ভুল, এমিলি বাধা দিয়ে বলল, উনি ঠিক সন্ধ্যে পৌনে ছটা নাগাদ খুন হয়েছিলেন। সব খুলে না বললে তোমরা বুঝতে পারবে না। জেনে রাখো, এই সমস্যার সমাধানের মূলে আছে স্কি।
স্কি? অবাক হয়ে প্রশ্ন করল সবাই।
হ্যাঁ, ঘাড় নেড়ে এমিলি জবাব দিল, মেজর বারনাবি আগে থাকতেই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন আর তার গোটা ব্যাপারটাতে অলৌকিকের ছোঁয়া দেবার উদ্দেশ্যে যেদিনের প্রেতচর্চার অনুষ্ঠানে কৌশলে টেবলের পায়া মেঝেতে ঠুকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যেন জনৈক অশরীরী প্রেতাত্মা এসে জানিয়ে গেল যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন। মেজর বারনাবির পরিকল্পনা ছিল খুবই নির্ভুল, এখানে বসেই সেদিন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে একটু পরেই প্রচণ্ড তুষারপাত আবার নতুন করে শুরু হবে, আর তার ফলে পথের ওপর জুতোর যাবতীয় ছাপ আর অন্যান্য দাগ সবই যাবে মুছে। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন এমন একটা ধারণা তার আচরণে কথাবার্তায় সেদিন সবার মনে গেঁথে গেল, তার পর তিনিই আবার রওনা হলেন এক্সহাম্পটনের দিকে, যাবার আগে সবাইকে জানিয়ে গেলেন প্রেতাত্মার জবানী শুনে তিনি ভয়ানক বিচলিত হয়েছেন, তাই তার অন্তরঙ্গ বন্ধু সত্যিই কেমন আছেন তা নিজের চোখে যাচাই করে দেখতে যাচ্ছেন তিনি। এরপরে মেজর বারনাবি সোজা তার নিজের বাড়িতে গেলেন, বাগানের ভেতর একটি ছাউনীতে মাঝধরার ছিপ আর জালের সঙ্গে একজোড়া স্কিও রাখা ছিল, সেই স্কি পায়ে গলিয়ে তিনি রওনা হলেন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়ির দিকে। মেজর বারনাবি একজন তুখোড় স্কি দৌড়বাজ, তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেন মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই।
হ্যাজেলমুরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়িতে পৌঁছে মেজর বারনাবি পেছন দিক দিয়ে এসে হাজির হলেন বসার ঘরের জানালার সামনে। সেখানে দাঁড়িয়েই দেখতে পেলেন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান বসার ঘরেই আছেন, তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জানালার কঁচের শার্সিতে টোকা দিলেন তিনি। মেজর বারনাবি নিশ্চয়ই সেই জানালা দিয়ে এর আগেও ওই বাড়িতে ঢুকেছেন। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান সেদিনও জানালা খুলে দিলেন আর মেজর বারনাবি সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়লেন তার বাড়ির ভেতরে। দুজনের মধ্যে এরপর কি কথাবার্তা হয়েছিল তা এখন বলতে পারব না কিন্তু এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে কথাবার্তার ফাঁকে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান পেছনে ফিরেছিলেন আর সেই সুযোগে হাতের কাছে পড়ে থাকা একটা ধাতুর হাতল তুলে নিয়ে মেজর বারনাবি পেছন থেকে সাজোরে আঘাত হানেন তার মাথায়। সে আঘাত কতটা প্রচণ্ড ছিল আশাকরি বুঝতে পারছেন সবাই, কারণ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান এক আঘাতেই মারা যান।
