ওফ! সেই সন্ধ্যের কথা জীবনের শেষ দিনটুকু পর্যন্ত আমার স্মৃতিতে বয়ে বেড়াতে হবে। ভায়োলেট আক্ষেপের সুরে বলল, আমরা খেলাচ্ছলে যা করছিলাম তা যে এমন ভয়ঙ্কর আর ভয়ানক রূপ নেবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি।
সেদিন ওই অনুষ্ঠানে যে কজন পুরুষ মানুষ উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে মেজর বারনাবি ছিলেন পয়লা নম্বরের নাস্তিক। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের নাম অলৌকিকভাবে প্রকাশ পাবার পরে উনি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছিলেন তার বাড়িতে, ফিরে আসার পরে ওঁর মুখ থেকেই সেই ভয়াবহ নিষ্ঠুর সংবাদ জানতে পারি। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন শুনে মিঃ রাইক্রফটের তো প্রায় হার্টফেল করার অবস্থা, অনেক কষ্টে তিনি নিজেকে সামলে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আর রণি? মনে হচ্ছিল যেন ভূত দেখেছে। আমার মা নিজেও এ ব্যাপারটায় খুব বিচলিত হয়েছিল, এমন ব্যাপার যে ঘটতে পারে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি, এখনও পারেন না, আর সত্যি বলতে কি আমি নিজেও এখনও পারছি না। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছি, হে ঈশ্বর, একি হল? এও কি সম্ভব?
এমিলি কিছু বলতে যাবার আগেই যুবতী পরিচারিকাটি রূপোর ট্রেতে একটি ভাজ করা কাগজ এনে রাখল তার সামনে। কাগজটা তুলে নিল এমিলি, ভাঁজ খুলে দেখল কফি কেক তৈরি করার পদ্ধতি তাতে সবিস্তারে লেখা হয়েছে। কাগজখানা ভাঁজ করে হাতব্যাগের। ভেতরে রেখে দিল সে। ভায়োলেটের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এমিলি সদর দরজার দিকে সবে পা বাড়িয়েছে এমন সময় ভেতরের একটি ঘর থেকে নারী কণ্ঠে অসহ্য কাতরানির আওয়াজ ভেসে এল তার কানে।
হা ইশ্বর! নারী কণ্ঠে সেই কাতরানি স্পষ্ট শুনতে পেল এমিলি, আমি যে আর সইতে পারছি না। এই দুর্ভাগ্যের অবসান কি আর ঘটবে না? কেন তুমি তবে আমায় বাঁচিয়ে রেখেছো প্রভু?
এ যন্ত্রণার আওয়াজ যে মিসেস উইলেটের গলা থেকে ভেসে আসছে, সে বিষয়ে এমিলির কোনও সন্দেহ রইল না।
.
১৮.
দুপুর আড়াইটে নাগাদ এমিলি দেখা করল ডঃ ওয়ারেনের সঙ্গে।
দেখুন মিস ট্রেফুসিস, ডঃ ওয়ারেন বললেন, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃতদেহ যখন আমি প্রথম দেখি তখন ঠিক আটটা। আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তারও দু ঘন্টা আগে ওঁর মৃত্যু ঘটেছিল। আমার ধারণা উনি যখন খুন হন তখন ঠিক বিকেল চারটে বেজেছিল
ডঃ ওয়ারেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে এমিলি এরপর বিকেল তিনটে দশের ট্রেন ধরে এক্সেটারে এল। স্টেশনের কাছে একটি হোটেলে উঠেছিলেন মিঃ ডেকার্স, মিঃ ডেকার্স জিমের পক্ষের উকিল। তার সঙ্গে দেখা করল এমিলি।
মিঃ ডেকার্স এমিলিকে ছোটবেলা থেকে চিনতেন, তাকে পাশে বসিয়ে তিনি বললেন, এমিলি তোমার কাছে গোপন করে কোনও লাভ নেই, কিন্তু পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে এমন কিছু তথ্য হাতে পেয়েছে যেগুলো জিম পিয়ার্সনের বিপক্ষে যাবে।
সেগুলো আপনি অনায়াসে আমায় জানাতে পারেন,কথাগুলো বলতে গিয়ে এমিলির গলা একটুকু কাপল না, আমি এখন সবকিছুর জন্য তৈরি আছি।
তাহলে শোনো, মিঃ ডেকার্স বলতে লাগলেন, জিমের যে হঠাৎ প্রচুর টাকার দরকার হয়ে পড়েছিল তা প্রমাণিত হয়েছে। বিবিন্ন কোম্পানীর শেয়ার কেনার নেশা ছিল ওর, যে কারণে প্রায়ই ওকে নিজের অফিস থেকে টাকা ধার করতে হত। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হবার কিছুদিন আগে একটা নামী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার জলের দরে বিক্রী হবার খবর পায় জিম, আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার কিছু শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু সেই সময় শেয়ার কেনার মত টাকা তার হাতে ছিল না। এদিকে নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে টাকা ব্যাপারটাই বানচাল হয়ে যাবে। তাই উপায় না দেখে জিম পিয়ার্সন শেষকালে গিয়ে হাত পেতেছিল তার মামা ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর কাছে শেয়ার কেনার টাকা ধার চেয়ে। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক, ট্রেভিলিয়ান সেদিন ওকে অতগুলো টাকা ধার দিতে রাজী হন নি।
এমিলি কোনও মন্তব্য না করে চুপ করে শুনে যেতে লাগল, মিঃ ডেকার্স বলতে লাগলেন, এখন ব্যাপার হল পুলিশ গোটা ব্যাপারটাকে খুনের একটা বড় মোটিভ হিসাবে দাঁড় করাতে চাইছে। কোর্টে মামলা উঠলে সরকারী উকিল এটাই প্রমাণ করতে চাইবেন যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান টাকা ধার দেবেন না জেনে জিম তখনই ওকে খুন করে। ওঁর অ্যাটর্নি মিঃ বার্কউডের অফিসে গিয়ে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের উইলে ওঁর নামে যে টাকা গচ্ছিত ছিল সেটা যোগাড় করে নেয়। পুলিশ যাতে খুনী হিসাবে তাকে সন্দেহ করতে না পারে সেই উদ্দেশ্যেই জিম এটা করেছিল।
কিন্তু মিঃ ডেকার্স, এমিলি বাধা দিয়ে বলে উঠল, সেক্ষেত্রে এটা কি প্রমাণ করা যায় যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান উইলে তার নামে কত টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তা জিম আগে থাকতে জানতে পারে নি?
না বাছা, মিঃ ডেকার্সের মুখে করুণ হাসি ফুটে উঠল, তা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। সিলভিয়া, জিম আর ব্রায়ান ওরা তিনজনেই তাদের মামার উইলের কথা জানত আর তা নিয়ে প্রায়ই নিজেদের মধ্যে নানারকম আলোচনা আর ঠাট্টা রসিকতা করত। জিম নিজে অস্বীকার করলেও ব্যাপারটা শেষপর্যন্ত চাপা থাকবে না।
আচ্ছা মিঃ ডেকার্স, এমিলি প্রশ্ন করল, আপনি নিজে কি সত্যিই জিমকে অপরাধী বলে মনে করেন। দয়া করে আমার কাছে কিছু লুকোবেন না।