অভাবনীয়, মিঃ রাইক্রফট প্রশংসার সুরে মন্তব্য করলেন, এত স্বপ্নেও ভাবা যায় না। কিন্তু এইভাবে অনুসন্ধান করতে কে শেখাল আপনাকে। কে আপনাকে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল?
উত্তর দিতে গিয়ে এমিলি মিসেস বেলিং-এর লেখা সেই চিঠির উল্লেখ করল আর ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়ির ফায়ারপ্লেসের টিমনির ভেতর থেকে কিভাবে তার হারানো বুটজোড়া উদ্ধার করেছিল তাও জানাল।
এক নজর তাকিয়েই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ওটা স্কি করার বুট, এমিলি আবার বলতে শুরু করল, আর তখনই পরপর কতগুলো সম্ভাবনা ফিল্মের মতো ফুটে উঠল মনের কোণে। দেরী না করে তখনই ছুটে গেলাম নিচে। একটা স্কি আরেকটার চাইতে আকারে ছোট ছিল যা দেখে মনে ধারণা হয়েছিল যে নিশ্চয়ই ওখানে দুজোড়া স্কি আছে। হারানো বুটজোড়া লম্বা স্কি দুটোর সঙ্গে চমৎকারভাবে খাপ খেয়েছিল, ছোট দুটোর সঙ্গে মোটেই খাপ খায়নি।
কিন্তু মেজর বারনাবি বুটজোড়া লুকোতে গেলেন কেন? মিঃ রাইক্রফট জানতে চাইলেন।
আমার মনে হয় পুলিশ সব জানতে পারবে এই ভয় পেয়েই উনি কাজটা করেছিলেন, এমিলি জবাব দিল, হয়তো স্কি দেখলেই ওরা প্রয়োজনীয় সূত্র পেয়ে যাবে এমনটাই উনি ধরে নিয়েছিলেন। তাই ওই বুটজোড়া খবরের কাগজে মুড়ে মেজর বারনাবি ফায়ারপ্লেসের চিমনির ভেতরে গুঁজে রাখেন, আর ওইখানেই উনি সব চাইতে বড় ভুল করে বসলেন। মনিবের বুটজোড়া খোয়া গেছে তা ইভানসের চোখ এড়াল না আর যথাসময়ে সে আমার কানেও পৌঁছে দিল।
মেজর বারবি কি জেনেশুনে ইচ্ছে করে খুনের দায় জিম পিয়ার্সনের ওপর চাপাতে চেয়েছিলেন? ব্রায়ান পিয়ার্সন গম্ভীর গলায় জানতে চাইল।
না, তা নয়, এমিলি জবাব দিল, আসলে জিম একটা বোকা হাঁদা, নিজের নির্বুদ্ধিতার ফলেই ওর এই হাল হয়েছে।
জিমকে নিয়ে তখন আর চিন্তার কোনও কারণ নেই, এমিলি, বলতে বলতে চার্লস এন্ডারবি উঠে দাঁড়াল, ওর সঙ্গে তোমার বিয়ে কেউ ঠেকাতে পারবে না তা তো বুঝতেই পারছে। যা এবার আমি তাহলে টেলিগ্রাফ অফিসে চললাম, মেজর বারনাবির গ্রেপ্তারের এই খবরটা আজ রাতের মধ্যেই আমার অফিসে পাঠিয়ে দিতে হবে। আপনারা আমায় মাফ করবেন, আমায় এক্ষুনি বেরোতে হবে। কথা শেষ করেই ঝড়ের বেগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল চার্লস এন্ডারবি।
আসল অপরাধী ধরা পড়ল বটে কিন্তু সবদিক পুরোপুরি লক্ষ্য হল না, ভায়োলেট এমিলিকে বাইরে নিয়ে এসে চাপা গলায় বলল, হতভাগা বাপটার কথা ভেবে আমার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
কার কথা বলছ? এমিলি অবাক হয়ে জানতে চাইল, তোমার বাবা?
