না বাছা, মিঃ ডেকার্স কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললেন, আমার মতে জিম খুবই সাদাসিধে ধাঁচের ছেলে। তবে একই সঙ্গে এও বলব যে ওর মধ্যে সতোর খুব অভাব। তা হলেও মানুষ খুন করার মত ক্ষমতা যে ওর নেই সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তবে জিমের বিরুদ্ধে সব প্রমাণই অত্যন্ত জোরালো যা সামাল দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। আমি তাই চাইছ মিঃ লরিমার ওর হয়ে এই মামলা লড়ুন, সবাই বলে উনি অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারেন।
মিঃ ডেকার্সের সামনেই একটুকরো কাগজে জিমের উদ্দেশ্যেই চিঠি লিখল এমিলি। তাতে উল্লেখ করল,
প্রিয়তম জিম,
……..বিশ্বাস কর, সবকিছু ঠিক সময় মিটে যাবে, কাজেই মিছিমিছি দুশ্চিন্তা করে মন খারাপ কোর না। আরেকটা অনুরোধ, ভুলেও যেন কখনও সত্য গোপন কোর না, প্রকৃত পক্ষে যা ঘটেছে তাই বলবে। মিঃ ডেকার্স এ ব্যাপারে তোমায় সবদিক থেকে সাহায্য করবেন। বুঝলে? ইডিয়ট কোথাকার।
–তোমার এমিলি।
চিঠিখানা মিঃ ডেকার্সের হাতে তুলে দিল এমিলি, বলল যাতে তিনি সেটা জেল হাজতে জিমের হাতে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন। মিঃ ডেকার্স কথা দিলেন চিঠিটা জিমের হাতে পৌঁছে দেবেন বলে।
মিঃ ডেকার্সের কাছে বিদায় নিয়ে থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ে এল এমিলি। জানতে পারল যে মিসেস গার্ডনার বাইরে গেছেন, ফিরতে দেরি হবে।
আপনি কি নার্স ডেভিসের সঙ্গে দেখা করবেন? একজন পরিচারিকা এমিলিকে প্রশ্ন করল।
নিশ্চয়ই, এমিলি জবাব দিল, তার কিছুক্ষণ বাদেই নার্স ডেভিস এসে হাজির হলেন সেখানে। সংক্ষেপে নিজের পরিচয় ওকে দিল এমিলি, সেই সঙ্গে শোনাল তার দুর্ভাগ্যের বিবরণ।
হ্যাঁ, আজকের সকালের কাগজেই আমরা খবরটা পড়েছি। নার্স ডেভিস বললেন, কি ভয়ংকর ব্যাপার দেখুন তো! সত্যি, আপনার সহ্যশক্তির তারিফ করেত হয় মিস ট্রেফুসিস।
কোথায়, এমিলি কোথায়? বলতে বলতে দশাসই বপু অথচ সুশ্রী দেখতে এক মহিলা এসে হাজির হলেন সেখানে।
এই যে মাসী, তুমি এসে গেছে, এমিলি হাসিমুখে এগিয়ে এসে মহিলাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল, আমি কতক্ষণ ধরে তোমার আশায় বসে আছি।
বস এমিলি, শ্রীমতী গার্ডনার হেসে বললেন, চা খাও, আমি এক্ষুনি একবার ওপর থেকে ঘুরে আসছি।
এমিলিকে পরিচারিকা এক কাপ চা এনে দিল। ওপরে কাজ সেরে শ্রীমতী গার্ডনার ফিরে এলেন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। এমিলিকে বললেন, এত ঘাবড়াবার কিছু নেই বাছা, পুলিশ যথাসময় আসল খুনীকে গ্রেপ্তার করবে তা জেনে রেখো। তুমি শুধু দুশ্চিন্তা করে নিজের চেহারা নষ্ট করো না। তাছাড়া ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান লোকটি ছিলেন ভয়ানক নিষ্ঠুর ধাঁচের, আমরা কি সীমাহীন দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি তা ওঁর অজানা ছিল না। সময়মত কিছু টাকা যদি উনি ধার দিতেন তাহলে তোমার রবার্ট মেশোর চিকিৎসা আর একটু ভালভাবে করতে পারতাম। কাজেই সত্যি বলতে কি, উনি খুন হওয়ায় আমি নিজে অন্ততঃ তেমন দুঃখ পাইনি।
এমিলির শরীর ও মন দুদিক থেকেই খুব ক্লান্তি বোধ করছিল, কখন যে তার দুচোখের কোল বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করছে তা সে নিজে টেরই পায় নি।
কেঁদো না বাছা, এমিলির মাসী গার্ডনার রুমাল দিয়ে তার দুচোখ আর গাল মুছিয়ে দিয়ে স্নেহভরা গলায় বললেন, বুঝতে পারছি এতো ধকল তুমি সইতে পারছে না, তবু উপায় কি বলো। জিম পিয়ার্সন যতদিন না বেকসুর খালাস পাচ্ছে ততদিন এই চাপ তোমায় সইতেই হবে।
.
