বোকার মতো কথা বোলো না। এমিলি চাপা ধমকের সুরে বলল, আমি যখন তোমার সঙ্গে হাত মিলিয়েছি তখন এসব আমার বেলাতেও ঘটবে জেনে রেখো।
আচ্ছা, এন্ডারবি বলল, তোমার জেনিফার মাসীকে কি সন্দেহের আওতায় রাখা যায়?
জনিফার মাসী লোক হিসাবে খুবই ভাল কিন্তু তাহলেও তদন্তের স্বার্থে ওঁকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন এক্সেটারে যা এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। এমনও হতে পারে যে জেনিফার মাসী ওঁর ভাইয়ের সঙ্গেও কোনও কারণে দেখা করতে এসেছিলেন। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান হয়তো সেইসময় ওঁর ভগ্নীপতি অর্থাৎ জেনিফার মাসীর স্বামী ক্যাপ্টেন গার্ডনার সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেছিলেন যা শুনেই মাসী রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন, হাতের কাছে ওই মোটা নলটা দেখতে পেয়ে তাই দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিলেন তার ভাইয়ের মাথায়।
বাঃ, চমৎকার অনুমান। এন্ডারবি তারিফ করার সুরে বলে উঠল, আর কাকে সন্দেহ করছো?
আমি কাউকেই বাদ দিচ্ছি না, এমিলি বলল, এমন কি ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের রাঁধুনি কাম চাকর ইভানসকেও নয়। ইভানসের কাজকর্মে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান অবশ্যই চিরদিনই খুশি ছিলেন, উইলে তাকে বিশ্বস্ত বলে উল্লেখও করেছেন এবং তাকেও একশো পাউন্ড দেবার কথা উইলে লিখেছেন তিনি। থ্রি ক্রাউনস সরাইখানার মালিক মিসেস বিলিংয়ের বোনটিকে ইভানস হালে বিয়ে করেছে। মিসেস বিলিংয়ের পেট খুব আলগা, আমি দেখব ওঁর কাছ থেকে কিছু খবর বের করা যায় কিনা। যে পুলিশ কর্মচারীটি প্রথম ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ানের মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল সেই কনস্টেবল গ্রেভসের ঘোট শ্যালিকাও ওই সরাইয়ে চাকরী করে, আমি ওকেও হাত করব দেখে নিয়ে। পুলিশ এই খুনের তদন্ত করতে গিয়ে কখন কোন পথে এগোচ্ছে সে সবই আমি ওর কাছ থেকে জানতে পারব। তবে ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান যাঁকে বাড়িভাড়া দিয়েছিলেন সেই মিসেস উইলেট আর তার মেয়ে ভায়োলেটকে আমার খুব অদ্ভুত বলে মনে হচ্ছে।
কেন? এন্ডারবি প্রশ্ন করল।
শীতকালের মাঝামাঝি নাগাদ বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন, এমিলি বলল, এটা প্রথম কারণ। দ্বিতীয় কারণ হল ওঁদের প্রেতচর্চার ব্যাপারটা, আচ্ছা তোমার নিজের কি এই ব্যাপারটাকে খুব জটিল ও রহস্যময় বলে মনে হচ্ছে না?
সে তো হচ্ছেই, এন্ডারবি সায় দিয়ে বলে, তবে এ সম্পর্কে কাগজে কিছু লেখার আগে নিয়মিত প্রেতচর্চা করেন এমন কিছু বিশিষ্ট লোকের সঙ্গে আলোচনা করব, তাদের মতামত নেব।
আরে, তেমন লোক তো আমাদের হাতের কাছেই আছেন।
কে বল তো?
