মিঃ রাইক্রফট?
উনি হলেন সেই ধাঁচের লোক যাঁরা চান লোকে সবসময় তাদের মাথায় তুলে নাচানাচি করুক। দুনিয়ার এমন কোনও গোয়েন্দা গল্পের বই নেই যা তুমি ওঁর কাছে পাবে না, আর সেগুলো দিনরাত পড়ে ওঁর ধারণা হয়েছে গোয়েন্দাগিরির সবটুকু ওঁর জানা হয়ে গেছে। ওঁকে খুব বেশি পাত্তা দিয়ো না।
মিঃ ডিউক?
উনি খুব সাধারণ আর সাদাসিধে ধাঁচের লোক যার মধ্যে কোনরকম বৈশিষ্ট্য নেই। কিন্তু তাহলেও আমার অনেক সময় মনে হয় ওঁর মধ্যে অদ্ভুত কোনও সত্ত্বা লুকিয়ে আছে। অথচ সেটা কি তা আজ পর্যন্ত আমার জানা হয়ে ওঠেনি।
মিসেস উইলেট আর তার মেয়ে ভায়োলেট?
ভাল লোকের নাম করেছ, মিস পার্সিহাউস পাশের টেবলে রাখা একটা খাম তুলে নিলেন, তার ভেতর থেকে একটা লেবেল টেনে বের করে বললেন, এ হল এমনই একটা লেবেল যা ট্রেনে, জাহাজে বা প্লেনে চড়ে বেড়ানোর সময় যাত্রীরা তাদের মালপত্রে এঁটে রাখে, এতে তাদের নামধাম, গন্তব্যস্থল, সবকিছু লেখা থাকে। মিসেস উইলেট আর ওঁর মেয়ে এখানে এসে পৌঁছোনোর পরে গাড়িতে চেপে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়েই গিয়েছিলেন আর ঠিক তখনই ওঁর কোনও বাক্সের গায়ে সেঁটে থাকা এই লেবেলটা খসে বাতাসে উড়ে এসে পড়েছিল আমার বাড়ির সামনে। রণি ওটা কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিল। রণির মুখ থেকে শুনেছিলাম ওঁরা সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন যে ওঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকতেন। সে সময়কার গরম সইতে না পেরে শীতকালটা ইংল্যান্ডের অজ পাড়াগাঁয়ে তুষারপাতের মধ্যে কাটাবেন বলে এসেছেন। অথচ মজার ব্যাপার হল এই লেবেলের গায়ে যে হোটেলের নাম ঠিকানা লেখা আছে সেটা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অবস্থিত। তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে একটাই, তা হল–দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, ওঁরা আসলে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে। প্রশ্ন হল, অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন অথচ তা চেপে গিয়ে বারবার ওঁরা কেন বলছেন যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এসেছেন?
ব্যাপারটা সত্যিই রহস্যময় তাতে সন্দেহ নেই, এমিলি বলল, তাছাড়া শুধু গরমের হাত থেকে বাঁচতে শীতকালটা ইংল্যান্ডের এক অজ পাড়াগাঁয়ে এসে বাড়ি ভাড়া নেয়, এটাও আমার চোখে ঠিক স্বাভাবিক ঠেকছে না।
আমি তোমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত,মিস পার্সিহাউস বললেন, তুমি কি ওঁদের সঙ্গে দেখা করেছো?
না, এমিলি বলল, তবে ভাবছি আজ একবার যাব, মুশকিল হচ্ছে কেন এসেছি তা কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না।
আমি যতক্ষণ আছি ততক্ষণ এটা কোনও সমস্যাই হবে না। বলেই মিস পার্সিহাউস গল্প চড়িয়ে তার বোনপো রণিকে ডাকলেন।
কি ব্যাপার মাসী, সবুজ রং মাখা বুরুশ হাতে নিয়ই রণি বাগান থেকে দৌড়ে এল, এত হাঁকডাক করছ কেন, কি হয়েছে?
