কোথায় গেল ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সেই বুটজোড়া, কোথায় যেতে পারে? মাথার ভেতর তোলপাড় করা এই তিনটি প্রশ্ন নিয়ে এমিলি আবার এসে হাজির হল ওপরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের শোবার ঘরে। শোবার ঘরের ভেতরটা একরকম ফাঁকাই বলা চলে তবু যদি কোথাও কোনও সূত্র পাওয়া যায় সেই আশায়। মেঝের কার্পেট টেবলের ফাঁকা ড্রয়ার কিছুই ঘাঁটতে বাদ রাখল না সে। সবশেষে আস্তিন গুটিয়ে দুটো হাত গুঁজে দিল সেই ঘরের কোণে ফায়ারপ্লেসের চিমনির ভেতরে। হঠাৎই বাইরে থেকে সেখানে কি যেন তার চোখে পড়েছিল।
হাতড়াতে হাতড়াতে কি যেন একটা শক্ত জিনিস এমিলির হাতে ঠেকল, সঙ্গে সঙ্গে একটানে সেটা টেনে বের করে আনল সে।–এই তো, পুরোনো খবরের কাগজের একটা মোড়ক। মোড়টা খুলে ফেলতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একজোড়া পুরু চামড়ার। বুটজুতো।
একি! ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর সেই পুরনো বুটজোড়া? নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করল এমিলি, কিন্তু কেন? এই বুটজোড়া পুরোনো খবরের কাগজে মুড়ে এই ফায়ারপ্লেসের চিমনির ভেতরে রাখল কে? কি তার উদ্দেশ্য?
অনেকক্ষণ সেই জুতোজাড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবল এমিলি, তারপর জুতোজাড়া হাতে নিয়ে আবার চলে এল নীচে। খাবার ঘরের পাশেই এককোণায় ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের যাবতীয় খেলাধুলো, শিকার আর মাছ ধরার সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখা, সেগুলোর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল এমিলি, তারপর হঠাৎ নিজের মনে বলে উঠল, ওঃ, তাহলে এই হল ব্যাপার। কথাটা বলেই এমিলি সামনের একটা চেয়ারে গা এলিয়ে বসে পড়ল।
হা, নিজের মনে বলে উঠল এমিলি।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে কে খুন করেছে তা এবার আমি বের করে ফেলেছি, কিন্তু কেন সে এই কাজ করেছে তা জানি না। তবু আমার সময় নষ্ট করলে চলবে না।
একলাফে দৌড়েই হ্যাজেলমুর থেকে বেরিয়ে এল এমিলি, ট্যাক্সি ভাড়া করে তখনই এসে হাজির হল মিঃ ডিউকের বাড়িতে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সদর দরজার কড়া খুব জোরে জোরে নাড়ল এমিলি। সদর দরজার পাল্লা খুলে গেল মিনিট খানেক বাদে। একটি অপরিচিত পুরুষের মুখ দেখে এমিলি ধরে নিল ইনি মিঃ ডিউক ছাড়া অন্য কেউ নন।
আপনি মিঃ ডিউক? এমিলি প্রশ্ন করল।
হ্যাঁ।
আমি এমিলি ট্রেফুসিস, একবার ভেতরে আসতে পারি? আমার বিশেষ দরকার।
কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে মিঃ ডিউক একপাশে সরে দাঁড়ালেন।
আমি ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের সঙ্গে দেখা করতে চাই, এমিলি বলল, উনি ভেতরে আছেন?
ইন্সপেক্টর ন্যারাকট? মিঃ ডিউক বিস্ময় মেশানো গলায় বললেন, হ্যাঁ, উনি আছেন, কিন্তু আপনি কেন ওঁর সঙ্গে দেখা করতে চান জানতে পারি?
এই কারণে, সেই বুটজোড়া সামনে নামিয়ে রেখে এমিলি জবাব দিল।
এই বুটজোড়া সম্পর্কে ওঁর সঙ্গে আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই।
২০. ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন
২০.
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হবার ঠিক এক সপ্তাহ বাদে আরেক শুক্রবার সন্ধ্যের কিছু পরের ঘটনা। সিটাফোর্ড হাউসে মিসেস উইলেটের বসার ঘরে এসে জড়ো হয়েছেন মিঃ রাইক্রফট, মেজর বারনাবি, রণি গারফিল্ড, ব্রায়ান পিয়ার্সন আর এমিলি, এছাড়া মিসেস উইলেট আর তার মেয়ে ভায়োলেটও উপস্থিত আছেন সেখানে।
আজ এই আমাদের শেষ সাক্ষাৎ, মিসেস উইলেট মন্তব্য করলেন।
তার মানে?
আগে স্থির ছিল যে আমরা পুরো শীতকালটাই এই সিটাফোর্ডে কাটাব, মিসেস উইলেট বললেন, কিন্তু হঠাৎ কিছু পারিবারিক সমস্যা দেখা দিয়েছে যে কারণে শীতকাল শেষ হবার আগেই আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।
আপাততঃ লন্ডনে, মিসেস উইলেট জবাব দিলেন, আশা করছি সেখান থেকে আমরা বিদেশে রিভিয়েরার দিকে রওনা হতে পারব।
সত্যি বলছি, মিঃ রাইক্রফট মন্তব্য করলেন, আপনি চলে গেলে আমাদের খুব লোকসান হবে।
না, না, লোকসান হবে কেন, মিসেস উইলেট বললেন, আসুন আজ শেষবারের মতো একসঙ্গে চা পান করা যাক।
তুমি কি করবে? মেজর বারবি আড়চোখে ব্রায়ান পিয়ার্সনের দিকে তাকালেন, তুমি এখান থেকে কেটে পড়বে ঠিক করেছে?
আপাতত লন্ডনে যাচ্ছি, ব্রায়ান জবাব দিল, তবে আমার ভাই জিম যতক্ষণ খালাস না পাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝামেলার হাত থেকে পুরোপুরি রেহাই মিলছে না।
ব্রায়ানের কথা শেষ হতেই বাইরে থেকে দরজায় করাঘাতের শব্দ হল। ব্রায়ান উঠে গিয়ে সদর দরজা খুলে দিল, সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে ঢুকল চার্লস এন্ডারবি।
আসুন সাংবাদিক প্রবর, মিসেস উইলেট অভ্যর্থনার সুরে বললেন, আমাদের সঙ্গে এককাপ চা খান।
ধন্যবাদ। একটি কৌচে বসে চার্লস এন্ডারবি বলল, সবাই হাজির আছেন দেখছি, খুব ভাল সময়েই এসেছি।
হ্যাঁ, মিসেস উইলেট বললেন, আসুন, শেষবারের মতো সবাই মিলে এক হাত ব্রীজ খেলা যাক। এক মিনিট, ম্যাডাম, মিঃ রাইক্রফট বাধা দিয়ে বললেন, মিসেস উইলেট, আপনি খুব ভালভাবেই জানেন আমি নিজে অলৌকিক ও পরলোক তত্ত্বে বিশ্বাসী, এ বিষয়ে আমি প্রচুর পড়াশোনা করেছি। আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে আজ থেকে ঠিক এক সপ্তাহ আগে আপনার এই বসার ঘরে আমরা এক আপাত-ব্যাখ্যাহীন অলৌকিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম।
কথা শেষ করে মিঃ রাইক্রফট একটু তাকালেন আর মিসেস উইলেটের মেয়ে ভায়োলেটের গলা থেকে চাপা গোঙানীর মতো আওয়াজ বেরিয়ে এল।