না এমিলি বলল, পথের মাঝখানে কোনও কুকুর, বেড়াল আমার চোখে পড়েনি, একটু থেকে এমিলি জানতে চাইল, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে আপনার নিশ্চয়ই বহুদিনের পরিচয় ছিল? এমিলি বেশ বুঝতে পারল যে এই মুহূর্তে গোটা সিটাফোর্ড গ্রামে এক দর্শনীয় মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছে আর এই ক্যাপ্টেন উইয়াট নিজেও যেচে তার সঙ্গে আলাপ করতে চাইছিলেন, কুকুরের প্রসঙ্গটা একটা ছুতো মাত্র।
তেমন ঘনিষ্ঠতা আমাদের মধ্যে ছিল না, ক্যাপ্টেন উইয়াট বললেন, এই কটেজটা উনি আমায় বিক্রী করেছিলেন। আমি নিজে ভীষণ খিটখিটে মেজাজের লোক, ওঁকে কখনোই বরদাস্ত করেতে পারতাম না। এসব গ্রাম্য জায়গায় একা সময় কাটানো অভ্যেস করতে হয়, কিন্তু কাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান তা জেনেও যখন তখন এসে হাজির হতেন, আমি পছন্দ করছি না বুঝেও বসে থাকতেন আর নিজের মনে এন্তার বকবক করতেন। কথা শেষ করে কটেজের দিকে তাকিয়ে জোর গলায় হাক দিলেন ক্যাপ্টেন উইয়াট, আবদুল!
সঙ্গে সঙ্গে কটেজের ভেতর থেকে একজন কালো চামড়ার লোক বেরিয়ে এল, তার গায়ের রং আর মাথার পাগড়ী দেখে এমিলি বুঝতে পারল যে লোকটি জাতে ভারতীয়।
আমি মিলিটারীতে থাকার সময় শেষ লড়াই লড়েছিলাম ইন্ডিয়ায়। কাপ্টেন উইয়াট আবদুলকে দেখিয়ে বললেন, ওই খানেই বর্মার যুদ্ধে আমার বাঁ পা বাদ যায়। আবদুল সেখানে আমার আদালী ছিল। খুব বিশ্বস্ত লোক, যুদ্ধ শেষ হবার পরেও ও আমার সঙ্গ ছাড়ে নি। এসব জায়গায় এইরকম চাকরবাকরই আমার পছন্দ। ছিঃ ছিঃ আপনাকে এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছি। দয়া করে আমার কটেজে একবার আসুন, আমার সঙ্গে এককাপ চা অন্ততঃ খান।
ধন্যবাদ, এমিলি মুচকি হাসল, আজ আপনার অনুরোধ রাখতে পারছি না, আমার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে।
এখনকার দিনের হালচালই অন্যরকম।ক্যাপ্টেন উইয়াট নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে বললেন, এই ট্রেন ধরা, এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখা, সব যেন অত্যন্ত যাচ্ছেতাই।
এমিলি কোনও মন্তব্য করল না, হাত নেড়ে সংক্ষেপে বিদায় জানিয়ে সে আবার সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করল।
একসময় হাঁটতে হাঁটতে সিটাফোর্ড হাউসের সামনে এসে পৌঁছল এমিলি। কলিংবেলের দড়ি ধরে টানার মিনিটখানেকের ভেতর একজন যুবতী পরিচারিকা দরজা খুলে দাঁড়াল তার সামনে। এমিলি কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই সেই পরিচারিকা চটপটে ভঙ্গিতে হাত নেড়ে বলে উঠল, মাফ করবেন, মিসেস উইলেট মানসিক দিক থেকে ভয়ানক ক্লান্ত, আজ ওঁর পক্ষে কোনও খবরের কাগজের রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হবে না।