১৯.
কিন্তু মিস ট্রেফুসিস অ্যাটর্নি মিঃ বার্কউড প্রশ্ন করলেন, আপনি হ্যাজেলমুরে গিয়ে নিজে ব্যক্তিগতভাবে খানাতল্লাসী চালিয়ে কি খুঁজে পাবেন বলে আশা করছেন? ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের নিজের ব্যবহার্য যা কিছু জিনিস পত্র ওখানে ছিল পুলিশ তদন্তের গোড়াতেই সরিয়ে ফেলেছে। বুঝতে পারছি আপনি যেকোন ভাবে মিঃ পিয়ার্সনের নির্দোষিতা প্রতিপন্ন করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছেন, কিন্তু এইভাবে কতদূর এগোতে পারবেন?
আমি পুলিশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি না, মিঃ বার্কউড, এমিলি বলল, তাদের তদন্তের কাজে বাধাও দিচ্ছি না। আমি নিজে একবার হ্যাজেলমুরে গিয়ে সেখানকার পরিবেশটা নিজে চোখে দেখতে চাইছি। দয়া করে হ্যাজেলমুরে ঢোকার চাবিটা আমায় দিন আপনি।
চাইছেন যখন তখন নিন, মিঃ বার্কউড তার টেবলের ড্রয়ার খুলে একটা মাঝারী আকারের চাবি বের করে তুলে দিলেন এমিলির হাতে, আপনার হাতে চাবিটা দিলে কোনও ক্ষতি হবে না বলে মনে করি।
চাবিটা নিয়ে মিঃ বার্কউডকে ধন্যবাদ দিল এমিলি, তারপর ফিরে এল বাড়িতে। সেদিন সকালবেলাতেই মিসেস বেলিংয়ের লেখা একটা চিটি এসে পৌঁছেছিল এমিলির হাতে যার বয়ান এরকম?
প্রিয় মিস ট্রেফুসিস,
সাধারণভাবে ধরে নিয়েছিলাম যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃত্যুর পরে তার বাড়ি থেকে কিছুই সরানো হয়নি এবং পুলিশও তাই অনুমান করেছিল। কিন্তু ইভানসের মুখ থেকে জানতে পারলাম সে তার প্রভুর অর্থাৎ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের একজোড়া বুট খুঁজে পাচ্ছে না। প্রসঙ্গতঃ জানাচ্ছি যে এটা সাধারণ বুট জুতো নয়, এ হল সেই ধাঁচের একজোড়া বুট, যা লোকে প্রচণ্ড তুষারপাতের সময় পায়ে গলিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে বেরোয়। বেঁচে থাকতে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ওই বুট জোড়ায় নিয়মিত তেল মাখাতেন সেকথা ইভানস নিজে আমাকে জানিয়েছে। হয়তো এটা আদৌ তেমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নয়, তবু যেহেতু আপনি নিজে ও খুনের তদন্ত নিয়ে মাথা ঘামচ্ছেন তাই এ খবর আপনাকে জানান আমার কর্তব্য বলে মনে করছি। ঈশ্বরের কাছে আপনার সাফল্য কামনা করছি।
ইতি–মিসেস বেলিং।