ঘটনা যখন ঘটেছে তখন শুধু কান্নাকাটি করে কোনও লাভ নেই বাছা,মিসেস বেলিং রুমালে এমিলির চোখের জল মোছাতে মোছাতে সহানুভূতির সুরে বললেন, তার চেয়ে এখন নিজেকে শক্ত করো। যে ভাবেই হোক, জিমকে বাঁচাতেই হবে।
তাহলে তো তোমায় সিটাফোর্ড-এ যেতে হবে, মিসেস বেলিং বললেন, ওখানে ভদ্রভাবে থাকার মতো জায়গা একটাই আছে তাহলে সিটাফোর্ড হাউস। ওই বাড়ির পাঁচ নম্বর মহলে থাকেন মিসেস কার্টিস, গরমের সময় উনি ঘরভাড়া দেন। কিন্তু অতদূর যাবে কিভাবে? গাড়িভাড়া করেছো?
না, এমিলি বলল, আমি মিঃ এন্ডারবির গাড়িতে চেপে যাব।
আর মিঃ এন্ডারবি নিজে কোথায় থাকবেন?
কেন, এমিলি জবাব দিল, মিঃ এন্ডারবি সম্পর্কে আমার খুড়তুতো ভাই, আমরা দুজনে মিসেস কার্টিসের মহলের একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকব।
তাহলে তো খুবই ভাল হয়, মিসেস বেলিং বললেন, তাহলে আর দেরী না করে চোখেমুখে জল দিয়ে সেজেগুজে তৈরি হয় নাও, আর হ্যাঁ, শোন বাছা, আমি নিজেও এখানে চোখ কান সবসময় খোলা রাখব, তেমন কোনও খবর পেলেই তোমায় জানাব, পুলিশ কিছু টের পাবার আগেই।
সত্যি ম্যাডাম, এতক্ষণ বাদে এমিলি খুশিভরা গলায় মন্তব্য করল, আপনার দয়ার তুলনা হয় না।
চা খেয়ে থাকা খাওয়ার বিল মিটিয়ে এমিলি বেরিয়ে এল থ্রি ক্রাউনস সরাই থেকে। মিঃ এন্ডারবি তার পুরনো ফোর্ড গাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছিল, এমিলিকে দেখতে পেয়েই সে পেছনের দরজা খুলে দিল।
একটা কথা, এমিলি বলল, আপনাকে কিন্তু আমি আমার খুড়তুতো ভাই বলে পরিচয় দিয়েছি তা ভুলে যাবেন না। এটা গ্রামাঞ্চল কিনা, ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশা অনেকেই এখানে ভাল চোখে দেখে না।
বাঃ চমৎকার! এন্ডারবি মন্তব্য করল, তাহলে আমি তোমাকে এমিলি বলে ডাকব, কেমন?
একশোবার, এমিলি ঘাড় নেড়ে মুচকি হাসল। আর তোমায় ডাকব চার্লস বলে।
এমিলির কথা শেষ হতেই এন্ডারবি গাড়িতে স্টার্ট দিল।
.
১৩.
