কী আশ্চর্য! অবাক সুরে চার্লস বলে উঠল, আপনি সেই চীফ ইন্সপেক্টর ডিউক? আমি তো নিজের কান আর চোখকে বিশ্বাস করতেই পারছি না।
একসময় আপনি তো আমাদের কাছে স্বপ্নের মানুষ ছিলেন মশাই, গল্পের গোয়েন্দাদের মতো আমরা শ্রদ্ধা করতাম আপনাকে। যাক, আপনার সঙ্গে পরিচয় হতে আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করছি। আমি দ্য ডেইলি অয়্যার পত্রিকার একজন সাংবাদিক, আমার পত্রিকার পক্ষ থেকে আপনাকে অনুরোধ করছি সাত আটশো শব্দের মধ্যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর খুনের মামলাটা সহজ ভাষায় সত্য কাহিনীর ঢংয়ে লিখে দিন না, আমরা ওটা রবিবারের পাতায় ছাপাব। আমাদের পাঠকেরা এই ধরনের সত্যকাহিনী খুব আগ্রহ সহকারে পড়েন। আপনি লেখাটা অফিসে সরাসরি আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, আমার হাতে এলেই আমি পারিশ্রমিকের অর্ধেক টাকা চেক কেটে আপনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেব, তাও এক হাজার পাউন্ডের কম কিছুতেই হবে না জানবেন।
নিশ্চয়ই লিখব, মিঃ ডিউক হেসে বললেন, তবে আমি তো লেখক নই, কাজেই সোজা ভাষায় যা লেখার লিখে দেব, আপনারা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে ছাপিয়ে দেবেন।
মিঃ ডিউককে চার্লস এন্ডারবির সঙ্গে ভিড়িয়ে দিয়ে এমিলি দৌড়ে গিয়ে ঢুকল মিসেস কার্টিসের বাড়িতে। মিসেস কার্টিস বিছানায় বসেছিলেন, এমিলিকে দেখে তড়াক করে উঠে বসে বললেন, তাহলে মিস ট্রেফুসিস, এখানকার পাট তুলে দিয়ে আপনি তাহলে চললেন?
ঠিক বলেছেন, এমিলি বলল, এখন আমি লন্ডনে যাব, আর আমার সঙ্গে উনিও যাবেন।
এবার তাহলে বলে ফেলুন তো মিস ট্রেফুসিস, মিসেস কার্টিস অন্তরঙ্গ হবার সুরে বললেন, দুজনের মধ্যে কার সঙ্গে ঝুলে পড়বেন বলে ঠিক করলেন?
এ আর মুখ ফুটে বলার কি আছে, এমিলি মুখ টিপে হাসল, ঝুলে তো একজনের সঙ্গেই পড়ব বলে স্থির করে রেখেছি, যাকে বেকসুর খালাস করে আনব বলে আমার এখানে আসা। সে কে তা তো জানেনই ম্যাডাম, তার নাম জিম পিয়ার্সন।
সে কি বাছা! মিসেস কার্টিস বিস্ময়ে দুচোখ কপালে তুলে বললেন, তুমি কথাটা সত্যিই মন থেকে বলছ তো? মিঃ এন্ডারবি এই তদন্তের কাজে তোমায় এত সাহায্য করলেন, অথচ
মিসেস কার্টিস, বাচ্ছা ছেলেমেয়েদের বোঝনোর মতো করে এমিলি বলল, আমি নই, আসলে ভুল করেছেন আপনি নিজে। মিঃ এন্ডারবি একজন প্রতিভাসম্পন্ন সাংবাদিক, তার সামনে বিশাল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। পায়ের নিচে পড়ে আছে গোটা দুনিয়া। বিয়ে করে ঘর বাঁধার জন্য ওঁর জন্ম হয়নি। কিন্তু আমি যাকে এতদিন ভালবেসে এসেছি আর আজ যদি তাকে বিয়ে না করি, তাহলে জানবেন ওঁর অবস্থা সত্যিই খুব অসহায় হয়ে দাঁড়াবে।
জানতাম বাচ্ছা, মিসেস কাটিস বললেন, এর চাইতে কোনও জোরালো অজুহাত তোলা মুখে জোগাবে না। কথা শেষ করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে মিসেস কার্টিস নেমে এলেন একতলায়, সেখানে তার স্বামী মিঃ কার্টিস একটা কৌচে বসে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন সামনের দিকে।
এই যে আমার উনি, ইশারায় স্বামীকে দেখিয়ে মিসেস কার্টিস মন্তব্য করলেন, আমার বড় জ্যাঠাইমার এক জীবন্ত প্রতিমূর্তি। হতচ্ছাড়া জর্জ প্লাংকেটকে বিয়ে করলেন আর ঠিক তারপরেই ওঁর সরাইখানা দেনার দায়ে বাঁধা পড়ল। অবশ্য তার দুবছরের মধ্যেই বড় জ্যাঠাইমা দেনা পুরো মিটিয়ে দিয়েছিলেন, তারপর তো সেই কারবারের দারুণ রমরমা।
হুম, মিঃ কার্টিস আপন মনেই মন্তব্য করলেন।
জর্জ প্ল্যাংকেট লোকটি দেখতে ছিল খুবই সুন্দর, মিসেস কার্টিস মন্তব্য করলেন।
যাকে এককথায় বলে রমনীমোহন পুরুষ। কত নারী যে ওঁর জীবনে এসেছে তার লেখাজোখা নেই। অথচ মজার ব্যাপার হল বড় জ্যাঠাইমাকে বিয়ে করার পর বাকি জীবনে উনি অন্য কোনও নারীর দিকে মুখ তুলে তাকান নি।
হুম,! তৃতীয়বার মিঃ কার্টিস আবার সেই একরকম গম্ভীর শব্দ উচ্চারণ করলেন।