প্রেত আবাহনের এই আমোদে যাঁরা অংশ নিয়েছেন তারা কেউই চুপ করে নেই, থেকে থেকেই নানারকম মন্তব্য করতে লাগলেন তাঁরা–না, ওদের আসতে বড্ড সময় লাগে দেখছি।
একমনে ডেকে নাও, নয়তো, কেউ সাড়া দেবে না। আঃ, চুপকরুন, গোলমাল করবেন না দয়া করে।
কয়েক সেকেন্ডের ভেতর সবাই চুপ করলেন, ড্রইংরুমের মেঝেতে সূঁচ পড়লেও তার শব্দ শোনা যাবে। হঠাৎ টেবিলটা কেঁপে উঠল।
প্রশ্ন করুন,মিঃ রাইক্রফট গারফিল্ডের উদ্দেশ্যে বলেন, রনি, তুমিই প্রশ্ন করো।
–ইয়ে, কি প্রশ্ন করব বলুন তো?
প্রশ্ন কর কোনো আত্মা এসেছে কিনা, বলল ভায়োলেট।
–ইয়ে। এখানে কোনও আত্মা এসেছেন কি? রনি গারফিল্ড জানতে চাইলে, উত্তরে–টেবিলটা আবার কেঁপে উঠল।
–তার মানে হা, ভায়োলেট বলল, একজন আত্মা ঠিকই এসেছেন।
–আপনি কে? নাম বলুন দয়া করে। কোনো উত্তর নেই।
ওকে নিজের পরিচয় দিতে বলো, মিঃ রাইক্রফট বলে উঠলেন।
–ইয়ে, আপনি নিজের পরিচয় দিন, গারফিল্ড বলল।
সঙ্গে সঙ্গে টেবিলটা কাঁপতে লাগল, কখনো ধীরে, কখনো জোরে।
–সংখ্যা অনুযায়ী ইংরেজি বর্ণমালার হিসাবে সবাই জানলেন উপস্থিত আত্মার নাম ইভা।
–আপনি কি এখানে কাউকে কিছু বলতে চান?’ গারফিল্ড আবার প্রশ্ন করল।
–টেবিল কেঁপে উঠে জানাল যে তার অনুমান ঠিক।
–আপনি কি মিসেস উইলেট বা তার মেয়েকে কিছু বলতে চান?’ গারফিল্ড প্রশ্ন করলেন।
-না।
–মিঃ রাইক্রফট?
–না।
–মিঃ ডিউক?
–না।
–তাহলে কি আমায় কিছু জানাতে চান?
-হ্যাঁ। এইটুকু জানিয়েই টেবিল বারে বারে আবার কাঁপতে লাগল যেমন কেঁপে উঠছিল নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে।
–মিঃ রাইক্রফট এবং উপস্থিত সবাই দেখতে পেলেন কাগজের বুকে একটি নাম ফুটে উঠেছে ডায়না।
–ডায়না কে রনি? মিঃ রাইক্রফট বললেন, ওই নামে তুমি কাউকে চেনো?
–কই না।
-রনির উত্তর শুনে মেজর বারনাবি হেসে আড়চোখে তাকালেন মিসেস উইলেটের দিকে, তিনি কি যেন ভাবলেন নিজের মনে।
এবার ভায়োলেট আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করল। আত্মা জানাল যে শিগগিরই, সে ইটালি যাবে, লিওনার্ড নামে এক ব্যক্তি তার সঙ্গী হবে। শুনে সবাই হেসে উঠলেন।
–অ্যাই ভায়োলেট, রনি গারফিল্ড বলে উঠল, তুমি কিন্তু জোরে টেবিলটা ঠেলছ।
–মোটেও না,ভায়োলেট প্রতিবাদ করল, আসলে তুমি নিজেই ঠেলে আমার নামে দোষ দিচ্ছ।
কয়েক মুহূর্তের নীরবতার পরে টেবিলের কাঁপুনি থেমে গেল, গারফিল্ড জানতে চাইল, ইভার আত্মা কি এখনও এখানে আছেন?
উত্তরে টেবিল জোরে কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছে অন্য কোনো আত্মা এসেছেন,রণি জানতে চাইল, এখানে কি নতুন কোনো আত্মা এসেছেন?
