ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ইভানসের নামে কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিল, এমিলি মন্তব্য করল।
পর্যাপ্ত মোটিভ খাড়া করার পরে এই যুক্তি যথেষ্ট নয়, মিঃ রাইক্রফট বললেন, আমাদের জানতে হবে মাঝখানে ইভানসের হঠাৎ বেশি টাকার দরকার পড়েছিল কিনা। এছাড়া মিসেস ইভানসকেও বাদ দিলে চলবে না। এমনও হতে পারে যে তার নিজেরই হঠাৎ টাকার দরকার পড়েছিল আর স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়েই ইভানস এই কান্ডটি ঘটিয়েছে। এটা গ্রাম দেশ মিস ট্রেফুসিস, এখানে বিচিত্ররূপিনী নারী অনেক দেখতে পাবেন আপনি। কিন্তু জানবেন, মিসেস ইভানসকে কিছুতেই সন্দেহের আওতার বাইরে রাখা যাবে না।
আচ্ছা মিঃ রাইক্রফট, এমিলি প্রশ্ন করল, প্রেতচর্চার নামে আপনারা সেদিন যে টেবলটার্নিং-এর খেলায় মেতেছিলেন সে সম্পর্কে আপনার নিজের কি অভিমত?
মিস ট্রেফুসিস, মিঃ রাইক্রফট জবাব দিলেন, আমি অলৌকিকে বিশ্বাসী তা জেনে রাখবেন। সেদিনের ঘটনার পূর্ণ বিবরণ আমি পরামনোবিদ্যা গবেষণা সমিতিতে লিখে পাঠিয়েছি। সত্যিই কি অদ্ভুত ঘটনা, পাঁচজন লোক বসে প্রেতচর্চা করছে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুন হবার ঘটনা যারা কেউ জানে না, কিন্তু সে খবর অলৌকিক ভাবে তাদের কাছে পৌঁছে গেল এক প্ৰেতলোক-এর এক অজানা বাসিন্দার মাধ্যমে।
মিঃ গারফিল্ড লোকটি কেমন? এমিলি প্রশ্ন করল।
ভাল ছেলে, মিঃ রাইক্রফট বললেন, কিন্তু তার মধ্যে কোনরকম কৈফিয়ৎ আমার চোখে পড়েনি।
মিসেস উইলেট আর তার মেয়েকে আপনার কিরকম মনে হয়?
ওঁরা দুজনেই খুব মিশুকে, মিঃ রাইক্রফট বললেন, যদিও কিছুটা সেকেলের ধাঁচে। ওঁদের হাতে পয়সাকড়ি আছে বিস্তর তেমনি ওঁরা খুবই অতিথিপরায়ণ।
এতো জায়গা থাকতে শীতকালে ওঁরা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এখানে এসে হাজির। হলেন কেন?
আপনার প্রশ্নটা অসঙ্গত নয়, মিস ট্রেফুসিস, মিঃ রাইক্রফট বললেন, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার প্রচণ্ড গরম ওঁদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল তাই শীতের সময় তুষারপাতের মধ্যে কাটানোর লোভে ওঁরা মা মেয়ে এসে হাজির হয়েছেন এখানে।
হাঁটতে হাঁটতে দুজনে চালুপথ বেয়ে নেমে এল। সামনে একসারি সুদৃশ্য ছোট কটেজ, তার একটির দিকে ইশারা করে এমিলি প্রশ্ন করল, এখানে কে থাকেন?
