এমিলির হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে চার্লস নিজেও তাতে চোখ বোলালো, পুরোটা পড়ে নিয়ে সে বলল, ধ্যাৎ, এটা আদৌ কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়।
অত শীগগির মন্তব্য করো না চার্লস, এমিলি বলল, এত জিনিস থাকতে ওই একজোড়া বুটই বা হারিয়ে গেল কেন সেটা ভেবে দেখছো না?
হয়তো ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ঘটনার দিন নিজেই ওই বুটজোড়া কোনও ভিখিরি বা ভবঘুরেকে দয়া পরবশ হয়ে দান করেছিলেন, চার্লস বলল, আর সেই ফাঁকে সে ব্যাটা বাড়ির ভেতরে ঢুকে তাকে খুন করেছিল।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ছিলেন এক পয়লা নম্বরের কৃপণ লোক। এমিলি বলল, জীবনে ওঁর হাত দিয়ে কখনও একটা শিলিং কেউ গলতে দেখেনি। কাজেই এহেন লোক দয়াপরবশ হয়ে কোনও ভিখিরি বা ভবঘুরেকে একজোড়া বুট দান করেছেন এই সিদ্ধান্ত আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না, চার্লস, তুমি কিছু মনে করো না।
চার্লস এমিলির মন্তব্যের কোনও প্রতিবাদ না করে চুপ করে রইল। এমিলি কথা না বাড়িয়ে তখনই এসে হাজির হল এক্সহাম্পটনে। থ্রি ক্রাউনস সরাইখানায় পৌঁছে মিসেস বেলিংয়ের সঙ্গে দেখা করল সে। মিসেস বেলিং তার লেখা চিঠিখানা এমিলির হাতে পৌঁছেছে জেনে খুশি হলেন, তাকে তখনই নিয়ে এলেন তিনি ইভানসের বাড়িতে। ইভানস কাজে বেরিয়েছিল। কিন্তু এমিলি এতটুকু নিরাশ হল না, ইভানসের স্ত্রীর মুখ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করল সে।
তোমার স্বামী মিসেস বেলিংকে বলেছে যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হবার পরে ওঁর একজোড়া বুট সে খুঁজে পাচ্ছে না, এমিলি বলল, অথচ পুলিশ ওই বাড়ি থেকে জিনিসপত্র কিছুই সরায় নি।
হ্যাঁ, ইভানসের বৌ সায় দিয়ে বলল, খবরটা আমিও জেনেছি, সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার। খুব লো দেখতে একজোড়া বুট, শীতের সময় ক্যাপ্টেন ও-দুটো পায়ে গলিয়ে বেরোতেন। তার আগে দু জোড়া গরম পশমী মোজা পায়ে গলাতেন তিনি।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হবার আগে যে নিজে ওই বুটজোড়া মেরামত করতে দেননি সে বিষয়ে তুমি নিশ্চিত? এমিলি গলা সামান্য চড়িয়ে প্রশ্ন করল।
নিশ্চয়ই, ইভানসের বৌ জবাব দিল, মেরামত করতে দিলে আর কেউ না থোক তা ইভানসের অজানা থাকতো না। আমার মনে হচ্ছে এটা খুবই তুচ্ছ ব্যাপার, ক্যাপ্টেনের খুনের সঙ্গে এই বুট জোড়া খোয়া যাবার কোনও সম্পর্ক নেই।
আমারও তাই ধারণা, এমিলি তার মনোভাব ইচ্ছে করেই ফাঁস করল না ইভানসের বৌয়ের কাছে।
জানেন মিস ট্রেফুসিস,ইভানসের বৌ মুচকি হেসে বলল, ক্যাপ্টেনের খুনের তদন্ত যে পুলিশ অফিসার করছেন তিনি আজ সকালে আবার এসেছিলেন।
তা উনি গেলেন কোন দিকে?
