সেদিনের ঘটনা আমার মনে করিয়ে দেবার জন্য আপনি যে কষ্ট অনুভব করেছেন তা বুঝতে পারছি, মিস উইলেট, মিঃ রাইক্রফট ভায়োলেটের দিকে তাকিয়ে সহানুভূতির সুরে বললেন, পুলিশ অবশ্য সন্দেহক্রমে একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে, অবশ্যই সেই ধৃত ব্যক্তি অর্থাৎ জিম পিয়ার্সন সত্যিই আসল অপরাধী কিনা সে বিষয়েও আমাদের অনেকেরই মনে সন্দেহ আছে। আমার একটি প্রস্তাব আছে তা হল, গত শুক্রবারের মতো আসুন, আজ আবার আমরা প্রেতচর্চার এক অনুষ্ঠান বসাই।
না, প্রতিবাদের সুরে চেঁচিয়ে ওঠে ভায়োলেট, কখনও নয়।
না, আপনি দেখছি অত্যন্ত নির্মম, রণি গারফিল্ড মন্তব্য করল, মিঃ রাইক্রফট, আপনি সত্যিই মানুষ না প্রেত সে বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ জাগছে।
মিসেস উইলেট, মিঃ রাইক্রফট বললেন, আমার এই প্রস্তাব সম্পর্কে আপনার নিজের কি অভিমত?
আমার এই প্রস্তাব খুব ভাল লাগছে না,মিসেস উইলেট বললেন, গত সপ্তাহের ওই ঘটনা আমার মেয়ের মাথায় যে প্রভাব ফেলেছে তা এখনও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি নি। এরই মধ্যে আবার?
আপনি কি বলতে চাইছেন বলুন তো? চার্লস এন্ডারবি মিঃ রাইক্রফটের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, আপনি কি এটাই বলতে চান যে আজকের প্রেতচক্রের অনুষ্ঠানে যেসব প্রেতাত্মা আসবে তারা ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের আসল খুনীর নাম আমাদের দেবে?
চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি, মিঃ রাইক্রফট কৌতূহলী সুরে বললেন, হয়ছে। অপরাধীদের মুখ থেকেই আমরা আসল অপরাধীর নাম জানতে পারব। দোহাই মিস উইলেট, আপনি আর আপত্তি করবেন না।
কিন্তু বিশ্বাস করুন, ভায়োলেট মিনতি করে বলল, মেজর, আপনি তো ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন, মিঃ রাইক্রফটের এই প্রস্তাব সম্পর্কে আপনার নিজের কি অভিমত?
আমি এর মধ্যে আপত্তির কিছুই দেখছি না, মেজর বারনাবি জবাব দিলেন, মিঃ রাইক্রফট যখন বলছেন তখন একবার না হয় দেখাই যাক।
মেজর বারনাবির কথা শেষ হতেই রণি গারফিল্ড পাশের ঘর থেকে ছোট চৌপায়া টেবলটা নিয়ে এল, যার সাহায্যে এক সপ্তাহ আগেও প্রেত আবাহন করা হয়েছিল।
সেদিন মিঃ ডিউক এখানে ছিলেন,মিসেস উইলেট বললেন, কিন্তু আজ তিনি নেই।
তা নেই ঠিকই, মিঃ রাইক্রফট বললেন, তার জায়গায় মিঃ এন্ডারবি আছেন।
মাপ করবেন, চালর্স এন্ডারবি প্রতিবাদের সুরে বলল, আমি একজন সাংবাদিক, অলৌকিক ব্যাপারে আর ভূতপ্রেত নিয়ে খেলায় আমার আদৌ বিশ্বাস নেই। আমি বড়জোর প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে এখানে উপস্থিত থাকব আর যা কিছু ঘটবে সব লিখে নেব শর্টহ্যান্ডে।
যিনি এক সপ্তাহ আগে শুক্রবার দিন যেখানে বসেছিলেন আজও তিনি সেখানে বসলেন। চালর্স এন্ডারবি কৌচ ছেড়ে উঠে ঘরের সব আলো নিভিয়ে দিল, ফায়ারপ্লেসের আগুনের মৃদু আভায় উপস্থিত সবার ছায়া ঠিকরে পড়েছে ঘরের দেয়ালে যার ফলে কাউকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না।
তাহলে এবার শুরু করা যাক, মিঃ রাইক্রফট বললেন, এখন ঘড়িতে সময় বিকেল পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিট। গত শুক্রবার দিন ঠিক এই সময় ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছিলেন।
তার কথা শেষ হবার আগেই ভায়োলেটের চাপা গলার আর্তনাদ শোনা গেল, সঙ্গে সঙ্গে সদর দরজার কড়া নাড়ার শব্দ। ব্রায়ান পিয়ার্সন উঠে ঘরের আলো জ্বালাল, তারপর এগিয়ে এসে সদর দরজা খুলে দিল। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল তিনজন লোক, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, এমিলি ট্রেফুসিস, আর মিঃ ডিউক। ওঁদের তিনজনকে একসঙ্গে দেখে সবাই বেশ বিচলিত হল।
পায়ে পায়ে ঘরের মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, পকেট থেকে রিভলভার বের করে উপস্থিত এক ব্যক্তির দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। তারপর গম্ভীর গলায় বললেন, মেজর জন বারবি গত শুক্রবার দিন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করার অভিযোগে আমি আপনাকে গ্রেপ্তার করলাম। আপনাকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি যে এখন থেকে আপনি যা কিছু বলবেন তা বিচারের সময় আপনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে। আপনাকে এবার আমার সঙ্গে থানায় যেতে হবে।
.
২১.
ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের কথায় ঘরের ভেতর যেন ভূমিকম্প হল, এই অভাবিত পরিণামের জন্য উপস্থিত কেউই মানসিক দিক থেকে তৈরি ছিলেন না। সবাই তাই বিস্মিত অসহায় চোখে তার দিকে তাকিয়েই রইল। ইন্সপেক্টর ন্যারাকট আর দাঁড়ালেন না, তিনি গাড়ি নিয়েই এসেছিলেন, আসামী মেজর বারনাবির হাতে হাতকড়া পরিয়ে তখনই গাড়িতে নিয়ে তুললেন তিনি। একটু পরেই তার গাড়ি স্টার্ট নেবার শব্দ শুনতে পেলেন সবাই।
কিছুই বুঝতে পারলাম না ছাই, চার্লস এন্ডারবি মন্তব্য করল, আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, সাংবাদিক হিসাবে আমি একটা গাধাকে এখনও ছাপিয়ে উঠতে পারি নি। যাক এমিলি, ব্যাপারটা কি খুলে বলবে কি? দোহাই তোমায়, একটু ঝেড়ে কাশশা। রাতের আগেই খবরটা লিখে সিটি অফিসে টেলিগ্রাফ করতে হবে।
ব্যাপারটা এই যে, মেজর বারনাবিই তার শ্রেষ্ঠ বন্ধু ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করেছিলেন, এমিলি মন্তব্য করুল।
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট তো মেজর বারনাবিকে গ্রেপ্তার করলেন দেখলাম, চালর্স বলল, মনে হচ্ছে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট ভুল করেন নি। তবু ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ওঁর বন্ধু মেজর বারনাবির হাতে কিভাবে খুন হলেন সেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হল না। এতবড় একটা ঘটনা সবার চোখের আড়ালে ঘটল কি করে? ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান যদি সত্যিই বিকেল পাঁচটা পঁচিশ মিনিটে খুন হয়ে থাকেন।