ঠিক তাই, ভায়োলেটের ঠোঁটে করুণ হাসি ফুটে উঠল, কদিন আগে প্রিন্সটাউন জেলখানা থেকে যে কয়েদিটি পালিয়েছিল সেই হতভাগ্য আমার বাবা। তোমার প্রণয়ী জিমের মেজ ভাই ব্রায়ানের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া থেকে জাহাজে আসার পথে আলাপ হয়েছিল, তখনই আমরা দুজনে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। ব্রায়নই পরিকল্পনা করেছিল যে বাবা জেল ভেঙ্গে পালিয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকবে তারপর সে তার বাবা এখানে আমাদের দুজন পুরুষ ভৃত্য হিসাবে বাস করবে, যাদের দেখে কারও মনে কোনওরকম সন্দেহ জাগবে না। ব্রায়ানের পরিকল্পনা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপর ব্রায়নই এই বাড়ির খোঁজ আমাদের দিয়েছিল, ও নিজেই উদ্যোগী হয়ে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়ির ওই অংশটা আমরা যাতে ভাড়ায় থাকতে পারি সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।
তা তোমার বাবা এখন কোথায়? এমিলি জানতে চাইল, পুলিশ কি তাকে গ্রেপ্তার করে আবার জেলে পাঠিয়েছে?
না, আবার করুণ হাসি হাসল ভায়োলেট, প্রচণ্ড তুষারপাতে ঠাণ্ডা লেগে বাবা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, এখন আর তার বাঁচার আশা নেই বললেই চলে। জেলে যাবার বছর পনেরো আগে ঘোড়ার পায়ের লাথিতে মাথায় চোট পেয়েছিলেন বাবা, তারপর থেকে মাথার অসুখে ভুগছেন তিনি, ব্রায়ান বলেছিল ভালবাবে চিকিৎসা করলে হয়তো তার এই রোগ সেরে যেতেও পারে আর তাই সে তার জেল ভেঙ্গে পালানো পরিকল্পনা করেছিল।
আমায় দেখতে যতই ভাল হোক না কেন, আসলে আমার বাবা যে একজন কয়েদী, যে জেল ভেঙ্গে পালিয়েছে এই ব্যাপারটা আমার গায়ে চেপে বসেছে তা নিশ্চয়ই জানবে। এমিলি এইসব জানবার পরে কোনও ভদ্রবংশীয় যুবক আমায় গ্রহণ করবে না। সেদিন থেকে ব্রায়ান সত্যিই মহান, তাকে জীবনে কখনও ভুলতে পারব না।
.
২২.
বেচারী ভায়োলেট, এমিলি সহানুভূতির সুরে বলল, তোমার কথা ভেবে সত্যিই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।মন্তব্য করে এমিলি আর দাঁড়াল না, উপস্থিত সবার কাছে তখনকার মত বিদায় নিয়ে সিটাফোর্ড হাউস থেকে বেরিয়ে এল সে, হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছল মিস পার্সিহাউসের বাড়িতে।
কেমন? তখনই বলেছিলাম না যে মেজর বারনাবি অত্যন্ত নীচ, স্বার্থপর আর হিংসুটে লোক? বারনাবির গ্রেপ্তারের বিবরণ এমিলির মুখ থেকে শুনে মিস পার্সিহাউস বলে উঠলেন, এমন একটা জঘন্য স্বভাবের লোকের সঙ্গে গত কুড়ি বছর ধরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান কি করে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন সেটাই ভাবার বিষয়। স্কি চড়া, ঘোড়ায় চড়া, পাহাড়ে ওঠা, রাইফেল শুটিং আর ক্রসওয়ার্ড ধাঁধার সমাধান করা, এ সবের কোনটিতেই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের নাগাল কোনদিন পায়নি বারনাবি। তার চেয়েও যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ছিলেন ধনী লোক, সেই তুলনায় মেজর বারনাবি ছিলেন নিম্ন মধ্যবিত্ত, এক কথায় গরীব মানুষ। যাক এবার বলো তুমি কি করবে।