বেশ তো, নেবেন। বলে মেজর বারনাবি হাত তুলে তাদের দুজনকেই বিদায় জানালেন।
ফিরে এসে মুখোমুখি বসল এমিলি আর এন্ডারবি, মাথার টুপিটা খুলে খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এমিলি বলল, চার্লস, মিসেস উইলেট যে প্রেতচর্চার অনুষ্ঠান করেছিলেন তার নাম টেবল টার্নিং। প্রেতচর্চা বলে উল্লেখ করা হলেও এটা আসলে এক ধরনের খেলা যেখানে মানসিক চিন্তাতরঙ্গ হাতের সূক্ষ্ম পেশীগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করে আর তারই ফলে টেবলের পায়া ওঠানামা করে, এর মধ্যে ভূতপ্রেতের কোনও ব্যাপার নেই।
হ্যাঁ, এন্ডারবি ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে বলে, ছাত্রজীবনে হোস্টেলে থাকতে এই খেলা আমিও বহুবার খেলেছি। ব্যাপারটা যে পুরোপুরি মনস্তাত্ত্বিক সেদিক থেকে আমি নিজেও তোমার সঙ্গে পুরোপুরি একমত।
এখন দেখতে হবে সেদিনের ওই অনুষ্ঠানে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, এমিলি বলল, আর সবাইকে বাদ দিলেও মেজর বারনাবি আর মিঃ রাইক্রফটের নাম কেন কে জানে বারবার আমার মনে ওঠাপড়া করছে। ওঁদের দুজনের মধ্যে একজন যদি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করে থাকেন তবে তা মোটেই অস্বাভাবিক হবে না। এছাড়া ছিলেন, মিঃ ডিউক যার সম্পর্কে এখনও আমরা কিছুই জানি না। এছাড়া মিসেস উইলেট আর তার মেয়ে ভায়োলেট দুজনেই আমার কাছে রহস্যময় চরিত্র।
কিন্তু ট্রেভিলিয়ানকে খুন করার পেছনে তাদের কি স্বার্থ থাকতে পারে? এমিলি প্রশ্ন করল।
বাইরে থেকে দেখলে কোনও স্বার্থ নেই বলেই মনে হয় বটে। এন্ডারবি উত্তর দিল, কিন্তু আমার ধারণা কোথাও নিশ্চয়ই কোনও একটা যোগসূত্র রয়েছে। সেটা কি তাই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
এমিলি কিছু মন্তব্য করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই কাছে কোথায় গম্ভীর এক ঘন্টাধ্বনী হল, সেই আওয়াজ অনেকক্ষণ পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হল।
আওয়াজটা শুনলে? বলতে বলতে মিসেস কার্টিস একতলা থেকে দ্রুতপায়ে ওপরে
ঠে এলেন।, এমিলি বলল,লরে প্রিন্সট
শুনলাম, এমিলি বলল, কিন্তু ওটা কিসের ঘণ্টা ম্যাডাম?
এখান থেকে বারো মাইল দূরে প্রিন্সটাউনে জেলের পাগলাঘন্টার আওয়াজ এটা। মিসেস কার্টিস বললেন, এর অর্থ হল জেলখানা থেকে একটু আগে কোনও কয়েদী পালিয়েছে। এইটুকু বলে মিসেস কার্টিস আর দাঁড়ালেন না, আগের মতোই দ্রুতপায়ে আবার নিচে নেমে গেলেন তিনি।
ইস, এন্ডারবি বলল, সময়মতো সবকিছু ঘটে না, এটাই দুঃখের ব্যাপার। গত শুক্রবার দিন যদি এই কয়েদীটা পালাতো তাহলেই সহজেই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনীকে ধরতে পুলিশের নিশ্চয়ই এতটুকু অসুবিধা হতো না।
হয়তো তাই, সায় দিয়ে বলল এমিলি।
তা না করে ব্যাটা তিনদিন পরে পালাল, এন্ডারবি বলল, যখন সবকিছু পুরো জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এমিলি এবারে আর কোনও মন্তব্য করল না।
১৫. সিটাফোর্ড হাউসের সামনে
১৫.
