সেকি! মিসেস উইলেট অবাক হয়ে বলে উঠলেন, এই দুর্যোগের রাতে আপনি এখান থেকে বেরাবেন কি করে? আজকের রাতটা কি এখানে থেকে যেতে পারবেন না?
ধারেকাছে একটা টেলিফোনও নেই মিসেস উইলেট, বারনাবি বললেন, থাকলে আপনার ইচ্ছেমতো আজ বাড়ি না ফিরলেও পারতাম।
–টেলিফোন? কিছু বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে মেজর বারনাবির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস উইলেট।
হ্যাঁ, বারনাবি বললেন, সত্যি বলতে কি, জো ট্রেভিলিয়ান সম্পর্কে আমার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে। আপনারা হয়তো এটাকে সুসংস্কার বলতে পারেন, কিন্তু তাহলেও আমি নিজে নিশ্চিত হতে চাই। আজ সন্ধ্যের ব্যাপারটাকে আমি পুরো রসিকতা বলে মেনে নিতে পারছি না।
আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি মেজর, মিসেস উইলেট বললেন, কিন্তু এই মিটাফোর্ড গ্রামে কোথাও টেলিফোন পাবেন না আপনি।
অতএব আমায় যেতেই হবে।
-তা তো বুঝলাম, মিসেস উইলেট বললেন, কিন্তু আপনি যাবেন কি ভাবে? রাস্তায় যে পরিমাণ তুষার জমেছে তাতে স্থানীয় কোনো ড্রাইভারই গাড়ি বের করতে রাজি হবে না।
গাড়ির দরকার নেই, মেজর বারনাবি বললেন, আমি হেঁটে যেতে পারব।
হেঁটে! এই দুর্যোগে? আপনার মাথা কি খারাপ হয়েছে, মেজর তীব্র গলায় প্রতিবাদ জানালেন। মিসেস উইলেট, উপস্থিত সবাই তাকে একযোগে সমর্থন করলেন। কিন্তু মেজর বারনাবি ভয়ানক একগুয়ে ধাঁচের লোক, এঁরা কেউই তাকে রুখতে পারলেন না। সবার প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে ওভারকোট গায়ে চাপিয়ে মাথায় টুপি পরলেন তিনি, তারপর বেরিয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে।
কাজটা ভাল করেলন না উনি, জানালা দিয়ে আকাশের দিকে এক পলক তাকিয়ে মিঃ রাইক্রফট মন্তব্য করলেন, একটু আগে মেজর বারনাবি নিজেই বলেছিলেন যে আরও তুষার পড়বে।
ঠিকই বলছেন আপনি, সায় দিয়ে বললেন মিঃ ডিউক, আমাদের মধ্যে কারও ওঁর সঙ্গী হওয়া উচিত ছিল।
ঈশ্বরের নামে শপথ করছি যে আর কোনোদিন সময় কাটানোর জন্য এই প্রেতচর্চার খেলা আর খেলব না, মিসেস উইলেট কঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলেন, বেচারা মেজর বারনাবি। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়িতে পৌঁছোনোর আগেই উনি মাঝপথে নির্ঘাৎ তুষার চাপা পড়ে মারা যাবেন, নয়তো ঠাণ্ডা লাগিয়ে জ্বর বা নিউমোনিয়া বাঁধিয়ে বসবেন। ছিঃ! বুড়ো বয়সে এমন জেদ কখনো দেখাতে হয়? ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নিশ্চয়ই সুস্থ আছেন।
সে তো একশোবার, উপস্থিত সবাই সায় দিলেন তার কথায়। কিন্তু সায় দেওয়া সত্ত্বেও মনের দিক থেকে কেউই তেমন জোর পেলেন না। সবারই মনে হতে লাগল যদি…… ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সত্যিই কিছু ঘটে থাকে, তাহলে?
.
০৩.
হাঁটতে হাঁটতে মেজর বারনাবি যখন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়িতে এসে পৌঁছোলেন তখন রাত প্রায় আটটা।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান যে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন তার নাম হ্যাজেলমুর। পথশ্রমে। ক্লান্ত মেজর বারনাবি সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠে এলেন, কলিংবেলের বোতাম টিপে স্যুটে জমে থাকা অসংখ্য তুষারকণা দুহাত দিয়ে ঝেড়ে ফেললেন তিনি। কয়েক মিনিট কেটে গেল, ভেতর থেকে কারো সাড়াশব্দ পেলেন না মেজর, আবার কলিংবেল টিপলেন তিনি।
কিন্তু এবারেও অবস্থা একইরকম রইল। ভেতর থেকে কেউ সদর দরজা খুলল না। তৃতীয়বার আরেকবার কলিংবেল টিপলেন বারনাবি। কিন্তু এবারেও কোনো কাজ হল না, দরজা আগের মতোই বন্ধ রইল। দরজার গায়ে কড়া লাগনো ছিল তাই ধরে খুব জোরে নাড়লেন মেজর বারনাবি, কিন্তু এবারেও কেউ ভেতর থেকে দরজা খুলল না।
ট্রেভিলিয়ানের কি হল? এক অজানা আশঙ্কায় মেজর বারনাবির মনটা ছেয়ে গেল, ওর অসুখবিসুখ করেনি তো? কয়েক মুহূর্ত চুপ করে কি যেন ভাবলেন মেজর বারনাবি! তারপর পেছন ফিরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন রাস্তায়। হ্যাজেলমুর বাড়িটি থেকে মাত্র একশো গজ দূরে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি, সেখানে এসে হাজির হলেন তিনি। কনস্টেবল গ্রেভস তার পরিচিত, তাকে সব খুলে বললেন বারনাবি।
আপনি পর-পর তিনবার কলিংবেল টিপলেন, জোড়ে কড়া নাড়লেন, তবু দরজা খুলল না? কনস্টেবল গ্রেভস ভুরু কুঁচকে বললেন, এ ত ভারি অদ্ভুত ব্যাপার।
শুধু অদ্ভুত নয়, মিঃ বারনাবি বললেন, সেই সঙ্গে ভাবনার ব্যাপার।
এই বিশ্রী আবহাওয়ায় ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান নিশ্চয়ই বাড়ি ছেড়ে বেরোননি, কনস্টেবল গ্রেভস মন্তব্য করলেন।
এই কথাটাই আমি বলতে চাইছি, মেজর বারনাবি অনুনয়ের সুরে বললেন, এবার আপনি কিছু করুন।
করতে তো পারি, কনস্টেবল গ্রেভস বললেন। কিন্তু ধরুন, আপনার বন্ধু যদি তাতে কিছু মনে করেন, যদি উনি ব্যাপারটা অন্যভাবে নেন? তার চাইতে আমি দেখি টেলিফোনে ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় কিনা।
কনস্টেবল গ্রেভস একবার নয় পরপর কয়েকবার টেলিফোনে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হল না। ওপাশ থেকে কেউ রিসিভার তুলল না।
মনে হচ্ছে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কনস্টেবল গ্রেভস বললেন, আমি ডঃ ওয়ারেনকে সঙ্গে নিয়ে এখনই ওঁর কাছে যাব।
ডঃ ওয়ারেন ফাড়ির পাশেই থাকেন। কনস্টেবল গ্রেভসের মুখ থেকে সব শোনার পর তাকে বেশ বিরক্তই দেখাল। তবু কর্তব্যের তাগিদে গরম ওভারকোট আর ভারী গামবুট পড়ে তিনি তখনই বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে। তুষারপাত তখনও চলছে।