-হ্যাঁ।
–আপনি কি কোনো খবর এনেছেন?
–হ্যাঁ।
–আমার জন্য?
–না।
–ভায়োলেট বা তার মায়ের জন্য?
–না।
–তবে কি মেজর বারনাবির জন্য?
–হ্যাঁ।
–বর্ণমালা অনুযায়ী খবরটা জানান।
–টেবিলের কাঁপুনি অনুযায়ী গারফিল্ড ইংরাজি বর্ণমালার এক একটি অক্ষর লিখতে লাগল, কাঁপুনি শেষ হতে দেখা গেল শব্দটি ট্রেভিলিয়ান।
এ তো আমাদের সবারই চেনা নাম, মিসেস উইলেট বললেন, এখানে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের নাম লেখা হয়েছে।
-ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান? গারফিল্ড প্রশ্ন করল, ওঁর কি হয়েছে?
–আবার শুরু হল টেবিলের কাপুনি। যে দুটি শব্দ কাগজের বুকে ফুটে উঠল তিনি মারা গেছেন।
–কে মারা গেছেন? গারফিল্ড আবার প্রশ্ন করল, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান?
–হ্যাঁ।
–কিভাবে মারা গেছেন?
আমি আর পারছি না, আমায় আপনারা মাফ করুন। মিসেস উইলেট চাপা গলায় কেঁদে নিজের হাত দুটো তুলে নিলেন টেবিলের ওপর থেকে, এসব আমার আর ভালো লাগছে না। মিসেস উইলেটের কথায় সায় দিয়ে বাকি সকলেও হাত তুলে নিলেন টেবিল থেকে।
আলো জ্বালিয়ে দিন। নির্দেশ দিলেন মিঃ রাইক্রফট। মেজর বারনাবি কৌচ ছেড়ে উঠে ঘরের সবকটা আলো জ্বালিয়ে দিলেন। একটু আগে পাওয়া দুঃসংবাদ ঘরের ভেতরে যে বিষণ্ণ পরিবেশ তৈরি করেছিল, হঠাৎ আলোর ঝলকে তা কিছুক্ষণের জন্য কেটে গেল বলেই মনে হল। সবাই সবার মুখের দিকে তাকাতে লাগলেন, কেউই বলার মতো কিছু খুঁজে পেলেন না।
ধ্যাৎ, এসব রসিকতা। ঘরের ভেতরের থমথমে ভাবটা কাটাবার জন্য রনি গারফিল্ড মন্তব্য করলেন।
এই জাতীয় রসিকতা প্রেতলোকের বাসিন্দাদের মোটেই করা উচিত নয়। মন্তব্য করলেন মিসেস উইলেট।
মানুষের মৃত্যু নিয়ে এ ধরনের রসিকতা করার অর্থই বা কি? প্রশ্ন করল ভায়োলেট।
আগেই বলে রাখি আমি কিন্তু হাত দিয়ে টেবিল ঠেলিনি, বলে উঠল রনি গারফিল্ড।
আমিও ঠেলিনি, একই সুরে বলে উঠলেন মিঃ রাইক্রফট।
আমিও ঠেলিনি,তাদের সঙ্গে একই সুরে গলা মেলালেন মিঃ ডিউক। মেজর বারনাবি কোনো মন্তব্য না করে উঠে পড়লেন, ঘরের জানালার ভেজানো কাঁচের শার্সির সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি।
ঢের হয়েছে, এবার বরং একটু ককটেলের ব্যবস্থা করা যাক, পরিবেশটা হাল্কা করতে বলে উঠলেন মিসেস উইলেট। তার ইঙ্গিতে রনি ঘণ্টা বাজাতেই পরিচারিকা এসে ঢুকল ভেতরে। মিসেস উইলেট তাকে ককটেলের আয়োজন করতে বললেন।
ককটেলের ব্যবস্থা হল অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। ককটেল তৈরি করে প্রথম গ্লাসটি রনি তুলে দিল মেজর বারনাবির হাতে। গ্লাসের পানীয় পুরো শেষ করে মেজর বারনাবি মিসেস উইলেটকে বললেন, মিসেস উইলেট, আপনাকে এবং বাকি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি, শুভরাত্রি।