ক্যাপ্টেন উইয়াট, মিঃ রাইক্রফট বললেন, ভদ্রলোক গত যুদ্ধে পঙ্গু হয়েছেন। হাঁটাচলা করতে পারেন না।
উনি কি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বন্ধু ছিলেন? এমিলি জানতে চাইল।
বন্ধু নয়, মিঃ রাইক্রফট বললেন, পরিচিত ছিলেন বলা যায়, দুজনের মধ্যে তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিল না, উইয়াট মোটেই মিশুকে নন তবু ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান এদিকে এলে ওঁর সঙ্গে দেখা করতেন।
আরও কিছুক্ষণ যাবার পর মিঃ রাইক্রফট এমিলিকে তার নিজের কটেজে নিয়ে এলেন। বসার ঘরের সবকটি আলমারী বইয়ে ঠাসা, তাদের মধ্যে পক্ষীতত্ত্বের চাইতে আধুনিক গোয়েন্দা গল্পের বই-ই সংখ্যায় বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিচার ও তদন্ত কাহিনীর কয়েকটি সংকলন তার চোখে পড়ল।
বাঃ বেশ সুন্দর তো আপনার কটেজটা, এমিলি মন্তব্য করল, কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে গেছে তাই এবার আমায় ফিরতে হবে।
.
১৬.
ব্রেকফাস্ট খাবার অল্প কিছুক্ষণ বাদেই রণি গারফিল্ড এসে হাজির হল মিসেস কার্টিসের বাড়িতে, এমিলির সঙ্গে একরকম যেতেই আলাপ করল সে। রণি গারফিল্ড এমিলিকে নিয়ে এল তার মাসী মিস পার্সিহাউসের কাছে যার নাম এমিলি এর আগেই শুনেছিল মিসেস কার্টিসের কাছে।
তাহলে তুমিই সেই মেয়ে যার সঙ্গে কাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান-এর বড় ভাগ্নে জিমের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে? কোনও ভূমিকা না করেই মিস পার্সিহাউস এমিলির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, তোমার কথা মিসেস কার্টিস আগেই আমায় বলে রেখেছেন। জিম যে পুরো নির্দোষ তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই জেনো। আর এটাও জেনো যে পুলিশ ওকে ঠিকই ছেড়ে দেবে। যা তুমি নিজে এই খুনের তদন্ত করবে শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি, আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করব তোমায়। বল, কি করতে পারি তোমার জন্য?
রণি গারফিল্ড কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তাকে বাধা দিয়ে মিস পার্সিহাউস বলে উঠলেন, উঁহু, গুরুজনদের কথার মাঝখানে একদম কথা বলবে না বাছা, আর কোনদিন যেন এটা তোমায় করতে না দেখি। তাছাড়া তুমি পুরুষ মানুষ, আমাদের মেয়েদের কথার মধ্যে থাকা তো তোমার কোনও দরকার নেই। বাগানের শেষে দুটো চেয়ার আর একটা বেঞ্চ পড়ে আছ, তুমি বরং ওগুলো রং করে ফ্যালো, রংয়ের টিন আর বুরুশ ওখানেই পাবে।
তাই যাচ্ছি মাসী, বলে বাধ্য ছেলের মতো রণি গারফিল্ড দ্রুতপায়ে এগোলো বাগানের দিকে। তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসল এমিলি তারপর মুখ তুলে বলল, ম্যাডাম আমি পরপর কয়েকজন স্থানীয় লোকের নাম বলে যাচ্ছি, আপনি দয়া করে আমায় বলুন এরা কে কেমন লোক। প্রথম লোকটি হলেন মেজর বারনাবি।
গোড়াতেই এই হতচ্ছাড়ার নাম করলে? মিস পার্সিহাউস জবাব দিলেন, সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের লোক, স্কুলের গন্ডী পেরোনোর পরেই রোজগারের দরকার হয়ে পড়েছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে না ঢুকে গিয়েছিল মিলিটারীতে। গত মহাযুদ্ধে বিদেশে গিয়েছিল, লড়াই করে অনেক মেডেলও পেয়েছিল, কিন্তু হলে কি হবে, অবসর নেবার পরে স্বভাবটা ভয়ানক হিংসুটে আর কুচুটে হয়ে পড়েছে। সবসময় শুধু নিজের কথাই ভাবছে, কারও ভাল দুচোখে সইতে পারে না। যেমন খিটখিটে ওঁর স্বভাব তেমনি নিচু ওঁর মন, যেখানে স্বার্থের গন্ধ নেই সেখানে ওঁকে কখনও দেখতে পাবে না।