কেন? এন্ডারবি বলল, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, যিনি শার্লক হোমসের মতো এক গল্পের গোয়েন্দা চরিত্র তৈরি করে প্রচুর নাম যশ অর্জন করেছেন।
স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের সঙ্গে প্রেত-চর্চার কি সম্পর্ক? এমিলি প্রশ্ন করল।
উনি নিজেই এক রহস্যময় মানুষ। এন্ডারবি বলল, গোয়েন্দা গল্প আর ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখে জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন, এখন বুড়োবয়সে ভূতপ্রেত আছে কি নেই তাই নিয়ে পড়াশোনা করছেন। বই পত্র পড়ছেন, পোভড়া বাড়িতে অর দুর্গে রাত কাটাচ্ছেন, যাকে বলে প্রেততাত্ত্বিক, গবেষণা। তবে এ সম্পর্কে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই।
ভূতপ্রেতে আমার এতটুকু বিশ্বাস নেই, এমিলি বলল, আর অলৌকিক ব্যাপার বলে কিছু আছে একটা আমি বিশ্বাস করি না। ক্যাপ্টেন ট্রেভিলিয়ান খুন হয়েছেন এই খবর সে এসে জানিয়ে গেল কিন্তু কে তার খুনী সে কথা চেপে গেল কেন? আসলে এসবের কোনও ভিত্তি নেই।
আমি একটা গাড়ি ভাড়া করেছি, এন্ডারবি বলল, আধঘণ্টার ভেতর আমরা দুজন তাতে চেপে পৌঁছে যাব সিটাফোর্ডে।
নাঃ, এবার দেখছি আমাকেই বলতে হচ্ছে চার্লস, তোমার জবাব নেই, এন্ডারবির ভাব আর ভঙ্গি অনুকরণ করে মন্তব্য করল এমিলি, যা দেখে এন্ডারবি না হেসে পারল না।
এবার তাহলে চলো, সরাইখানায় ফিরে যাই, এমিলি বলল, জামাকাপড় গুছিয়ে মিসেস বেলিংয়ের পেট থেকে দেখি কোনও খবর বের করতে পারি কিনা। পুলিশ জিমকে ধরে নিয়ে গেছে বলে আমার মন যে ভেঙ্গে গেছে তা বোঝাতে আমায় এবার নাকে কান্না কাঁদতে হবে।
.
১২.
থ্রি ক্রাউনস সরাইয়ে ফিরেই এমিলি দেখল বেলিং হলঘরের মাঝখানে এসে, দাঁড়িয়েছেন।
মিসেস বেলিং, এমিলি বলল, আজ বিকেলেই আমি রওনা হচ্ছি
আজ বিকেলেই? মিসেস বেলিং প্রশ্ন করলেন, তাহলে চারটে দশের ট্রেন ধরে এক্সেটারে যাচ্ছেন?
না, এমিলি জবাব দিল, আমি সিটাফোর্ড যাব। ভালকথা ওখানে আপনার চেনাশোনা এমন কেউ আছেন কি যাঁর কাছে ওঠা যায়?
সত্যি? মিসেস বেলিং প্রশ্ন করলেন, ইয়ে যদি কাউকে না বলেন তাহলে একটা খবর আপনাকে দেব মিস এমিলি।
আপনি নির্ভয়ে আমার কাছে মুখ খুলতে পারেন, এমিলি বলল, আমি ভুলেও কাউকে কিছু জানাব না।
মিঃ পিয়ার্সনকে চেনেন তো? মিসেস বেলিং গলা নামিয়ে বলে উঠলেন, পুলিশ ওঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
সে কি? দুঃসংবাদ শুনে এমিলির বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল, কবে গ্রেপ্তার হলেন?
এই তো আজই, মিসেস বেলিং জবাব দিলেন, মাত্র আধঘন্টা আগে।
আমার পক্ষে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, মিসেস বেলিং,বলতে গিয়ে এমিলির গলা ধরে এল, দুচোখের কোন বেয়ে জল গড়াতে লাগল, আপনি হয়তো জানেন না যে আমরা দুজনেই পরস্পরকে ভালবাসি, শীগগিরই আমরা বিয়ে করব বলেও স্থির করেছিলাম কিন্তু তার আগেই এমন একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটল! হা ঈশ্বর! বিশ্বাস করুন মিসেস বেলিং এই জঘন্য অপরাধ ও করেনি, পুলিশ মিছিমিছি ওকে গ্রেপ্তার করেছে। এইটুকু বলে মিসেস বেলিংয়ের বুকে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।