শুনলাম উনি মিঃ ডিউকের বাড়িতে গেছেন।
মিঃ ডিউক। নামটা শুনে ভেতরে ভেতরে খুব অস্বস্তি আর বিরক্তি বোধ করল এমিলি। এখনও পর্যন্ত এই লোকটি সম্পর্কে কোনও ধারণা গড়ে তুলতে পারেনি সে।
ধন্যবাদ, এমিলি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি এখনি একবার সিটাফোর্ডে যাব, ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের সঙ্গে আমার একবার দেখা করতে হবে। কিন্তু তার আগে একবার হ্যাজেলমুরটা ঘুরে যাব ভাবছি।
একা আর পুরোপুরি নিরস্ত্র অবস্থায় এমিলি এসে হাজির হল হ্যাজেলমুরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের শোবার ঘরে। ঢুকে দেখতে পেল মিঃ বার্কউড ঠিকই বলেছিলেন, ভেতরে বেশির ভাগ জিনিসই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কম্বলগুলো ভাজ করে থাকে থাকে সাজিয়ে রাখা, সবকটা টেবলের ড্রয়ার ফাঁকা, আলমারীর ভেতরে টাঙ্গানো হ্যাঁঙ্গারগুলোতে জামা-প্যান্ট দূরে থাক একটা গেঞ্জীও ঝুলতে দেখল না এমিলি! জুতো রাখার শেলফটাও একদম ফাঁকা।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে একতলায় বসার ঘরে নেমে এল এমিলি। এখানেই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃতদেহ পড়েছিল, খোলা জানালা দিয়ে তুষার মেশানো ঠাণ্ডা হাওয়ার ঝলক হু হু করে ঢুকছিল ঘরের ভেতরে।
সেদিনের ঘটনাটা দেখবার চেষ্টা করল এমিলি। কে খুন করেছিল ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে, এবং কেন, এই প্রশ্ন আবার উঁকি দিল তার মনের কোণে। সবারই অনুমান বিকেল পাঁচটা বেজে পঁচিশ মিনিটের সময় তিনি খুন হয়েছিলেন, সেকি সত্যি, নাকি তার প্রণয়ী জিমই খুন করেছিল তার মামাকে উত্তেজনার বশে, যে কথা বারবার সে চেপে গেছে পুলিশের কাছে? মামাকে খুন করে জিম কি সত্যিই ঘর থেকে বাইরে বেরিয়েছিল, তারপর জানালার ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল ঘরের ভেতরে মেঝের ওপর পড়ে থাকা তার মামার মৃতদেহের দিকে তারপর প্রচণ্ড ভয় পেয়ে একসময় ছুটে পালিয়েছিল সেখান থেকে। এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে এমিলিকে?
অন্যদিকে মিঃ রাইক্রফটের ধারণা ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়ির ভেতরে খুনী আগেই ঢুকে বসেছিল, মামার সঙ্গে জিমের ঝগড়া আড়াল থেকে শুনতে পেয়েছিল সে, আর জিমের অজান্তেই সে-ই খুন করেছিল। যদি এ সিদ্ধান্ত সত্যি হয় তাহলে কে সে লোক? যদি এই সিদ্ধান্ত আদৌ সত্যি হয় তাহলে তার সঙ্গে কি বুটজোড়া খোয়া যাবার কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে? বসার ঘর থেকে বেরিয়ে এমিলি একবার খাবার ঘরে উঁকি দিল একজোড়া ট্রাঙ্ক দড়ি বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে এককোণে। তখনই এমিলির চোখে পড়ল একটা কৌচের ওপরে পড়ে আছে তিনটে আনকোরা ইংরেজী উপন্যাস।
এই বইগুলো ট্রেভিলিয়ান খবরের কাগজের ক্রসওয়ার্ড ধাঁধার উত্তর নির্ভুলভাবে পাঠিয়ে পুরস্কার পেয়েছিলেন কিন্তু বেঁচে থাকতে একদিনের জন্যও বইগুলো খুলে দেখেন নি তিনি।