আমি এবার লন্ডনে যাব, এমিলি বলল, সেখানে জিম যে বীমা কোম্পানীতে চাকরী করছে সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করব যাতে সামান্য কিছু টাকা না বলে ধার নেবার অপরাধে ওঁরা যেন জিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করেন।
হুম, কোনও মন্তব্য না করে গম্ভীর শব্দটি উচ্চারণ করলেন রণি গারফিল্ডের মাসী মিস পার্সিহাউস।
জিমের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে আশাকরি, এমিলি বলল, মনে হয় ভবিষ্যতে এমন ভুল আর কখনও করবে না সে।
তা না হয় হল, মিস পার্সিহাউস বললেন, তারপরেও তোমার করণীয় একটা কাজ আছে তা নিশ্চয়ই মনে আছে?
কোন কাজ বলুন তো,এমিলি অবাক হয়ে বলল, আমি ঠিক মনে করতে পারছি না?
বটে! রাগত সুরে রণির মাসী বলে উঠলেন, আবার ন্যাকামি হচ্ছে? জিম আর চার্লস এন্ডারবি, এদের দুজনের মধ্যে জীবনসঙ্গী হিসাবে কাকে বেছে নেবে জানতে চাইছি।
কেন এ প্রশ্ন করছ মাসী। এমিলি এবার সত্যিই ন্যাকা ন্যাকা গলায় বলে উঠল, আমার বর যে আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে তা তো তোমার জানা আছে।
মিস পার্সিহাউস কোনও মন্তব্য না করে শুধু মুখ টিপে হাসলেন। এমিলি তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল আর সঙ্গে সঙ্গে দেখা হয়ে গেল চার্লস এন্ডারবির সঙ্গে।
এমিলি! এন্ডারবি এমিলির দুহাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, সত্যিই গো সোনামণি, তোমার তুলনা নেই। আমি এবার তোমায় চুমু না খেয়ে ছাড়ছি না, বলে সে পথের মঝখানে সত্যিই এমিলিকে জড়িয়ে ধরে পরপর কয়েকবার চুমু খেল।
আঃ চার্লস, এমিলি মৃদু গলায় ধমকে উঠল, রাস্তার মধ্যে কি অসভ্যতা করছে।
সে না হয় ছেড়ে দিচ্ছি, এন্ডারবি এমিলির হাত ছেড়ে দিয়ে একপাশে সরে দাঁড়িয়ে বলল, পিয়ার্সনের নির্দোষিতা প্রমাণ হয়েছে, পুলিশ তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।
তুমি কি বলতে চাইছো বল তো চার্লস, এমিলি বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
এমিলি, এন্ডারবি গদ গদ গলায় বলে উঠল, বিশ্বাস করো, আমি তোমায় কতটা ভালবাসি তা তুমি কোনদিন টেরও পাবে না। তুমি নিজেও যে আমায় একই রকম ভালবাসো তাও জানতে আমার বাকি নেই। তা এইভাবে আর কতদিন চলবে বলো? সবকিছু যখন ভালোয় ভালোয় মিটে গেল তখন এসো এবার আমরা দুজনে বিয়ে করে ঘর সংসার বাঁধি। তা কিরকম বিয়ে তোমার পছন্দ তা বলো, গীর্জায় নিয়ে নাকি রেজিস্ট্রি করে, কিভাবে তুমি বিয়ে করতে চাও?
ওঃ, তুমি বিয়ের কথা বলছ, এমিলি বলল, তাহলে আর আমার করার মতো কিছু নেই।
সেকি কিন্তু –এমিলি–
না, তুমি যা চাইছো, তা কখনোই হতে পারে না, কঠিন গলায় বলে উঠল এমিলি।
কিন্তু এমিলি–
শোন চার্লস, একইরকম দৃঢ় গলায় বলল এমিলি, আমি জিমকে ভালবেসে এসেছি, এতো কাণ্ডের পরে এখনও মনপ্রাণ দিয়ে শুধু ওকেই ভালোবাসি, ওর জায়গায় আর কাউকে আমি বসাতে পারব না, ওর বদলে আর কাউকে আমি কখনো কোনও মতে বিয়ে করতে পারব না।
সত্যিই পারবে না? অবাক চোখ এমিলির মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল চার্লস এন্ডারবি, তুমি এতো নিষ্ঠুর? এত নির্মম?