সিটাফোর্ড পৌঁছে সিটাফোর্ড হাউস খুঁজে বের করতে এমিলির আর চার্লসের অসুবিধে হল না, যথাসময়ে মিসেস কার্টিসের কাছে তাদের দুজনের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়ে গেল। মিসেস কার্টিস এমিলি আর চার্লসের আতিথ্যের ত্রুটি করল না, গোড়াতেই নিজের হাতে চা তৈরি করে খাওয়ালেন তাদের, আর সেই ফাঁকে তাঁর মুখ থেকে সিটাফোর্ড হাউসের বাসিন্দাদের নাম, ধাম, পেশা সবকিছুই কৌশলে জেনে নিল এমিলি। চা পর্ব শেষ হলে চার্লস এমিলিকে সঙ্গে নিয়ে মেজর বারনাবির কটেজের দিকে রওনা দিল। ঘটনাচক্রে তখনই ইন্সপেক্টর ন্যারাকট এসে হাজির হলেন সিটাফোর্ড হাউসে, সোজা মিসেস উইলেটের সঙ্গে দেখা করে নিজের পরিচয় দিলেন তিনি, কথা প্রসঙ্গে জানালেন যে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের খুনের ব্যাপারে তিনি তাদের কিছু প্রশ্ন করবেন। মিসেস উইলেটের মেয়ে ভায়োলেটও সেইসময় বসেছিলেন তার মায়ের গা ঘেঁষে।
আপনি কি জানতে চান বলুন ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, মিসেস উইলেট বললেন, আমি যতদূর সম্ভব সঠিক উত্তর দিয়ে সাহায্য করব আপনাকে। হয়তো এই বাড়িতে এমন কোনও সূত্র থাকতে পারে যা এই খুনের তদন্তে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। কিন্তু তেমন কিছু আদৌ আছে কিনা সে বিষয়ে আমার খুব সন্দেহ আছে। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান তাঁর ব্যক্তিগত যা কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র ছিল সব এ বাড়ি থেকে অনেক আগেই সরিয়ে ফেলেছিলেন, এমনকি ওঁর মাছ ধরার ছিপখানা পর্যন্ত। হয়তো উনি ধরেই নিয়েছিলেন যে ভাড়াটে হিসাবে ওঁর এইসব সৌখীন জিনিসের কোনরকম যত্ন আমি করব না তাই।
তার মানে ওঁর সঙ্গে আপনার আগে থাকতে পরিচয় হয়নি?ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
না, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট, আমি এই বাড়ি ভাড়া নেবার পরে কতবার চিঠি লিখে ওঁকে আসবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, এমন কি ডিনারের নেমন্তন্ন পর্যন্ত করেছি, কিন্তু উনি একবারও আসেন নি। আসলে উনি যে ভীষণ লাজুক আর মুখ চোরা লোক ছিলেন তাতে আমার এতটুকু সন্দেহ নেই। অথচ দুঃখের ব্যাপার হল অনেকেই এই স্বভাবের জন্য ওঁকে নারীবিদ্বেষী বলতো।
দেখুন ম্যাডাম, ইন্সপেক্টর ন্যারাকট বললেন, আমি যতদূর জেনেছি ক্যাপ্টেন ট্টেভিলিয়ানের মৃতদেহ সবার আগে আবিষ্কার করেন ওঁর পুরোনো বন্ধু মেজর বারনাবি আর এও জেনেছি যে তার আগে এখানে প্রেতচর্চার অনুষ্ঠানে মিলিত হয়েছিলেন।
ইন্সপেক্টর ন্যারাকটের কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে ভায়োলেটের গলার ভেতর থেকে ক্ষীণ আর্তনাদের মতো একটা শব্দ বেরিয়ে এল।
বেচারী ভায়োলেট! মেয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মিসেস উইলেট মন্তব্য করলেন এই ঘটনা ঘটবার ফলে ও মানসিক দিক থেকে ভয়ানক ভেঙ্গে পড়েছে। অবশ্য শুধু ও একা নয়, আমাদের সবারই একই অবস্থা। আমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন নই, কিন্তু তাহলেও ব্যাপারটা অলৌকিকভাবে আমার চোখের সামনে ঘটেছিল।
সত্যি বলছেন? ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন।
নিশ্চয়ই। মিসেস উইলেট জবাব দিলেন, যদিও গোড়ায় আমরা ব্যপারটাকে নিছক মজা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। রোনাল্ড গারফিল্ড নামে এক তরুণ সেদিন ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। আমরা গোড়ায় তাকেও সন্দেহ করেছিলাম, ভেবেছিলাম এটি ওঁরই কাজ।
তাহলে গোড়ায় যা নিছক মজা বলে মনে হয়েছিল তাই এখন আপনার কাছে এক অলৌকিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না?ইন্সপেক্টর ন্যারাকট প্রশ্ন করলেন, সাধারণ ভাবে যার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না?