পরদিন সকালবেলায় সিটাফোর্ড হাউসের সামনে পায়চারী করছিল এমিলি, সেখানেই মিঃ রাইক্রফটের সঙ্গে তার আলাপ হল। কথাপ্রসঙ্গে মিঃ রাইক্রফট জানালেন যে পক্ষীতত্ব আর অপরাধতত্ত্ব এই দুটি বিষয়ে তিনি প্রচুর পড়াশোনা করেন।
ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বড় ভাগ্নে জিম পিয়ার্সনকে পুলিশ ওঁর খুনী সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে, মিঃ রাইক্রফট বলেন, আমার ধারণা ও পুরোপুরি নির্দোষ।
কিন্তু পিয়ার্সনের গতিবিধি বা কার্যকলাপ সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? এমিলি প্রশ্ন করল।
এককথায় বলতে গেলে কিছুই জানি না, মিঃ রাইক্রফট উত্তর দিলেন, তবে আপনার মতো সুন্দরী যুবতীর যিনি প্রণয়ী তিনি কি আর সত্যিই হত্যাকারী মানসিকতাসম্পন্ন লোক হবেন? সেদিন ঘটনা যা ঘটেছিল আমার মতে তা এরকম : জিমের হয়তো হঠাৎ কিছু বেশি টাকার দরকার পড়েছিল আর মামার কাছে এসে সে ওই টাকাটা চেয়েছিল। কিন্তু জিমের মামা অর্থাৎ ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান ওই টাকা তাকে দিতে রাজী হননি। টাকাটা না পেয়ে জিম নিশ্চয়ই খুব রেগে যায় আর তখনই হাতের কাছে পড়ে থাকা ধাতুর হাতলটা তুলে নিয়ে সে তার মামার মাথায় আঘাত করে সাজোরে। এক আঘাতেই নিশ্চয়ই ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান মারা গিয়েছিলেন। সেদিন থেকে এটাই বলা যায় যে মামাকে খুন করার কোনও পরিকল্পনা সেদিন জিমের ছিল না। আবার এমনও হতে পারে যে জিম আদৌ রাগের মাথায় সেদিন তার মামাকে খুন করেনি, টাকা না পেয়ে শুধু ঝগড়াঝাটি করে সে ওইদিন বেরিয়ে এসেছিল তাঁর বাড়ি থেকে। তারপর অন্য কোনও পেশাদার খুনী ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের বাড়ির ভেতরে কোনও গতিকে ঢুকে পড়েছিল যার হাতে তিনি খুন হন। এই দ্বিতীয় ধারণাটির ওপরেই আমি জোর দিচ্ছি। তাহলে এটাও ধরে নিতে হয় যে মামা ভাগ্নের মধ্যে টাকাকড়ি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে তা আড়ালে দাঁড়িয়ে আসল অপরাধী শুনে ফেলেছিল। এও হতে পারে যে সেই অপরাধী বহুদিন ধরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানকে খুন করার সুযোগ খুঁজছিল, ওইদিন মামা ভাগ্নের ওই ঝগড়া, সে সুযোগ এনে তুলে দিয়েছিল তার হাতে।
আপনার এই ধারণা যদি সত্যি হয়, বলে কথা শেষ না করে মাঝপথে থেমে গেল এমিলি।
-হ্যাঁ, আমার এই ধারণা সত্যি হলে এটাই প্রতিপন্ন হবে যে আসল অপরাধী ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুবই ঘনিষ্ট ছিল এবং এটাও ধরে নিতে হবে যে সে এই এক্সহ্যাম্পটনের বাসিন্দা। এই প্রসঙ্গে যার নাম আমার মনে আসছে সে হল ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের রাঁধুনি ইভানস। হয়তো ঘটনার সময় ইভানস বাড়ির ভেতরেই ছিল আর ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের সঙ্গে তার বড় ভাগ্নে জিমের ঝগড়াও সে শুনতে পেয়েছিল। এখন দেখতে হবে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান মারা গেলে ইভানসের কোনওভাবে লাভবান হবার সম্ভাবনা আছে কিনা?