শোন বাছা, মিস পার্সিহাউস রণির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, গতকাল বিকেলে উইলেটদের বাড়িতে চা খেতে গিয়েছিলে মনে পড়ছে?
পড়ছে মাসী, রণি ঘাড় নেড়ে জবাব দিল। কিন্তু কেন বলতো?
চায়ের সঙ্গে কি খাবার ওখানে খেয়েছিলে তা মনে আছে?
আছে মাসী, রণি বলল, একটা নতুন ধরনের কেক মিসেস উইলেটের মেয়ে ভায়োলেট আমায় খাইয়েছিল, নাম বলেছিল কফি কেক। বলেছিল ও নিজের হাতে ওই কেক বাড়িতে তৈরি করেছে।
বাঃ, মিসেস পার্সিহাউস এমিলির দিকে তাকিয়ে আত্মপ্রসাদের হাসি হাসলেন, এই তো খুব ভালো অজুহাত পাওয়া গেছে, আর তোমার চিন্তার কোনও কারণ নেই। একটুকরো কাগজে তিনি মিসেস উইলেটের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখলেন যা তার দূর সম্পর্কের বোনঝি এমিলিকে পাঠাচ্ছেন, মিসেস উইলেট যেন কফি কেক তৈরী করার পদ্ধতি লিখে তার হাতে দেন। চিঠির নিচে নিজের নাম সই করলেন তিনি ক্যারোলিন পার্সিহাউস হিসাবে। চিঠিখানা খামে পুরে এমিলির হাতে দিলেন তিনি তারপর বললেন, কই, আমার বোনগো রণির সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন তো করলে না বাছা। অথচ এই ঘটনার দিন কিন্তু উইলেট ওখানে উপস্থিত ছিল। শোনো এমিলি, আমার রণি এমনিতে ছেলে হিসাবে খুবই ভাল কিন্তু মানসিক দিক থেকে ও ভয়ানক দুর্বল। দুঃখের সঙ্গে বলছি টাকার জন্য এমন কোনও কাজ নেই যা করতে ওর বাধে। এতোবড় হয়েছে অথচ বুদ্ধি শুদ্ধি এখনও হয়নি।
এমিলি কোনও মন্তব্য না করে চুপ করে রইল। মিস পার্সিহাউস বলতে লাগলেন, আরও একজন বাকি আছেন তিনি হলেন ক্যাপ্টেন উইলেট। বেচারা যুদ্ধে গিয়ে পঙ্গু হয়েছেন, এখন ও দিনরাত বাড়িতে বসে থাকেন আর আফিমের নেশা করেন। ওইরকম একটি মস্তিষ্ক আর বদমেজাজী হাড়হাভাতে লোক তুমি ইংল্যান্ডে আর দুটি পাবে না। বলো, আর কি জানতে চাও?
আর কিছু আপাততঃ আমার জানা নেই, ম্যাডাম, এমিলি বলল, যেটুকু বলেছেন তা এখনকার মতো যথেষ্ট।
.
১৭.
মিস পার্সিহাউসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিটাফোর্ড হাউসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল এমিলি, এমন সময় পেছন থেকে হেঁড়েগলায় কে যেন বলে উঠল দাঁড়ান তো। সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল এমিলি, পেছন ফিরে দাঁড়াতেই দেখতে পেল মাঝবয়সী একটি লোক কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে আছেন। লোকটির গায়ের রং গাড় তামাটে। মাথার চুল ধপধপে সাদা। লোকটির একটি পা নেই আর দৈহিক ভারসাম্য বজায় রাখতে একটি কাঠের ক্রাচে ভর দিয়ে আছেন তিনি।
এই লোকটিই যে ক্যাপ্টেন উইয়াট সে সম্পকের এমিলির মনে কোনো সন্দেহই রইল না।
মাপ করবেন, মাঝবয়সী সেই অচেনা লোকটি বললেন, এপথে কিছুক্ষণ আগে একটা মাদী বুল টেরিয়ারকে যেতে দেখেছেন?