরে নিই তাই সে চেয়েছিল। এইভাবে সে আমাদের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছে, আমাদের বোকা বানাবার চেষ্টা করেছে।
যাক, ব্যাপারটা আপনার মাথায় ঢুকেছে তাহলে। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, পোলক।
তাহলে স্যার, সার্জেন্ট পোলক গম্ভীর গলায় বললেন, আমদের এটাই ধরে নিতে হচ্ছে যে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কেউ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করেছে।
ঠিক ধরেছেন, এজন্য আবার আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, এবং খুন যে করছে সে যে ট্রেভিলিয়ানের বিশেষ পরিচিত ছিল সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আততায়ী জানালা দিয়েই এ ঘরে ঢুকেছিল আপনার এই যুক্তিও অকাট্য, এবং জেনে রাখুন বাইরের গলানো তুষার পায়ে মাড়িয়ে সে এঘরে ঢুকেছিল যার ফলে ঘরের মেঝেতে ভেজা জুতোর ছাপও পড়েছিল। তবে শুধু এই ঘরেই, এ ছাড়া বাড়ির অন্য কোনো ঘরের মেঝেতে সেই ছাপ পড়েনি অন্তত। কনস্টেবল গ্রেভস বা ডঃ ওয়ারেন কারো চোখেই তা পড়েনি শুধু এই ঘরের মেঝের ওপর সেই গলানো তুষারসমেত ভেজা চামড়ার জুতোর দাগ তাদের চোখে পড়েছিল। এতে যে ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে গেল তা হচ্ছে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের চোখের সামনেই আততায়ী এই ঘরের জানালা খুলে ভেতরে ঢুকেছিল। আর সেক্ষেত্রে আপনি জানতে বাধ্য যে আততায়ী এমন কেউ ছিল যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বিশেষ পরিচিত। আচ্ছা সার্জেন্ট, আপনি তো এই এলাকারই লোক, বলুন তো যে ধারেকাছে এমন কেউ আছে কিনা যার সঙ্গে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের শত্রুতা গড়ে উঠেছিল।
না স্যার, সার্জেন্ট পোলক জবাব দিলেন, শুধু ধারেকাছে নয়, দুনিয়ায় ওঁর কোনো শত্রু ছিল বলে আমার মনে হয় না। ভদ্রলোক এমনিতে ছিলেন খুবই ফুর্তিবাজ, এছাড়া চাকরি থেকে অবসর নেবার পরে হঠাৎ প্রচুর টাকা রোজগারের নেশা পেয়ে বসেছিল। কিন্তু এজন্য প্রতিবেশীদের কারো সঙ্গে ওঁর কোনোরকম শত্রুতা গড়ে উঠেছিল বলে কখনো শুনিনি।
সে তো এখনকার ব্যাপার, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, কিন্তু নৌবাহিনীতে চাকরি করার সময় কেউ ওঁর শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিনা তা আমাদের এখনও জানা নেই। সার্জেন্ট, আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে এখানে যদি আপনি কারো শক্ত হন তাহলে অন্য সেখানেই যান না কেন যেখানেও নতুন করে আবার কারো শক্ত হয়ে উঠবেন, আর ট্রেভিলিয়ানের খুনের প্রসঙ্গে সেই সম্ভাবনাটা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছি না। এবার তাহলে পরবর্তী যুক্তিতে আসা যাক, কি বলেন? আপনি নিজেও একজন পুলিশ অফিসার আর তাই আপনার এটা অজানা নয় যে সাধারণত লাভের উদ্দেশ্যেই একজন অপরাধী ব্যক্তিগত খুনের মতো একটি অপরাধ সংঘটিত করে থাকে। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নিশ্চয়ই বেশ পয়সাওয়ালা লোক ছিলেন তাই না?
তা বলতে পারেন স্যার, সার্জেন্ট পোলক বললেন, কিন্তু অন্যদিকে তিনি ছিলেন ভয়ানক কৃপণ, চাদা বা দানধ্যানের ব্যাপারে একটা আধলাও পারতপক্ষে ওঁর হাত দিয়ে গলতো না।
–হুম, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, খুনটা যখন হয় সেইসময় আর কোনো লোক বাড়িতে ছিল না?
আজ্ঞে না, সার্জেন্ট পোলক বললেন, গত পাঁচ ছয় বছর ধরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ছাড়া মাত্র একটি লোককেই আমি এ বাড়িতে দেখেছি তার নাম ইভানস, সে রোজ দু বেলা ওঁর রান্না করে দিত, আবার কাজ শেষ করে বাড়িতে চলে যেত। ইভানস নিজেও নৌবাহিনীতে চাকরি করত, অবসর নেবার পরে ট্রেভিলিয়ানের রাঁধুনির কাজ করত। এখানে মোড়ের মাথায় ফোর স্ট্রীট নামে একটা গলি আছে–দেখেছেন নিশ্চয়ই। ইভানস সেখানেই তার বউকে নিয়ে একটা ঘর ভাড়া করে থাকে। এই তো সবে মাসখানেক হল ইভানস বিয়ে করেছে, কিন্তু ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ব্যাপারটায় বেশ রেগে গিয়েছিলেন। ইভানস বিয়ে করুক এটা ওঁর ইচ্ছে ছিল না। এ বাড়িতে কোনো মহিলা নেই, তার কারণ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নিজে প্রচণ্ড নারীবিদ্বেষী ছিলেন। যা ইভানসকে আমি নিয়ে এসেছি, আপনি নিজেও ওকে একবার জেরা করুন। ইভানস বলছে রান্নাবান্না আর ঘরের কাজকর্ম সকাল সকাল সারা হয়েছিল বলে গতকাল দুপুর ঠিক আড়াইটে নাগাদ ও ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়ি চলে যায়।