এমিলি বুঝতে পারল মেয়েটি তাকে রিপোর্টার ঠাউরেছে। অন্যদিকে খবরের কাগজের রিপোর্টারেরা যে ইতিমধ্যেই এ বাড়িতে হানা দিতে শুরু করেছে সে বিষয়েও নিঃসন্দেহ হল সে।
তুমি ভুল করছ, গলা সামান্য চড়িয়ে এমিলি বলল। আমি রিপোর্টার নই, মিস ক্যারোলিন পার্সিহাউস আমায় পাঠিয়েছেন ওঁর সঙ্গে দেখা করতে।
ওঃ তাই নাকি! রণির মাসীর নাম শুনে পরিচারিকার হাবভাব পাল্টে গেল, সম্ভ্রম মেশানো গলায় সে বলল, তা কি দরকার আপনি বলুন তো।
আবার ভুল করলে! এমিলি কাষ্ট হেসে বলল, যার সঙ্গে আমি দেখা করতে এসেছি দরকারটা তাকেই বলব। তুমি ভেতরে গিয়ে ওঁকে শুধু খবরটা দাও, তাহলেই হবে।
এমিলির আচরণে পরিচারিকাটি বেশ দমে গেল, আর কথা না বাড়িয়ে সে তাকে পথ দেখিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। মিস উইলেটের ড্রইংরুমটি আকারে বেশ বড়, তাকে হলঘর অনায়াসে বলা চলে। চারপাশে বিলাসের প্রচুর উপকরণ ছড়ানো, ঘরের এককোণে ফায়ার প্লেসে কাঠের বড় বড় টুকরো জ্বলছে। একটা অস্বাভাবিক জিনিস এমিলির চোখে পড়ল তাহল ঘরের চারটে দেয়ালের কোনটিতে একটিও ফোটো ঝুলছে না।
গুড মর্নিং, এক সুন্দরী স্বাস্থ্যবতী যুবতী এগিয়ে এসে এমিলির সঙ্গে করমর্দন করল, আমি মিসেস উইলেটের মেয়ে ভায়োলেট। মার শরীরটা খুব ভাল নেই তাই এখনও বিছানা থেকে ওঠেন নি। আমি কি আপনাকে কোন ভাবে সাহায্য করতে পারি?
এমিলি এবার মিস পার্সিহাউসের লেখা চিঠিখানা তুলে দিল ভায়োলেটের হাতে। চিঠি পড়ে ভায়োলেট বলল, মিস পার্সিহাউস কফি কেক তৈরি করার পদ্ধতি জানতে চেয়েছেন, এতো খুব ভাল কথা, আপনি দয়া করে একটু বসুন, আমি রাঁধুনীর কাছ থেকে ওটা এখুনি লিখে নিয়ে আসছি। ইয়ে, আপনি কি মিস পার্সিহাউসের বাড়িতেই উঠেছেন?
না, এমিলি গম্ভীরগলায় জবাব দিল, আমি মিসেস কার্টিসের বাড়িতে উঠেছি।
তাই বলুন, ভায়োলেট মুখ টিপে হাসল, তাছাড়া মিস পার্সিহাউসের বাড়িটাও খুব ছোট, বাড়িতে যে একখানা ঘর ছিল সেটা দখল করে বসে আছে ওঁর বোনপো রণি। তবে মিস পার্সিহাউস খুব চমৎকার মহিলা, ওঁর তুলনা হয় না।
সায় দিয়ে এমিলি বলল, এ সম্পর্কে আমি আপনার সঙ্গে একমত। আচ্ছা এ বাড়ির মালিক তো ছিলেন ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান তাই না, যিনি সেদিন খুন হলেন?
ঠিক ধরেছেন,বলতে গিয়ে ভায়োলেটের গলা হঠাৎ ধরে এল, কি ভয়ানক ব্যাপার বলুন তো। কোথা থেকে কি যে ঘটে গেল এখনও বুঝতেই পারছি না।
শুনলাম আপনারা নাকি প্রেতচর্চার আসর বসিয়েছিলেন, এমিলি বলল, আর তখনই নাকি অলৌকিকভাবে জানতে পারেন যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন। ব্যাপারটা কি সত্যি?