তোমার মন যা চায় তাই বলে আশা মিটিয়ে আমায় গাল দিতে পারো চার্লস, এমিলি বলল, কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত থেকে আমায় একচুলও নড়াতে পারবে না। আচ্ছা, তুমিই বা আমাকে পাবার জন্য এত পাগল হয়েছে কেন বলো তো? তুমি একজন তরুণ সাংবাদিক, দ্য ডেইলি অয়্যার কাগজের জন্য এক দারুণ এক্সকুসিভ স্কুপ জোগাড় করেছে। কে জানে এই স্কুপই হয়তো তোমার উন্নতির দুয়ার খুলে দেবে। তুমি হলে সেই জাতের পুরুষ যে নিজের ভাগ্য নিজের হাতে গড়ে। এককথায় খাঁটি শক্তিশালি পুরুষ মানুষ যারা তাদের কাছে আমার মতো এক সাধারণ নারীর কোনও মূল্যই নেই। তুচ্ছ কারণে নাকি কান্না কাদা আর সবসময় তার মতো আঁকড়ে ধরে থাকা, এছাড়া আমি তোমার আর কিই বা করেত পারি? এমনও হতে পারে যে আজ তুচ্ছ আর অলীক চোখের নেশায় তুমি আমায় স্ত্রী হিসাবে পেতে চাইছো তা চিরস্থায়ী হবে না, হয়তো ভবিষ্যতে আমিই হয়ে দাঁড়াব তোমার জীবনের পাপগ্রহ যখন প্রতি মুহূর্তে প্রতি পদে তুমি আমার মৃত্যু কামনা করবে? আমি তো তোমার জীবন বিষিয়েও দিতে পারি? না চার্লস, তুমি শক্তসমর্থ মানুষ, যথার্থ অর্থে পুরুষ, জীবনের চলার পথে তোমার নারী না হলেও চলবে, অন্ততঃ আমার মতো নারীর কোনও প্রয়োজনই তোমার হবে না…..
দোহাই তোমার এমিলি, চার্লস এন্ডারবি করুণ চোখে তার দিকে তাকাল, অনর্থক ওসব নিয়ে শীতকালের এই সুন্দর সন্ধ্যাটা নষ্ট করে দিয়ো না। তোমার মুখে রাজনৈতিক নেতাদের মতো এতো বকবকানি শুনতে আমার মোটেই ভাল লাগছে না। তুমি যে আঘাত দিলে তাতে আমার বুক ভেঙ্গে দুটুকরো হয়ে গেছে। তবু বিশ্বাস করবে কিনা জানি না তবু বলছি ইন্সপেক্টর ন্যারাকট আর মিঃ ডিউককে সঙ্গে নিয়ে যখন তুমি মিসেস উইলেটের বসার ঘরে ঢুকলে তখন তোমায় কি সুন্দর দেখাচ্ছিল তা ভাষায় বলে বোঝাতে পারব না। তোমায় ঠিক মানুষ বলে মনে হচ্ছিল না, বিজয়ী সিংহীর মতো মনে হচ্ছিল যে এইমাত্র শিকার সেরে বিজয়ীর মত এসে দাঁড়াল।
চার্লসের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই ভারী বুটের আওয়াজ তুলে সেখানে এসে দাঁড়ালেন মিঃ ডিউক।
এই যে মিঃ ডিউক, এমিলি মুচকি হেসে বলল, ভালই হয়েছে আপনি এসেছেন। চার্লস, ইনি হলেন মিঃ ডিউক, একসময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের চীফ ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ ছিলেন।