ঠিক ধরেছেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, মিসেস উইলেট জবাব দিলেন, আমি এখন নিশ্চিত যে যেদিন আমাদের এই প্রেতচক্রের অনুষ্ঠানে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন বলে যে খবর আমরা পেয়েছিলাম তা নিশ্চয়ই কোনও অশরীরী প্রেতাত্মা আমাদের জানিয়েছিল।
তাই, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এবার ইচ্ছে করেই প্রসঙ্গ পাল্টালেন, আচ্ছা দক্ষিণ আফ্রিকার কোন অংশে আপনারা থাকতেন?
আমরা কেপ টাউনে থাকতাম, ইন্সপেক্টর, মিসেস উইলেট জবাব দিলেন, আমার মেয়ে আগে কখনও ইংল্যান্ডে আসেনি, তাই এখানে এসে তুষারপাত দেখে ও মুগ্ধ হয়ে গেছে।
তা অন্যান্য জায়গা থাকতে আপনি বেছে বেছে এই এলাকায় এলেন কেন? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
আমরা ডিভনশায়ার বিশেষতঃ ডার্টমুর সম্পর্কে প্রচুর বই পড়েছি, মিসেস উইলেট জবাব দিলেন, জাহাজেও এই জায়গার ওপর গাদা গাদা বই পড়েছি আর তার ফলেই আগ্রহ বেড়েছে।
কিন্তু তাই বলে এক্সহ্যাম্পটনে? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট আবার প্রশ্ন করলেন, এতো একেবারে অজপাড়াগাঁ, অনেকেই এর নাম শোনে নি।
আগেই তো আপনাকে বললাম ইন্সপেক্টর যে এই এলাকা সম্পর্কে প্রচুর বইপত্র আমরা পড়েছি। তাছাড়া এখানে আসার পথে জাহাজে একজন যুবকের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, এক্সহ্যাম্পটন সম্পর্কে তার মুখেও অনেক প্রশংসা শুনেছি।
তরুণ যুবক? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জানতে চাইলেন, তা ছেলেটির নাম কি বলুন তো?
ভুরু কুঁচকে মিসেস উইলেট জবাব দিলেন, কি যেন ওর নাম, বুলেস না স্মাইথ, তা ঠিক মনে পড়ছে না।
তারপরেই আপনার এই জায়গাটা ভাল লেগে গেল আর আপনি বাড়ির দালালদের ধরে ধরে চিঠি লিখতে লাগলেন যাতে এখানে আপনার পছন্দমত একটা বাড়ি তারা যোগাড় করে দেন, তাই না?
হ্যাঁ, ইন্সপেক্টর, মিসেস উইলেট ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে বললেন, আপনি যা বললেন ঘটনাটা ঠিক তাই ঘটেছিল।
ভদ্রমহিলা নিজেকে খুব চালাক ভাবেন, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট নিজের মনেই মন্তব্য করলেন, আড়চোখে তাকিয়ে দেখলেন ভায়োলেটের দুচোখ আগুনের মতো জ্বলছে। গোটা বাড়িখানা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তল্লাসী করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, কিন্তু এমন কিছুই তার হাতে এল না যা তদন্তের কাজে সাহায্য করতে পারে। তল্লাসী সেরে ফিরে এসে আবার মিসেস উইলেটের মুখোমুখি কৌচে বসলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আর তখনই ভায়োলেটের দুচোখে ভয়ের ছায়া স্পষ্ট দেখতে পেলেন তিনি।
এ কিরকম ব্যাপার? নিজের মনে নিজেকে প্রশ্ন করলেন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের সঙ্গে সত্যিই, যদি ওদের কোনও সম্পর্ক না থাকে তাহলে ভায়োলেট মিছিমিছি ভয় পাচ্ছে কেন? পেট থেকে কথা বের করার উদ্দেশ্যে একটা তীর ছুঁড়ে দিলেন তিনি ভায়োলেটের দিকে।
আচ্ছা ভায়োলেট, তুমি তো পিয়ার্সনকে ভালভাবেই চেনো, নাই না?
ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের মুখের কথা শেষ হবার আগেই ভায়োলেটের দুচোখ হঠাৎ কপালে উঠল। দুহাত দুপাশে ছড়িয়ে সে জ্ঞান হারিয়ে কৌচ থেকে গড়িয়ে পড়ে গেল মেঝের কার্পেটের ওপর।
বেচারী ভায়োলেট! দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিসেস উইলেট মন্তব্য করলেন, ওর দেহ মন দুদিক থেকেই বড্ড দুর্বল। প্রথমে এই প্রেতচক্র, তারপরে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের রহস্যময় মৃত্যু, এসব ঘটনা ওর স্নায়ুর ওপর প্রভাব ফেলেছে, তাই মাথা ঠিক রাখতে পারেনি, ইন্সপেক্টর।
ধন্যবাদ ম্যাডাম, কৌচ ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ইন্সপেক্টর ন্যারাকট জবাব দিলেন, আমার যেটুকু জানার ছিল তা জানা হয়ে গেছে। আজকের মতো আমি বিদায় নিচ্ছি।
কথা শেষ করে তিনি আর একটি মুহূর্ত দাঁড়ালেন না, সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন নিচে।
.
১৪.
দেখুন না মেজর বারনাবি, এমিলির গলায় অসহায় ভাব ফুটে বেরোল, জিম পিয়ার্সনের সঙ্গে আমার বিয়ের সব ঠিকঠাক, এদিকে মাঝখান থেকে পুলিশ খামোকা ওকে খুনী সন্দেহে গ্রেপ্তার করল। এখন আমি কি করি বলুন তো?
সত্যিই তো, মেজর বারনাবি সায় দিয়ে বললেন, এতো রীতিমতো আতঙ্কের ব্যাপার। বিশ্বাস করো এমিলি, তোমায় সমবেদনা জানাবার ভাষা এই মুহূর্তে আমি খুঁজে পাচ্ছি না। বলতে বাধা নেই, আমি একেবারের জন্যও জিম পিয়ার্সনকে সন্দেহজনক বলে মনে করছি না।
পুলিশ না মানলেও আপনি যে জিমকে নির্দোষ হিসাবে মনে করেন তাতেই আমি কৃতজ্ঞ বোধ করছি মেজর। এমিলি মন্তব্য করল, আচ্ছা আপনার কি ধারণা জানতে পারি। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনী কে হতে পারে?
দেখুন ম্যাডাম, মেজর বারনাবি বললেন, আমার ধারণা বাইরে থেকে কেউ বাড়িতে ঢুকে ওঁকে খুন করেছে কিন্তু পুলিশ তা মানতে রাজী নয়। তবে যে যাই বলুক না কেন এটা ঠিক যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের কোনও শত্রু ছিল না।
আচ্ছা, উনি যাদের বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন সেই মিসেস উইলেট আর তার মেয়ে মানুষ হিসাবে কেমন? এমিলি প্রশ্ন করল।
ওঁরা তো খুব ভাল লোক বলেই শুনেছি, মেজর বারনাবি জবাব দিলেন, যেমন দয়ালু তেমনি পরোপকারী।
তবু এতো জায়গা থাকতে ওঁরা হঠাৎ সিটাফোর্ডের মতো এক অজ পাড়াগেঁয়ে এসে হাজির হলেন কেন?
দেখুন ম্যাডাম, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি একবারের জন্যও মাথা ঘামাইনি, মেজর বারনাবি জবাব দিলেন।
ধন্যবাদ মেজর, এন্ডারবি দাঁড়িয়ে উঠে বলল, আজকের মতো আমরা বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু আগামীকাল সকালে আমি ক্যামেরা নিয়ে আবার এসে হাজির হব, আপনার একটা ফটো তুলব, তাছাড়া এক সাক্ষাৎকারও নেব।