আততায়ী মেজর বারনাবির হাতে প্রচুর সময় ছিল, নিজের পা থেকে স্কি দুটো খুলে তিনি এরপর খাবার ঘরের আলমারীর ভেতর রাখা অন্যান্য জিনিসপত্রের ফাঁকে খুঁজে রাখেন। এরপর আমার ধারণা তিনি বসার ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্রের দেরাজ খুলে ভেতরের সবকিছু তছনছ করেন, লণ্ডভণ্ড করেন ঘরের বাকি সবকিছু। এগুলো করার পেছনে তার উদ্দেশ্য ছিল একটিই, তাহল, যাতে পুলিশ এবং বাইরের লোক প্রথম দর্শনে এটাই ধরে নেয় যে কোনও চোরাচোড় কোনমতে জানালা খুলে ভেতরে ঢুকেছে যাকে বাধা দিতে গিয়ে খুন হয়েছেন গৃহস্বামী ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান। এসব কাজকর্ম সারতে সারতে মেজর বারনাবির রাত অনেকটা বেজে গিয়েছিল। এরপর বাইরে বেরিয়ে ঘুরপথে চড়াই বেয়ে তিনি ফিরে যান, তাঁকে দেখে তিনি এটাই ধরে নেয় যে অনেকখানি পথ হেঁটে তাকে ফিরতে হয়েছে। স্কি সম্পর্কে কারও মনে সন্দেহ না জাগা পর্যন্ত মেজর বারনাবি ছিলেন সম্পূর্ণ নিরাপদ।
আপনি যা বলছেন তা তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার, মিস ট্রেফুসিস, মিঃ রাইক্রফট বললেন, মেজর বারনাবি আর ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান দুজনেই ছিলেন পরস্পরের অন্তরঙ্গ বন্ধু।
জানি, এমিলি সায় দিয়ে বলল, আমার নিজেরও গোড়ায় সেই ধারণা ছিল। অনেক মাথা খাঁটিয়েও সমস্যার সমাধান খুঁজে পাইনি। শেষকালে তাই ইন্সপেক্টর ন্যারাকট আর মিঃ ডিউকের শরণ নিতে হয়েছিল। কথা শেষ করে এমিলি তাকাল মিঃ ডিউকের দিকে, প্রশ্ন করল মিঃ ডিউক?
বেশ তো, মুখ টিপে হাসলেন মিঃ ডিউক, ইচ্ছে হলে বলুন, মিস ট্রেফুসিস।
চার্লস, মিঃ এন্ডারবির দিকে তাকিয়ে এমিলি বলতে লাগল, তোমার মনে পড়ে ইভানস তার জবানবন্দীতে উল্লেখ করেছিল যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান প্রায়ই বিভিন্ন ফুটবল বিষয়ক ক্রসওয়ার্ড পাজলের সমাধান তার নামে পাঠিয়ে দিতেন খবরের কাগজের অফিসে। তিনি ওই পাজলের একটি সমাধান পাঠান তার তাতে হ্যাজেলমুরের বদলে সিটাফোর্ড হাউসের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করেন।
শুক্রবার সকালবেলা খবরের কাগজের অফিস থেকে পাঠানো একটি চিঠি পড়ে মেজর বারনাবি জানতে পারেন যে ফুটবল বিষয়ক একটি ক্রসওয়ার্ড পাজল সমাধান করে পাঁচহাজার পাউন্ড পুরস্কার পেয়েছেন তার বন্ধু ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান। অবশ্য জবানবন্দীতে মেজর ওই চিঠি পাবার কথা অস্বীকার করেছেন এবং এও বলেছেন যে আবহাওয়া খারাপ হবার দরুন শুক্রবার দিন সকালবেলা কোনও চিঠিপত্রই আসে নি। কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে আমি জেনেছি এটা নির্জলা মিথ্যে, শুক্রবার দিন সকালে অন্যান্য দিনের মতো ডাক ঠিকই বিলি হয়েছিল স্থানীয় ডাকঘর থেকে। মেজর বারনাবির যেকোন কারণেই তোক খুব টাকার দরকার হয়ে পড়েছিল, ওই চিঠি পড়ে তিনি তখনই স্থির করলেন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করে পুরো টাকাটা নিজে হাতিয়ে নেবেন।